কুষ্ঠরোগী খোঁজা হয়নি কলকাতায়, ক্ষুব্ধ কেন্দ্র

কুষ্ঠ পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে ধরে নিয়ে রাজ্য সরকারের মতো কলকাতা পুরসভাও পরিকাঠামো পুরোপুরি তুলে দিয়েছে। কিন্তু কুষ্ঠ-মুক্ত রাখার জন্য যা করণীয়, তাও করেনি পুরসভা।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০২
Share:

কুষ্ঠ পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে ধরে নিয়ে রাজ্য সরকারের মতো কলকাতা পুরসভাও পরিকাঠামো পুরোপুরি তুলে দিয়েছে। কিন্তু কুষ্ঠ-মুক্ত রাখার জন্য যা করণীয়, তাও করেনি পুরসভা। তাই রোগ যখন নতুন করে ছড়াচ্ছে, তখন তারা জানিয়ে দিল— ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি নিয়ে বছরভর নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে। তাই রাতারাতি কুষ্ঠ-নিরোধক পরিকাঠামো গড়া সম্ভব নয়।

Advertisement

কুষ্ঠ দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে ধরে নিয়ে এক সময়ে জাতীয় কুষ্ঠ নিবারণ কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু বহু আক্রান্ত ওষুধের কোর্স শেষ না করায় দেশের বিভিন্ন অংশে রোগটি ফিরে এসেছে। সেই সঙ্গেই ফের সক্রিয় করে তোলা হয়েছে জাতীয় কুষ্ঠ নিবারণ কর্মসূচিকে। পশ্চিমবঙ্গের কুষ্ঠপ্রবণ ৯টি জেলায় বাড়ি-বাড়ি গিয়ে কুষ্ঠ রোগী চিহ্নিত করতে বলেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। আর তার পরেই পরিকাঠামোর এই ঘাটতির কথা নতুন করে সামনে এসে পড়েছে।

গত কয়েক বছরে কলকাতায় যে হারে নতুন কুষ্ঠরোগী মিলছে এবং যে ভাবে দেহে বিকৃতিযুক্ত লোক পাওয়া যাচ্ছে, তাতে অবিলম্বে কুষ্ঠ সমীক্ষার কাজ শুরু না করলে বিপদ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। এ নিয়ে রাজ্য সরকার ও পুরসভার নিস্পৃহতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বিরক্ত। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘কুষ্ঠতে মৃত্যু হয়তো হয় না। কিন্তু সামাজিক লজ্জা, ঘৃণা ও হেনস্থার বিষয়টি মারাত্মক। চিকিৎসায় দেরি হলে দেহে চিরস্থায়ী বিকৃতি হয়ে মানুষ পঙ্গু হয়ে যান। পুনর্বাসনও দুষ্কর হয়। সেটাই পুরসভাকে বোঝানো যাচ্ছে না।’’

Advertisement

গোটা বিষয়ে হতাশ পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্রের নিযুক্ত কুষ্ঠ বিষয়ক উপদেষ্টা প্রসূন মিত্র। তিনি জানান— দেশে কুষ্ঠরোগী বেশি পাওয়া যায়, এমন অঞ্চলগুলি বাছাই করে সেখানে নতুন রোগী খুঁজে বার করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এর জন্য কলকাতা, মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, বীরভূম, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর—এই ৯টি জেলাকে বাছা হয়েছিল।

কুষ্ঠ বিভাগ তুলে দেওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য দফতর অন্য বিভাগ থেকে কর্মী তুলে নিয়ে ৭টি জেলায় সময়মতো রোগী চিহ্নিতকরণের কাজ করেছে। বাকি ছিল কলকাতা ও আসানসোল। সম্প্রতি আসানসোলেও কাজ শেষ। করেনি শুধু কলকাতা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে বলা হয়, সমীক্ষা চালানোর জন্য তাঁরা কলকাতা পুরসভার কাছ থেকে লোক চেয়েছিলেন। কিন্তু পুরসভা না বলে দিয়েছে। প্রসূনবাবুর কথায়, ‘‘আটটি জেলায় এই কর্মসূচিতে ২৭০০ জন নতুন কুষ্ঠরোগী খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কলকাতায় কাজ হলে হয়তো আরও পাওয়া যেত। তাঁদের চিকিৎসার আওতায় আনা যেত। ওই কাজ না-হওয়ায় দিল্লি ক্ষুব্ধ। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডিজি (কুষ্ঠ) অনিলকুমার প্রতি মাসে চিঠি পাঠাচ্ছেন। কিন্তু কলকাতা পুরসভার কোনও তাপ-উত্তাপই নেই।’’

কলকাতায় কুষ্ঠ পরিস্থিতি কেমন? কেন্দ্রের সমীক্ষা বলছে, ২০১২-১৩ সালে কলকাতায় ৪৯৫ জন নতুন কুষ্ঠরোগী পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৫-১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৯২৩। ২০১৬-১৭-য় গত নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র আট মাসে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৪৪০-এ। ২০১৫-১৬তে ১২৯ জন রোগী পাওয়া গিয়েছিল, যাঁদের দেহে বিকৃতি শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ তাঁরা সময়মতো ডাক্তারের কাছে যাননি। ২০১৬-১৭তে ইতিমধ্যেই দেহে বিকৃতিযুক্ত ৭৩ জন রোগীর হদিস মিলেছে।

কলকাতার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য দফতরের কুষ্ঠ উপদেষ্টা সৌমিত্র প্রামাণিকের মতে, কলকাতার রোগীদের অনেকেই ভিন্‌ জেলা বা ভিন্‌ রাজ্যের লোক। পুরসভা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে রোগী খোঁজার কাজ করলে অন্তত বোঝা যেত, প্রকৃত কলকাতার রোগী কত জন। সেই মতো তাঁদের ডাক্তার দেখানো, রোগ প্রতিরোধ এবং কোন এলাকায় তা কী ভাবে করা যাবে, সেই রূপরেখা তৈরি করা যেত। কিছুই করা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে কলকাতার পুরসভার ডেপুটি হেল্‌থ অফিসার (কুষ্ঠ রোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সৌমিত্র ঘোষের উক্তি, ‘‘গত বছর কুষ্ঠর বিশেষ কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে লোক দেওয়া সম্ভব ছিল না। ভেবেছিলাম জানুয়ারিতে করা যাবে। কিন্তু এখন সামনে আবার যক্ষ্মার একটা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি আছে। তার পরে রয়েছে পাল্‌স পোলিও। রয়েছে শিশুদের রুটিন টিকাকরণ। এ সব মিটলে তবে কুষ্ঠর কথা ভাবা যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement