গুলি ছিটকে যাওয়ার পিছনে ‘গাফিলতি’

প্রশ্ন উঠেছে, কেন গাফিলতি? বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, গুলি ছিটকে কারও মৃত্যুও তো ঘটতে পারত?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০৪:৫২
Share:

হাত থেকে ইনসাস পড়ে সেখান থেকে গুলি ছিটকে যাওয়া! চূড়ান্ত গাফিলতি ছাড়া এমনটা ঘটা সম্ভব বলে মানতে চাইছেন না বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে দমদম মেট্রো স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাত বদলের সময়ে গুলি ছিটকে যায়। আরপিএফ-এর এক কনস্টেবলের কাছ থেকে অন্য কনস্টেবল সেই রাইফেল নেওয়ার সময়ে ঘটনাটি ঘটেছে। আহত হয়েছেন এক মহিলা ও তাঁর ৯ বছরের ছেলে।

প্রশ্ন উঠেছে, কেন গাফিলতি? বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, গুলি ছিটকে কারও মৃত্যুও তো ঘটতে পারত?

Advertisement

অনেকগুলি প্রশ্ন উঠে এসেছে ঘটনার পরে। এক, সেনাবাহিনী, আধা-সেনা, পুলিশ, যারাই স্বয়ক্রিয় রাইফেল ব্যবহার করে, তারা সাধারণত রাইফেলে গুলি ভর্তি (লোডেড) ম্যাগাজিন লাগিয়ে রাখেন না। লোডেড ম্যাগাজিন থাকে পকেটে। পরিস্থিতি তৈরি হলে তা রাইফেলে লাগিয়ে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কেন লোডেড ম্যাগাজিন লাগান ছিল?

দুই, ভারতে তৈরি ইনসাস রাইফেলে সেফটি ক্যাচ থাকে। তা ‘লক’ করে রাখা থাকে। সেটি ‘আনলক’ না করা পর্যন্ত কিছুতেই সেখান থেকে গুলি বেরনো সম্ভব নয়। প্রশ্ন, সেফটি ক্যাচ কি ‘লক’ করা ছিল না? না থাকলে কেন? সেফটি ক্যাচ ‘আনলক’ করার পরে ‘কক’ করতে হয়। তার জন্য ব্যারেলের গায়ে একটি হ্যান্ডল থাকে। সেটিকে টেনে ‘কক’ করতে হয়। ‘কক’ না করলেও গুলি করা সম্ভব নয়। তবে কি, শুক্রবার রাইফেল আগেই কক করা ছিল?

আরপিএফ সূত্রের খবর, প্রতিবার রাইফেল হাত বদলের সময়ে গুলি গুনে নিতে হয়। এ দিন রাইফেলে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিনই লাগানো ছিল। তা খুলতে সেফটি ক্যাচ আনলক করতে হয়। তারপরে ম্যাগাজিন খুলে নেওয়া হয়। ম্যাগাজিনই যদি খুলে নেওয়া হবে তা হলে গুলি কী করে ছিটকে বেরোবে? আরপিএফ-এর যুক্তি, ম্যাগাজিন খালি করার সময়ে কোনও ভাবে একটি গুলি ব্যারেলে ঢুকে যায়। সেটাই অসাবধানতায় ছিটকে যায়। তা হলেও প্রশ্ন, কক করা ছাড়া গুলি ছিটকে কী করে গেল?

অভিযোগ, বন্দুক হাত বদলের সময়ে তা বালির বস্তার ঘেরাটোপে করা উচিত। দমদম মেট্রো স্টেশনে বালির বস্তা দিয়ে বাঙ্কারও করা আছে। কিন্তু, এ দিন তার ভিতরে কেন বন্দুক হাত বদল হল না? তাহলে তো গুলি ছিটকে বাইরে আসত না।

• ভারতে তৈরি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল (ইন্ডিয়ান স্মল আর্মস সিস্টেম, সংক্ষেপে ইনসাস)

• ম্যাগাজিনে থাকার কথা ২০টি গুলি, রাখা হয় ১৮টি। গুলির ব্যাসার্ধ ৫.৫৬ মিলিমিটার। গতি সেকেন্ডে ৯০০ মিটার

• সেফটি ক্যাচ বা লক থাকে। সেটা আনলক করতে হয়। তারপরে কক করতে হয়। তবে, গুলি করা সম্ভব।

• তাহলে কি রাইফেল লক করা ছিল না? কক করাও ছিল?

• দু’ভাবে গুলি করা যায়। এক, একবার করে কক করে একটি করে গুলি। দুই, একবার কক করে পর পর ১৮টি গুলি।

• তাহলে কি ট্রিগারে হাত পড়ে গিয়েছিল?

• বন্দুক হাত বদলের সময়ে ম্যাগাজিন খুলে করা উচিত। সে ক্ষেত্রে গুলি ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনাই থাকে না।

• তবে কি ম্যাগাজিন না খুলেই হাত বদল হচ্ছিল?

• হাত বদল বালির বস্তার ঘেরাটোপে করা উচিত। যদি অসাবধানতায় গুলি ছিটকেও যায়, তাহলেও যাতে ক্ষতি না হয়।

• স্টেশনে বালির বস্তার ঘেরাটোপ থাকলেও কেন সেখানে হাত বদল করা হল না?

বিশেষজ্ঞদের তোলা এমন বহু প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি। জানা গিয়েছে, ব্যালেস্টিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তদন্ত করাবে আরপিএফ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন