Kakurgachi’s Abhijit Sarkar Murder Case

‘আপনার লেকচার শুনব না’! কল্যাণের উপর বিরক্ত বিচারপতি, ছাড়লেন কাঁকুড়গাছির অভিজিৎ-খুন সংক্রান্ত মামলা

শুক্রবার শুনানির শুরুতে কল্যাণ সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘চার বছর পর হঠাৎ কেন গ্রেফতার করল সিবিআই?’’ তার পরেই বিচারপতির সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন কল্যাণ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৫ ১৪:১০
Share:

(বাঁ দিকে) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আইনজীবী তথা তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সওয়ালে রেগে গেলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ। কল্যাণের উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আপনার লেকচার আমি শুনব না।’’ তার পরেই তিনি জানিয়ে দেন কাঁকুড়গাছির বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুনের মামলায় পুলিশকর্মীদের জামিন মামলা আর শুনবেন না!

Advertisement

এজলাসে তাঁকে উদ্দেশ করে বিচারপতির এ হেন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ কল্যাণ। প্রবীণ আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ বিচারপতি ঘোষের বিরুদ্ধে মৌখিক ভাবে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে দুর্ব্যবহারের নালিশ জানিয়েছেন।

২০২১ সালে কাঁকুড়গাছির বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুনের মামলায় কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এসি (তৎকালীন ওসি, নারকেলডাঙা থানা) শুভজিৎ সেন এবং ‘খুনে সাহায্যকারী’ সুজাতা দে, তৎকালীন এসআই রত্না সরকার এবং হোমগার্ড দীপঙ্কর দেবনাথকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ধৃতদের মধ্যে দুই পুলিশ অফিসারের জামিন মামলার শুনানিতে বিচারপতি ঘোষের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান কল্যাণ।

Advertisement

শুনানিতে মামালাকারীর পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ শুক্রবারই তাঁর মক্কেলদের অন্তর্বর্তী জামিন চেয়ে সওয়াল করেন। কিন্তু আদালত তা দিতে অস্বীকার করে। তার পরেই কল্যাণ মন্তব্য করেন, ‘‘আমাদের বিচারপতিদের কৃপার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এটাই দুর্ভাগ্য।’’ কল্যাণের এই মন্তব্যে বিরক্তিপ্রকাশ করেন বিচারপতি ঘোষ। কল্যাণকে কার্যত পাল্টা ধমক দিয়ে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘অনেক ক্ষণ ধরে আদালত সম্পর্কে নানা মন্তব্য করছেন, যা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আপনার লেকচার আদালত শুনবে না। আমি এই মামলা ছেড়ে দিচ্ছি। অন্য কোনও বেঞ্চে যান।’’

এ প্রসঙ্গে কল্যাণ বলেন, ‘‘এই মামলার জন্য সংসদের অধিবেশন ছেড়ে দিয়ে আমি কলকাতায় ফিরেছি। আর আমি ওকালতি করি। বিচারকের কথায় সায় দেওয়া আমার কাজ নয়। ওই জন্যই আমি কল্যাণ ব্যানার্জি।’’

উল্লেখ্য, শুক্রবার শুনানির শুরুতে কল্যাণ সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘চার বছর পর হঠাৎ কেন গ্রেফতার করল সিবিআই?’’ তার পরেই তাঁর মক্কেলদের অন্তর্বর্তী জামিন চান তিনি। তবে বিচারপতি ঘোষ জানান, আগামী সোমবার থেকে যেহেতু তিনি ১৫ দিন সার্কিট বেঞ্চে থাকবেন, তাই পরের অংশ ১৫ দিন পরে শুনবেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, এই মামলা আজই শেষ করে রায় দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এর মধ্যে অনেক আইনি দিক আছে। যদিও তার পরেও কল্যাণ অন্তর্বর্তী জামিনের জন্য বার বার আবেদন করেন। আর তাতেই রুষ্ট হন বিচারপতি ঘোষ।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময়েই ভোট-পরবর্তী হিংসায় পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছির অভিজিৎ খুন হন। পরিবারের অভিযোগ, ফল প্রকাশের পরেই গলায় তার পেঁচিয়ে ও পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় অভিজিৎকে। প্রথমে নারকেলডাঙা থানার পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছিল। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে পুলিশের থেকে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। এই মামলায় পুলিশ প্রথমে ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছিল। পরে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম অতিরিক্ত চার্জশিট জমা করে সিবিআই। তাতে মোট ২০ জন অভিযুক্তের নাম ছিল, যাদের মধ্যে ১৫ জনের নাম পুলিশের জমা দেওয়া চার্জশিটেও ছিল। গত ২ জুলাই দ্বিতীয় অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement