অঘটন: দুর্ঘটনার পরে পথ অবরোধ স্থানীয়দের। (ইনসেটে) অর্ক শীল। বুধবার, বেলঘরিয়ায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
প্রতিদিনের মতোই ঠাকুরমার স্কুটির পিছনে বসে স্কুলে যাচ্ছিল দশ বছরের ছেলেটা। কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও অবশ্য স্কুলে আর ঢোকা হয়নি চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া অর্ক শীলের। তার আগেই লরির চাকায় পিষে মৃত্যু হল ওই পড়ুয়ার। দুর্ঘটনায় বালকের ঠাকুরমা জয়ারানি শীলের বাঁ পা বাদ দিতে হয়েছে। বুধবার বেলঘরিয়ার ঘটনা।
এ দিনের ওই দুর্ঘটনার পরেই বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ব্যারাকপুর ও সোদপুর উড়ালপুলে ভারী যান চলাচল বন্ধ রাখা হলেও বেলঘরিয়ার উড়ালপুল দিয়ে কেন ভারী গাড়ি চলাচল করছে? বিটি রোড দিয়ে ঢুকে বেলঘরিয়ার ফিডার রোড হয়ে ওই রেল সেতুতে উঠতে হয়। তা থেকে নিমতার দিকে নেমে এমবি রোড ধরে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে পৌঁছনো যায়। ওই রাস্তা দু’টিও যথেষ্ট সঙ্কীর্ণ। ফলে ওই রাস্তায় মালবোঝাই বড় লরি চলাচল করলেই যানজট তৈরি হয়। তার জেরে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে। আবার ভারী গাড়ি চলাচল করায় সেতুটিও কাঁপে। তার পরেও কেন ওই রাস্তা ও উড়ালপুল দিয়ে ভারী গাড়ি চলাচল করে সেই প্রশ্নে এ দিন দুর্ঘটনার পরে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশ কর্তাদের দাবি, পূর্ত দফতর ব্যারাকপুর ও সোদপুর সেতুকে বিপজ্জনক ঘোষণা করার কারণেই কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের দিকে যাওয়া লরি বেলঘরিয়ার রাস্তা ব্যবহার করে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘বিকল্প রাস্তা তো দিতে হবে যানবাহনের জন্য। তবে ওই দু’টি উড়ালপুল ভারী যান চলাচলের জন্য কবে খোলা হবে সে বিষয়ে পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। আর বেলঘরিয়ার ওই রাস্তায় পুলিশি নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ দিন দুর্ঘটনার পরে চুয়ান্ন বছরের জয়াদেবীকে সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।। তবে স্থানীয় মানুষ বালকের মৃতদেহ চাদরে মুড়ে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখান। প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক পরে বেলঘরিয়া, বরাহনগর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে লাঠি উঁচিয়ে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেন। এর পরেই অর্কর মৃতদেহ তুলে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়। পুলিশের দাবি দু’জনের মাথাতেই হেলমেট ছিল না।
পুলিশ জানায়, নিমতা থানার সারদা পল্লির বাসিন্দা বিশ্বজিৎ শীলের একমাত্র ছেলে অর্ক ওরফে ঋজু। প্রতিদিনই সকালে বেলঘরিয়া প্রাথমিক স্কুলের ওই ছাত্রকে স্কুটিতে চাপিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিতেন জয়াদেবী। এ দিনও সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ তাঁরা বেরিয়েছিলেন। পুলিশ জানায়, স্কুটি নিয়ে বেলঘরিয়া সেতুর একেবারে বাঁ দিক ঘেঁষেই যাচ্ছিলেন জয়াদেবী। সেই সময় বেলঘরিয়ার দিক থেকে সেতুতে উঠছিল একটি বাস। আচমকাই সেই বাসটি ডান দিক চাপায় উল্টো দিক থেকে নামা পাথর বোঝাই ১০ চাকার ওই লরিটিও উড়ালপুলের বাঁ দিকে চাপতে বাধ্য হয়। আর ওই লরিটির সামনেই ছিল জয়াদেবীর স্কুটিটি। বাম্পারের জন্য তিনি স্কুটির গতি কমাতেই লরিটি তাঁদের পিছন থেকে ধাক্কা মারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাল বোঝাই থাকায় লরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুটিতে ধাক্কা মারলে রাস্তায় পড়ে যায় অর্ক ও জয়াদেবী। লরির পিছনের চাকায় বালকের মাথা পিষে যায়। আর তার ঠাকুরমার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায় লরিটি। স্থানীয়েরা ছুটে আসতেই লরি ফেলে পালায় চালক। ঘটনাস্থলে এসে বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘এত ঘিঞ্জি রাস্তা দিয়ে কেন লরি চলাচল করে তা নিয়ে আমরা অনেক দিন ধরেই আপত্তি জানিয়েছিলাম। আজ আমার ছেলেটাই চলে গেল।’’ এ দিন সারদাপল্লিতে গিয়ে দেখা গেল বাড়ির সামনে জটলা। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন মা লিপিকাদেবী।