—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
একটি খুনের ঘটনায় তিন জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। সেই তিন জনকেই বেকসুর খালাস করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। ১১ বছর পরে তাঁদের জেলমুক্তির নির্দেশ দিল আদালত।
২০১৪ সালের ২০ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশনের পার্কিং এলাকায় একটি লাল রঙের কম্বলে মোড়া বেডিং, একটি লাল ট্রলি ব্যাগ এবং একটি স্কুল ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। পরে ব্যাগ খুলে পুলিশ দেখে, কম্বলের ভিতরে রয়েছে এক মহিলার খণ্ডিত ধড়। তাঁর বয়স ছিল আঠাশ-ত্রিশ বছর। মহিলার মাথা, দু’হাত ও দু’পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ট্রলি ব্যাগের ভিতরে পলিথিনে মুড়ে রাখা ছিল। স্কুল ব্যাগে পাওয়া যায় একটি জিনস, একটি টি-শার্ট এবং দড়ি। এ ছাড়া পাওয়া যায় কিছু সোনা, রুপোর গয়না এবং একটি ক্যাশ মেমো, যার নামের জায়গায় লেখা ছিল ‘জয়ন্তী দেব’।
পুলিশ তদন্ত করে তিন জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হন মৃতার স্বামী সুরজিৎ দেব, সুরজিতের প্রেমিকা লিপিকা পোদ্দার। খুনের পরে দেহ কাটার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন সঞ্জয় বিশ্বাস। তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পারে, সুরজিৎ এবং লিপিকা একসঙ্গে থাকতেন। তাঁরাই জয়ন্তীকে (সুরজিতের স্ত্রী) খুন করার ষড়যন্ত্র করেন। খুনের পরে, মৃতদেহ টুকরো করার জন্য সঞ্জয়কে টাকা দিয়ে নিয়োগ করা হয় বলে অভিযোগ। টুকরো করা দেহাংশ ব্যাগে ভরে ধৃতেরা শিয়ালদহ স্টেশনে রেখে পালিয়ে যান বলেও অভিযোগ।
ওই ঘটনায় ২৫ জন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা যায়, মহিলাকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় তিন জন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয় নিম্ন আদালত। বৃহস্পতিবার সেই রায় খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এক, ওই খুনের ঘটনায় যথেষ্ট প্রমাণ নেই। দুই, ঘটনাস্থলে অভিযুক্তেরা যে ছিলেন, তা কেউ দেখেননি। তাঁদের খুন করতেও কেউ দেখেনি। তিন, দেহ বহন করা হয়েছিল যে ট্যাক্সিতে, তার চালককে জেরা করেনি পুলিশ। চার, সঞ্জয়ের স্বীকারোক্তি আইনত গ্রহণযোগ্য নয়। পাঁচ, তিন অভিযুক্তের কেউ ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে প্রমাণ নেই।