সন্তানের হেফাজত সংক্রান্ত মামলায় নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হলে শিশু কার কাছে থাকবে, আদালতে এই সংক্রান্ত মামলা চলাকালীন অন্য কাউকে ‘বাবা’ বা ‘মা’ বলে ডাকতে বাধ্য করা যাবে না ওই শিশুকে। এমনটাই জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সম্প্রতি বিচ্ছেদ ও শিশুর হেফাজত সংক্রান্ত মামলার জন্য নিয়মাবলি প্রকাশ করেছে আদালত। সেখানেই এই কথা বলা হয়েছে। কোনও নির্দিষ্ট মামলা নয়, এই সংক্রান্ত সকল মামলার ক্ষেত্রেই এই নির্দেশিকা প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া হাই কোর্ট জানিয়েছে, শিশুর হেফাজত নিয়ে মামলা চলাকালীন দিনে অন্তত এক বার সে বাবা বা মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলবে। তাতে শিশুকে বাধা দেওয়া যাবে না।
হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, বাবা-মায়ের অন্য কোনও সঙ্গীকে যদি শিশু ‘বাবা’ বা ‘মা’ বলে ডাকে, সে ক্ষেত্রে জন্মদাতা বাবা বা মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রভাবিত হতে পারে। আইনি প্রক্রিয়ায় শিশুর হেফাজত নিশ্চিত না-হওয়া পর্যন্ত তা কাম্য নয়। বরং এই সময়ে বাবা বা মা তাঁর নতুন সঙ্গীকে অন্য কোনও বিকল্প নামে ডাকার কথা শিশুকে বলতে পারেন। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে নতুন ওই সঙ্গী শিশুর সঙ্গে তার জন্মদাতা বা জন্মদাত্রীর সম্পর্কে নাক গলানোর চেষ্টা না-করেন। জন্মদাতা বা জন্মদাত্রীকেও সেই নতুন সঙ্গীর প্রতি নম্র, শ্রদ্ধাশীল হতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
হেফাজতের মামলা চলাকালীন শিশুর অধিকার ঠিক কতটা, তা নিয়ে একাধিক জনস্বার্থ মামলা সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের হয়েছিল। তাতে বলা হয়, স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ মামলা যত বাড়ছে, তত শিশুকে নিয়ে হেফাজতের মামলায় তিক্ততা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রেই নিষ্পাপ শিশুদের প্রতিশোধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে শিশুর উপর মানসিক চাপ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এই জনস্বার্থ মামলাগুলির ভিত্তিতে নতুন নিয়মাবলি প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। বলা হয়েছে, যদি বাবা বা মা অন্য কোনও সম্পর্কে যুক্ত হন, তবে নতুন পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। পারিবারিক আদালতগুলি মনোবিদদের পরামর্শ নিয়ে তা নিশ্চিত করবে। শিশুর ভরণপোষণ, পড়াশোনা এবং হেফাজত নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না-হওয়া পর্যন্ত কোনও বিচ্ছেদ চূড়ান্ত করা যাবে না। এ ছাড়া বলা হয়েছে, শিশুর হেফাজত চেয়ে যে সমস্ত বাবা বা মা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন, তাঁদের শিশুর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা আগে আদালতকে দেখাতে হবে। পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে শিশুর হেফাজত নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবে পারিবারিক আদালত।