Calcutta High Court On UAPA

হিংসা মানেই সন্ত্রাসবাদী কাজ নয়: বেলডাঙা বিস্ফোরণকাণ্ডে ইউএপিএ ধারা যুক্ত করা নিয়ে বলল কলকাতা হাই কোর্ট

২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় রামেশ্বরপুরের বাগানের একটি ঘরে বোমা বানানো হচ্ছিল। রাত ৯টা নাগাদ সেখানে বিস্ফোরণ হয়। প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তদন্তে নেমে প্রায় ৭৪টি সকেট বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ২১:৪৫
Share:

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার মামলায় অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

‘হিংসা’ মানেই তা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ হবে, এমনটা নয়। দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা, নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি বা তেমন অভিযোগই সন্ত্রাসবাদ। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বোমা বিস্ফোরণ মামলার প্রেক্ষিতে এমনই মন্তব্য করল কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, যে কোনও হিংসার ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদ হিসাবে ধরা যাবে না। ভারতের নিরাপত্তা, ঐক্য বা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লে তখনই বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের (ইউএপিএ) ধারা যুক্ত করা যায়। এলাকায় কেউ কাউকে ভয় দেখানোর জন্য বোমা ফাটালেন, সে জন্য এউএপিএ ধারায় মামলা করা যায় না।

Advertisement

২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় রামেশ্বরপুরের বাগানের একটি ঘরে বোমা বানানো হচ্ছিল। রাত ৯টা নাগাদ সেখানে বিস্ফোরণ হয়। প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তদন্তে নেমে প্রায় ৭৪টি সকেট বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনার তিন মাসের মধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার হয় বিস্ফোরক। সেই বছরের সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে মামলার তদন্তভার নেয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

তদন্ত শেষ করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চার্জশিট দিয়েছে এনআইএ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইন এবং ইউএপিএ-র ১৮ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ওই মামলা থেকে জামিন পাওয়ার জন্য হাই কোর্টে মামলা করেছেন অভিযুক্তদের এক জন। তাঁর নাম ইমাদুল হক। তাঁর আইনজীবীর বক্তব্য, এলাকায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতেই বোমা বিস্ফোরণ করেছিল তাঁর মক্কেল। পাল্টা এনআইএ দাবি করে, ওই অভিযুক্ত শতাধিক কাঁচা বোমা মজুত করেছিলেন। সাক্ষীদের বয়ান থেকেই জানা গিয়েছে যে, তিনি একটি দুষ্কৃতকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গ্রামে ত্রাস সৃষ্টি করছিলেন ইমাদুল। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র ১৫ এবং ১৮ ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

Advertisement

হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এলাকায় হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে, এমন কোনও প্রমাণ নেই। আদালত এ-ও বলেছে, গ্রামাঞ্চলে লড়াই বা ভয় দেখানোর ঘটনা যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন, সেটি ইউএপিএ-র আওতায় পড়ে না। এর পর শর্তসাপেক্ষে ওই অভিযুক্তকে জামিন দিয়েছে আদালত।

হাই কোর্ট জানায়, ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ড এবং দুই জামিনদারের শর্তে জামিন পাবেন অভিযুক্ত। তবে প্রতিটি শুনানির দিন আদালতে হাজিরা দিতে হবে তাঁকে। অভিযুক্তকে বলা হয়, সাক্ষীকে ভয় দেখানো বা প্রমাণ নষ্টের অভিযোগ যেন না-ওঠে। আর আদালতে হাজিরার দিন ছাড়া সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না তিনি। ওই শর্তগুলি ভঙ্গ করলে নিম্ন আদালত তাঁর জামিন বাতিল করতে পারবে।

উল্লেখ্য, বছর খানেক আগে পটনার একটি মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল জামিন হচ্ছে নিয়ম, জেল ব্যতিক্রম। এমনকি, ইউএপিএ মামলাতেও সেটা প্রযোজ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement