গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ।
দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ফুঁসছিলেন বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের অভিভাবকেরা। প্রায়ই স্কুল থেকে ফিরে শিশুরা ওই শিক্ষকের নামে নালিশ করত বলে দাবি করেছেন অভিভাবকদের একাংশ। এমনকি ওই শিক্ষককের বিরুদ্ধে মদ্যপ অবস্থায় ক্লাস নেওয়া অভিযোগও উঠেছে।
মঙ্গলবার যৌন হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে নিগৃহীতার মা স্কুলে পৌঁছতেই আগুনে ঘি পড়ে। তাঁর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে অন্য পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা স্কুলে ঢুকে ভাঙচুরও চালালেন। অভিযোগ, এই সুযোগে বহিরাগতরা ঢুকে পড়েছিল স্কুলের ভিতরে। ইতিমধ্যেই এমন চার জনকে গ্রেফার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যেই কেউ কেউ অভিযুক্ত শিক্ষক দীপক কর্মকারকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে। শুরু হয় ইটবৃষ্টি। পুলিশও উত্তেজিত অভিভাবকদের ছত্রভঙ্গ করতে এলোপাথাড়ি লাঠিচার্জও করে।
যৌন হেনস্থার ঘটনাকে কেন্দ্রে কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল স্কুলে? ভাঙচুরের ঘটনায় বহিরাগতরা ছিল কি? অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে? এ সব জানতেই রিপোর্ট তলব করেছে রাজ্য সরকার। অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতারের পরও এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে মহিলা পুলিশ না থাকা সত্ত্বেও মেয়েদের উপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করা হয়েছে। আহতদের এক জন ঝর্না দত্ত। তিনি বলেন, “আমার মেয়েও শিশু বিভাগে পড়ে। খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলাম। শিক্ষকের ব্যবহার একদমই ভাল ছিল না। এখন আতঙ্কে রয়েছি।” আর এক অভিভাবক সুভাষ কয়াল ভিড়ের মধ্যে থেকে বলে উঠলেন, “উনি তো মদ খেয়ে ক্লাস করাতেন। ঝামেলাও হয়েছিল। এই তো কয়েক মাস আগের ঘটনা।”
দেখুন বিক্ষোভের ভিডিয়ো
আরও পড়ুন: ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা, রণক্ষেত্র ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী স্কুল, গ্রেফতার শিক্ষক
আরও পড়ুন: মদ আর মাদক নিয়ে ফের ছাত্র সংঘর্ষ যাদবপুরে
এ দিন অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কলকাতা জেলার প্রাইমারি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না। তিনি অভিভাবকদের ক্ষোভের কথা শোনেন। বৈঠক শেষে কার্তিকবাবু জানিয়েছেন, “দুঃখজনক ঘটনা। শিক্ষমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে। আপাতত ওই শিক্ষক ক্লাস নেবেন না। দোষী প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। এই ঘটনায় স্কুলের অভিভাবকদের সঙ্গে বহিরাগতরাও ঢুকেছিলেন। পুলিশ তাঁদের চিহ্নিত করেছে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ সূত্রে খবর, ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করেছে। আরও কয়েক জনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। যদিও এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকাকেই দায়ী করেছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে অভিভাবকেরা। মাথায় চোট নিয়ে স্কুলের সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন মৌসুমী মণ্ডল। তিনি বলেন, “পুলিশ প্রথমেই যদি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করত, তা হলে এমন পরিস্থিতি হত। সে সব না করে পুরুষ পুলিশ দিয়েই মহিলাদের পেটানো হল।” তার সঙ্গেই একমত ঝর্না সরকার। তিনি নিগৃহীতা ওই শিশুর পাশের বাড়িতেই থাকেন। তাঁর দুই মেয়েই এই স্কুলে পড়ে। এক মেয়ে ওই শিশুর সহপাঠী। তাঁর অভিযোগ, “মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে আমারই ভয় করছে।”
ঘটনার খবর পেয়েই স্কুলে পৌঁছন মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন মালাকার। তিনি বলেন, “ঘটনাটি শুনে খুবই খারাপ লাগছে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পুরুষ শিক্ষক পড়াবেন কি না, সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। অভিভাবকেরা পুরুষ শিক্ষক চাইছেন না।”
এ বিষয়ে শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অন্যন্যা চট্টোপাধ্যায় চক্রবর্তী বলেন, “আমি মনে করি না সব পুরুষ শিক্ষকই খারাপ। এই ঘটনার পর আমরা গোটা পরিস্থিতির উপর আমার নজর রাখছি। যদি দেখা যায় ওই শিক্ষক দোষী, তা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”