Calcutta High Court

‘এত বছর প্রেম করেছেন, বিয়ের পর জানলেন স্বামী নিষ্ঠুর?’ বধূ নির্যাতনের মামলায় স্ত্রীকে প্রশ্ন কলকাতা হাই কোর্টের, নির্দেশ কী?

বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, দম্পতি বিয়ের আগে কলেজে প্রেম করতেন। তার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। দাম্পত্যের এত দিন পর স্ত্রীর মনে হল স্বামী নিষ্ঠুর, সহানুভূতিহীন? কিন্তু নির্যাতনের নির্দিষ্ট প্রমাণও দিতে পারেননি স্ত্রী।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৪
Share:

গার্হস্থ্য হিংসার মামলার শুনানি হল কলকাতা হাই কোর্টের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

স্বামী পেশায় ভূতত্ত্ববিদ। স্ত্রী বেসরকারি চাকুরে। প্রায় ১১ বছরের দাম্পত্যের আগে তাঁরা চুটিয়ে প্রেম করেছেন। বর্তমানে এক সন্তানের বাবা-মা। হঠাৎ স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা করেছিলেন স্ত্রী। পাল্টা এফআইআর খারিজের আবেদন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন স্বামী। দুই পক্ষের অভিযোগ এবং যুক্তি শোনার পর গার্হস্থ্য হিংসার মামলা খারিজ করে দিল উচ্চ আদালত। পাশাপাশি স্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে বলা হল স্বামীকে।

Advertisement

আদালত সূত্রে খবর, ২০২২ সালে দক্ষিণ কলকাতার পাটুলি থানায় গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগে এফআইআর করেন মহিলা। তাঁর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে স্বামী, চিকিৎসক শ্বশুর থেকে বাড়ি সামলানো শাশুড়ি, সকলেই তাঁকে নির্যাতন করেন। ৪৯৮এ ধারায় মামলা দায়ের হয়। সেই মামলা এখনও আলিপুর আদালতে বিচারাধীন। পাল্টা স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করার অভিযোগ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন স্বামী।

স্ত্রী জানিয়েছিলেন, ভালবেসে বিয়ে করেন তাঁরা। বিয়ের রেজিস্ট্রি হয় ২০১১ সালে। ২০১৪ সালে হিন্দু রীতি মেয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান করে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পর থেকে ‘অত্যাচার’ শুরু করেন স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি। স্ত্রীর দাবি, ‘‘স্বামী খুবই রাগী, নিষ্ঠুর এবং সহানুভূতিহীন। কথায় কথায় আমায় অপমান করেন। গায়ের রং, চেহারা নিয়ে খোঁটা দেন। জাত তুলে গালাগাল করেন।’’ উল্লেখ্য, স্ত্রী তফসিলি জাতিভুক্ত। তাঁর এ-ও অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই যৌতুক দাবি করতেন স্বামী। ফ্ল্যাটের লোনের কিস্তি দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন তাঁকে। কয়েক বার মারধরও করেছেন। এক বার তো গলা টিপে ধরেছিলেন। বাচ্চাকেও মারধর করেছেন।

Advertisement

পাল্টা স্বামী দাবি করেন, স্ত্রীর সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁকে এবং তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মাকে হেনস্থা করার জন্য মামলা করেছেন মহিলা। যুবকের দাবি, স্ত্রী যে শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ করেছেন, তার কোনও মেডিক্যাল রিপোর্ট নেই। আর অভিযোগ শুনে বাছবিচার না-করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।

গত বুধবার বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের এজলাসে এই মামলা ওঠে। স্বামীর আইনজীবী শেখর বসু এবং স্ত্রীর আইনজীবী সুজয় সরকারের সওয়াল শোনার পরে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ওই দম্পতি কলেজে প্রেম করতেন। তার পর দু’জনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ের এত দিন পর স্ত্রীর মনে হল, স্বামী নিষ্ঠুর এবং সহানুভূতিহীন? তিনি বলেন, ‘‘নির্যাতনের প্রমাণ হিসাবে কোনও মেডিক্যাল কাগজপত্র নেই। প্রতিবেশীদের কোনও সাক্ষ্য নেই। ওঁরা প্রেম করে বিয়ে করেন। স্বামী নিষ্ঠুর বলে এখন যদি দাবি করা হয়, তা হলে সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ২০১১ সালে বিয়ে হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত কেন কোনও অভিযোগ নেই?’’

পাশাপাশি আদালতের পর্যবেক্ষণ, স্ত্রী যে যে অভিযোগ করছেন, সেগুলো সাংসারিক জীবনের ‘অঙ্গ।’ যেমন ইএমআই দেওয়া নিয়ে ঝগড়া, অনলাইনে জিনিস কেনা নিয়ে কথা কাটাকাটি, শাশুড়ির কথা না শোনা, বাচ্চাকে খাওয়ানো— এ গুলো সাংসারিক খুটখাট ঝামেলা। এখানে ৪৯৮এ ধারা প্রযোজ্য নয়। তা ছাড়া জাত নিয়ে অপমান প্রকাশ্যে করা হয়নি। হয়ে থাকলে সেটা বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে হয়েছে। তাই এসসি-এসটি আইনে এই মামলা হবে না। এর পর বিচারপতি স্বামীকে বলেন, স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগে প্রত্যাহার করে নিতে। উচ্চ আদালতের মন্তব্য, ‘‘সাধারণ পারিবারিক অশান্তিকে নিষ্ঠুরতা বলা যায় না। অভিযুক্তের (স্বামীর) বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশ থাকলে তা-ও খারিজ করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement