প্রতীকী ছবি।
কেউ দশ, কেউ পনেরো, কেউ বা তার চেয়েও বেশি বছর ধরে ‘দক্ষতার’ সঙ্গে রাস্তায় সরকারি বাস চালাচ্ছেন।
চেনা রাস্তায় রোজই চোখে পড়ে নানা সাঙ্কেতিক চিহ্ন এবং আলো। সে সব কতটা মেনেও চলেন তাঁরা? বাসচালকদের দাবি, এ সবই তাঁদের চেনা-জানা। কিন্তু চেনা জিনিসও যে কতটা অজানা হতে পারে, তা কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক ট্রেনিং স্কুলে প্রশিক্ষণ নিতে এসে হাড়ে হাড়ে টের পেলেন দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসচালকেরা। রাস্তায় লাল আলো দপদপকরলে কী করণীয়, গোল কিংবা ত্রিভুজাকার চিহ্ন কী ধরনের বার্তা বহন করে, ট্র্যাফিকের অ-আ-ক-খ সংক্রান্ত এমনই হরেক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কার্যত হিমশিম খেলেন জনা তিরিশ বাসচালক। সেখানে উপস্থিত থেকে গোটা পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করলেন খোদ পরিবহণ নিগমের কর্তারা। শুক্রবার থেকে টালাপার্ক সংলগ্ন ট্র্যাফিক
ট্রেনিং স্কুলে সরকারি বাসের চালকদের প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ৪৫ দিন। সেখানেই ধরা পড়ল এই ছবি।
সার্জেন্ট রাজেশ ভাণ্ডারী তখন ক্লাস নিচ্ছেন ট্র্যাফিক সিগন্যালে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলো এবং সঙ্কেত নিয়ে। দেখা গেল, লাল এবং সবুজ আলো নিয়ে বাসচালকেরা মোটামুটি সচেতন। কিন্তু লাল বা সবুজের সঙ্গে কমলা-হলুদ বা ‘অ্যাম্বার’ আলো কী বোঝায়, জানতে চাইতেই মুখ চাওয়াচায়ি শুরু করেন ‘পোড় খাওয়া’ বাসচালকেরা। উঠে এল নানা রকম উত্তর। কিন্তু কেউই নির্দিষ্ট কারণ বলতে পারলেন না। ওই আলোয় কখন গাড়ি ছাড়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে, আবার কখন থামার জন্য প্রস্তুত হতে হবে, সবই বোঝালেন সার্জেন্ট রাজেশ। বোঝানো হল, ওই আলোর তাৎপর্য বুঝতে না পারার জন্যও বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয় চালকদের। কখনও ট্র্যাফিক সিগন্যালে লাল আলো দপ দপ করতে দেখা গেলে কী করণীয়, ফের জানতে চাইলেন রাজেশ। দু’-এক জন ছাড়া এ বারও ঠিকঠাক জবাব দিতে পারলেন না কেউ।
এর পরে এল বিভিন্ন সাঙ্কেতিক চিহ্ন সংক্রান্ত পাঠ। একটি বৃত্তের মধ্যে হর্নের ছবি দেওয়া চিহ্নটি দেখিয়ে সার্জেন্ট জানতে চাইলেন সেটির মানে। সকলেই বললেন, ওই চিহ্ন দেখলে হর্ন বাজানো উচিত নয়। ভুল ধরালেন সার্জেন্ট। জানা গেল, রাস্তায় বাঁকের মুখে ওই চিহ্ন থাকা মানে হর্ন বাজানো বাধ্যতামূলক। সম্প্রতি রাস্তায় গতি সংক্রান্ত বিধি-নিষেধের বোর্ড লাগিয়েছে সরকার। কিন্তু কোন জায়গার পরে গতি বাড়ানো যাবে, এক জন ছাড়া সেই সঙ্কেত চিনতে পারলেন না প্রায় কোনও চালকই।
সম্প্রতি বেসরকারি বাসের পাশাপাশি দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে বেশ কিছু সরকারি বাসও। চালকদের অসতর্কতাতেই অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে এ দিন কর্মশালার উদ্বোধন করতে গিয়ে মন্তব্য করেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। দুর্ঘটনা রোধে কী কী দিক থেকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন, তা জানাতেই সরকারি উদ্যোগে শুরু হয়েছে এই কর্মশালা। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কর্তারা জানান, কর্মশালায় প্রতিদিন ৩০ জন করে চালক আসবেন। ৪৫ দিনে প্রশিক্ষণ নেবেন মোট ১২০০ চালক। নিগমের বাস ছাড়াও ফ্র্যাঞ্চাইজি বাসের চালকেরাও নেবেন প্রশিক্ষণ। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের আইএনটিটিইউসি ইউনিয়নের সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “শেখার কোনও বয়স নেই। সরকারের এই উদ্যোগ তাই খুবই প্রশংশনীয়।”
সব দেখেশুনে বিরতির সময়ে প্রৌঢ় এক চালক বলেন, “চোখ আর কানের উপরে ভরসা করে গাড়ি চালাই। দুর্ঘটনা এখনও ঘটেনি ঠিকই। কিন্তু এখানে না এলে এত কিছু জানাই হত না!”