‘মারের’ প্রতিবাদে সার দিয়ে বন্ধ চাকা

ট্র্যাফিক আইন ভাঙায় জরিমানা আদায়কে কেন্দ্র করে এ দিনের অশান্তির সূত্রপাত। অভিযোগ, এক বাসচালককে মারধর করেন এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

উষ্মা: যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাসচালকদের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

পুলিশ ও বাসকর্মীদের মধ্যে বচসাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ধুন্দুমার বেধে গেল দেশপ্রিয় পার্কে। রাস্তায় দাঁড় করানো হল বাস। ঘটনাকে ঘিরে হেনস্থার শিকার হলেন নিত্যযাত্রীরা।

Advertisement

ট্র্যাফিক আইন ভাঙায় জরিমানা আদায়কে কেন্দ্র করে এ দিনের অশান্তির সূত্রপাত। অভিযোগ, এক বাসচালককে মারধর করেন এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। ঘটনাকে ঘিরে প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক রাস্তার ধারে বাস দাঁড় করিয়ে দিলেন বাসচালকেরা। নামিয়ে দেওয়া হল যাত্রীদেরও। যদিও পুলিশের পাল্টা দাবি, এ নিয়ে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বাসমালিক কিংবা বাসচালকদের তরফে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।

কী ঘটেছিল? বাসমালিকদের অভিযোগ, এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ ৩সি/১ রুটের একটি বাস রাসবিহারীর দিক থেকে দেশপ্রিয় পার্কের দিকে যাওয়ার সময়ে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক সার্জেন্ট সেটিকে থামিয়ে জরিমানার টাকা দাবি করেন। ওই বাসটির চালকের দাবি, খানিক ক্ষণ আগেই তিনি হাজরা মোড়ে জরিমানা দিয়েছেন। সেই মুহূর্তে তাঁর কাছে আর জরিমানা দেওয়ার মতো টাকা নেই বলে তিনি ওই সার্জেন্টকে জানান। এমনকি তিনি বিষয়টি বাসের মালিককে জানানোর জন্য ওই সার্জেন্টকে বলেন। অভিযোগ, বাসের মালিকের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের মধ্যেই চালককে মারধর শুরু করেন ওই সার্জেন্ট।

Advertisement

পুলিশের পাল্টা দাবি, ওই বাসচালক কর্তব্যরত সার্জেন্ট এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের গালিগালাজ করেন। ওই বাসের বিরুদ্ধে ট্র্যাফিক আইন ভাঙার ১০৭টি অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও জরিমানার টাকা দিতে অস্বীকার করেন ওই চালক।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দু’পক্ষের বচসা চলাকালীন আচমকাই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বাসচালককে মারধর করার অভিযোগে আচমকাই বাসের যাত্রীরা এবং কন্ডাক্টর ওই ট্র্যাফিক সার্জেন্টকে ঘিরে ধরেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন অন্য বাসচালকেরা। তাঁরা রাস্তার ধারে বাস দাঁড় করিয়ে দেন। এর জেরে প্রায় দু’ঘণ্টা বাস চলাচল বিপর্যস্ত হয়। সাময়িক ভাবে যানজট তৈরি হয় ওই রাস্তায়। ততক্ষণে বেশ কয়েকটি বাসের মালিকও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান।

ঘটনার খবর পেয়ে দেশপ্রিয় পার্কের কাছে পৌঁছে যান সাউথ-ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি-সহ কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। তাঁদের কাছে জোর করে জরিমানা আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বাসচালক ও বাসমালিকেরা। পুলিশের আধিকারিকেরা বাসচালক এবং কন্ডাক্টরদের সঙ্গে কথা

বলে রাস্তা খালি করানোর চেষ্টা করতে থাকেন। বাসমালিকদের অভিযোগ খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতিও দেন পুলিশকর্তারা। পরে পুলিশের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে রাস্তা থেকে বাস সরিয়ে নেন চালকেরা। তবে লালবাজারের কর্তাদের দাবি, অবরোধ হয়নি। একটি ঘটনাকে ঘিরে দু’তরফের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। যা পরে মিটে গিয়েছে। তবে এমন প্রশ্নও উঠছে যে, এ দিন সকালে ট্র্যাফিক সার্জেন্টের হাত মার খাওয়ার অভিযোগ কেন লিখিত আকারে পুলিশের কাছে জানানো হল না? বাসমালিক সংগঠনের অভিযোগ, ট্র্যাফিক সিগন্যাল ভাঙার জন্য রাস্তায় পুলিশ যে সব কেস দিচ্ছে তাতে বিস্তর গোলমাল রয়েছে। উত্তর কলকাতার বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসুর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ জরিমানা আদায়ের নামে অযথা বাসকর্মীদের হেনস্থা করছে। এ নিয়ে পরিবহণমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগও জানানো হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে এ নিয়ে মামলাও করেছি।’’

অভিযুক্ত বাসের মালিক লখিন্দর পণ্ডার কথায়, ‘‘মাত্র দু’দিন আগেই পুলিশের কাজেই আমার বাস ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। তখন ওঁরা কেউ কিছু বলেননি। সোমবার এবং মঙ্গলবার দু’বার জরিমানার টাকা দিয়েছি। কিছুটা সময় চেয়েছিলাম। তার আগেই আমার বাসের চালককে মারধর করা হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন