ছক ভাঙা আইসক্রিমের বৈচিত্র্যে উত্‌সবের আমেজ

হঠাত্‌ করে জামাই-ঠকানো মিষ্টির কথা মনে পড়তে পারে। সেই গরদের পাঞ্জাবি ভেজানো গোলাপ জল ভুরভুর করা আসলি কড়া পাক এখনও মিশে আছে বাঙালি আতিথেয়তায়। কিন্তু সেই রোমাঞ্চ বাসি। তবে এ কালের কলকাতার আইসক্রিমের রকম ফেরে সত্যিই চমক লাগতে পারে!

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share:

হঠাত্‌ করে জামাই-ঠকানো মিষ্টির কথা মনে পড়তে পারে।

Advertisement

সেই গরদের পাঞ্জাবি ভেজানো গোলাপ জল ভুরভুর করা আসলি কড়া পাক এখনও মিশে আছে বাঙালি আতিথেয়তায়। কিন্তু সেই রোমাঞ্চ বাসি। তবে এ কালের কলকাতার আইসক্রিমের রকম ফেরে সত্যিই চমক লাগতে পারে!

তিন দশক আগে অনেকটা জামাই ঠকানোর কসরতেই ‘এপ্রিল ফুল’ বানাতে বেক্ন আইসক্রিমের উদ্ভব ঘটে নিউ ইয়র্কের একটি পার্লারে। ডিমের কার্স্টাডে বেক্ন মিশিয়ে তা আইসক্রিমের কায়দায় জমানো হয়। পদটির ক্রমশ বিবর্তন ঘটেছে ডাকসাইটে শেফদের হাতে। আজকের কলকাতাও কিন্তু আচমকা চিকেন টিক্কা আইসক্রিমের সৌজন্যে খাইয়ের পিলে চমকে দিতে পারে।

Advertisement

এই ২০১৪-র উত্‌সবের আবহে শহর জুড়ে ছক-ভাঙা আইসক্রিমের দাপট। সেই চিরকেলে স্ট্রবেরি, ভ্যানিলা, চকোলেট এমনকী বাটার স্কচ, কেশর পেস্তার ঘেরাটোপ থেকে ইদানীং মুক্তি খোঁজেন বহু আইসক্রিম ভক্তই। শহরের পাঁচতারা থেকে শুরু করে কয়েকটি নামী-দামি স্ট্যান্ড অ্যালোন রেস্তোরাঁয় তাঁদের জন্য চোখে পড়ছে অভিনব সব আয়োজন। এ বার ক্রমশ শহর জুড়ে বিভিন্ন শপিং মল বা খুদে-খুদে জেলাটো পার্লারেও এই আইসক্রিম-উত্‌সব জমে উঠছে। যেমন, লাউডন স্ট্রিট বা শরত্‌ বসু রোডের মামা মিয়া। সেখানে জেলাটোর আধারেই কেতাদুরস্ত ফরাসি কায়দায় নোনতা বিস্কুট বা ক্র্যাকার সহযোগে চিজ প্ল্যাটারের সোয়াদ মিলবে। কোনও ফল ও বাদামের মিশেলে এই চিজ আস্বাদের ফাঁকে-ফাঁকে ওয়াইনে চুমুক দেওয়ার নিয়ম। মামা মিয়া-র ব্লু চিজ জেলাটো, বাড়িতে এনে ওয়াইনযোগে একটু ফ্রেঞ্চ হওয়ার চেষ্টাও করা যেতে পারে।

ইতালির ঘরোয়া আইসক্রিম জেলাটোয় ফ্যাটের বহর কম। সাধারণত কৃত্রিম স্বাদ-গন্ধের বদলে খাঁটি উপাদান ব্যবহারই দস্তুর। ব্লু চিজ জেলাটোয় ব্লু চিজের নিজস্ব গন্ধ। সঙ্গে ব্লুবেরি, ক্র্যানবেরি, স্কুপের মাথায় মেক্সিকো-টেক্সাসজাত পিক্যান নাটের (খানিকটা আখরোটগোছের) শোভা। একটু হাল্কা রোজমেরির ঘ্রাণও মিলবে। নোনতা ক্র্যাকারের সঙ্গে এই আইসক্রিমের কম্বিনেশনে মিঠে-কড়ার স্বাদু গুরুচণ্ডালী। নোনতা-মিষ্টি, শক্ত-নরম--- সব মিলেমিশে একাকার।

“আইসক্রিমের মধ্যে এই অভিনব বা বলা ভাল আজগুবির মিশেলটাই সময়ের দাবি!”--- বলছিলেন পার্ক হোটেলের এগজিকিউটিভ শেফ শরদ দিওয়ান। ইদানীং লোকে হয়ত ভ্যানিলা আইসক্রিমেও চকোলেট সসের বদলে সাংগ্রিয়া সুরার সস পেয়ে খুশি হচ্ছে। ইদানীং সুইস বা বেলজিয়ান চকোলেটে যেমন লঙ্কার ফ্লেভার মেলে, কলকাতার পাঁচতারা হোটেলেও লঙ্কা, সেজুয়ান কর্নের মোচড় মিশছে আইসক্রিমে। কোঁয়াত্র, বেলিজ, মালিবুর মতো আহারশেষের লিকিওর বা কিছু-কিছু অ্যালকোহলিক আইসক্রিমও পাওয়া যাচ্ছে। আবার ইতালির খিচুড়ি রিসোত্তোর সঙ্গে অলিভ অয়েল বা বালস্যামিক ভিনিগারের নোনতা আইসক্রিমেরও ব্যবস্থা থাকছে। হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালে আইসক্রিম নিয়ে নতুন কাজ করছেন কর্পোরেট শেফ উত্‌পল মণ্ডল। হোটেল পিপাল ট্রি-র তামারায় শেফ চিরঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় তেঁতুল, কাসুন্দি, লাল ক্যাপসিকামের আইসক্রিম থেকে শুরু করে চিকেন মাখনি টিক্কার আইসক্রিমকেও পেশ করছেন।

মামা মিয়া কিন্তু নানা কিসিমের আইসক্রিম-অভিজ্ঞতা এখন শহরের সব ক’টা নামজাদা শপিং মলেই ছড়িয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুর, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড থেকে শুরু করে নানা এলাকায় তাদের উপস্থিতি। সেখানে জেলাটোয় মিশে যাওয়া খাঁটি তিরামিসু খেয়ে ইতালিয় কনসাল জেনারেল সেজারে বিয়েলার পর্যন্ত দেশোয়ালি মিট্টির খুশবুতে বিহ্বল।

দুই তরুণ কর্তা অঙ্কিত সিংহানিয়া ও অধিরাজ থিরানির দাবি, অনেক কিছুতেই জেলাটো হতে পারে। তাই মাল্টিপ্লেক্সের মিঠে পপকর্ন বা শীত-সন্ধ্যার নুন-লেবু জারিত গনগনে ভুট্টাও এ বার জেলাটোয় খুঁজে পাবেন। সুইট কর্ন-রক সল্ট জেলাটোয় মরিচগুঁড়ো ছড়ানো হচ্ছে। আবার ইতালিয়ান বাদাম বিস্কুট বিস্কটির সঙ্গে পেস্তার জেলাটোও হাজির। দক্ষিণ-পুব এশীয় কায়দায় মধু মেশানো তিল-আখরোটের জেলাটোরও জয়জয়কার। একদা কাঁচা আম, ডাব ইত্যাদির জেলাটোয় তাক লাগিয়ে দিত মামা মিয়া। এখনও তাদের নিরীক্ষা অটুট।

দিওয়ালি-ভাইফোঁটার আবহে লাড্ডু-বরফির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে আইসক্রিম, কুকিজ-মাফিনের নানা ধরনের উপহার। অভিনবত্বের এই চর্চায় একটা প্রশ্ন অবশ্য ঘুরপাক খায়। দেখতে হবে, আইসক্রিমের আদলে নানা জাতের স্বাদের মিলমিশটা জম্পেশ হচ্ছে কী না! নইলে পুরো বিষয়টা সুকুমার রায়ের কিম্ভূত-মার্কা ‘নই সাপ, নই ব্যাঙ, নই আমি কিচ্ছু’ হয়ে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন