বন্ধুত্বের জোয়ারে ভাসল শহর

জলছবি, রংমশাল, স্কুল ছুটির হজমিরা আলবত আছে মনের ঘরে। কিন্তু চোখের সামনে ধোঁয়া-ওঠা গরমাগরম ‘থিনক্রাস্ট পিৎজা’ কিংবা বিয়ারের মাগ ভরপুর উচ্ছ্বাস।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫১
Share:

বন্ধুত্বের আড্ডায়। রবিবার, পার্ক স্ট্রিটে। ছবি :শুভাশিস ভট্টাচার্য।

জলছবি, রংমশাল, স্কুল ছুটির হজমিরা আলবত আছে মনের ঘরে। কিন্তু চোখের সামনে ধোঁয়া-ওঠা গরমাগরম ‘থিনক্রাস্ট পিৎজা’ কিংবা বিয়ারের মাগ ভরপুর উচ্ছ্বাস।

Advertisement

রবি-বিকেলে কলকাতায় ‘বন্ধুত্ব দিবস’-এর ছবিটা দেখলে সেটাই মালুম হবে। বন্ধুর টিমে বন্ধুর পাশে থাকার মাঠখানা এখন পুরোটাই বদলে গিয়েছে। ঘাস-ওঠা মাঠের বদলে শপিংমলের ভিড়ে ভিড়াক্কার ফুডকোর্ট। কিংবা গাঁকগাঁকিয়ে মিউজিক চালিয়ে তুরীয় আনন্দে ভেসে যাওয়ার ‘লাউঞ্জ বার’— সবই বন্ধুত্বের উদ্‌যাপনে ভরপুর।

পার্ক স্ট্রিটের বার্গার ঠেকে হইহই করে ঢুকে পড়া দলটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছিলেন জনৈক কর্মচারী। বললেন, ‘‘আজকাল ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে থেকে শুরু করে এ সব ফ্রেন্ডশিপ ডে উপলক্ষ মাত্রেই রেস্তোরাঁ জমজমাট। পুজো-ভাইফোঁটার মতো দিনের মতোই ভাল ভিড় হয় ইদানীং!’’

Advertisement

তবে রেস্তোরাঁয় এই ভিড়টা জড়ো হওয়ার আগে একটা সলতে পাকানোর পর্ব থাকে। সেটা শুরু হয়ে গিয়েছে, সাতসকাল বা তারও আগের মাঝরাত্তিরে স্মার্টফোনে খুটখুট থেকে। হোয়াট্‌স অ্যাপ, ফেসবুকে ‘হাই ফ্র্যান্ডস’ সম্বোধন বা ‘হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে’ বার্তায় পিছিয়ে নেই বারুইপুর থেকে বস্টন কিংবা দমদম থেকে ডুসেলডর্ফ। অগস্টের প্রথম রবিবারটা বন্ধুত্ব দিবস হিসেবে স্বীকৃত বহু দেশেই। দেশে দেশে ছড়িয়ে থাকা নানা বয়সের বঙ্গসন্তানদের মধ্যে বন্ধুতার ‘ভার্চুয়াল’ হাত মেলানো বা গলাগলি চলেছে পুরোদমেই। মজাদার ছবি পাঠিয়ে স্কুলের পুরনো ব্যাচতুতো বন্ধুদের হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপে চালু হয়ে গিয়েছে বিশেষ দিনের আচার-অনুষ্ঠান। শহর জুড়ে টুকরো টুকরো সান্ধ্য বা বৈকালিক মজলিসের পরিকল্পনাও সারা হয়ে গিয়েছিল তখনই। কিছু রেস্তোরাঁ
বা ফাস্টফুড চেনে দিনের বিশেষ ‘অফার’-এর টানও জড়ো হওয়ার ইচ্ছেটা আরও চাগিয়ে তুলেছে।

বেশ কয়েকটি খাবার দোকানে বন্ধুত্ব দিবসে বিশেষ ছাড় রয়েছে। যেমন একটি নামী পিৎজা চেনের আউটলেটে মিডিয়াম সাইজ চিকেন পিৎজা পাওয়া যাচ্ছে অন্য দিনের থেকে অনেকটাই কম দামে। তার সঙ্গে সফট ড্রিংক নিলে তো ‘কম্বো প্যাক’! সেখানে ছাড় আরও বেশি। বিশেষ ছাড় রয়েছে লাউঞ্জবারেও। বন্ধুত্বের সম্পর্ক উ‌দ্‌যাপন করতে একটি পানীয়ের সঙ্গে আর একটি বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

এ দিন প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের শপিংমল-মাল্টিপ্লেক্সে দেখা হল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ইয়ার অঙ্কিতা দাশ, সাগ্নিকা সেনগুপ্তদের সঙ্গে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের সূর্যাংশু মিত্র, আদেশ রায়, মোহিনী পালদের সঙ্গে দল বেঁধে পিৎজা-অভিযানে বেরিয়েছেন তাঁরা। দুপুরে জন অ্যাব্রাহাম, বরুণ ধাওয়ানদের ‘ঢিসুম’ দেখে দিনটা উপভোগ করেছেন সদ্য তরুণ কলেজ পড়ুয়ারা। তার পরেই সস্তায় পিৎজার অফার দেখে দে ছুট। ওই তল্লাটেই ফ্রায়েড চিকেন চেনের আউটলেটেও বিশেষ দিন উদ্‌যাপনের মহিমা কিছু কম নয়। এনআরএসে নার্সিং তালিমের শিক্ষানবীশ তিন তরুণী সেখানে একজোট হয়েছেন। জয়নগরের আয়েশা শেখ, ঢাকুরিয়ার পায়েল ভট্টাচার্য, বারুইপুরের সঙ্গীতা সামন্তেরা এমনিতে কলকাতায় ঘোরাঘুরি করে হইহুল্লোড়ের সময় খুব বেশি পান না। বাড়িতেও কড়াকড়ি। কিন্তু বন্ধুত্বের দিন উপলক্ষে জমায়েতের জন্য ছাড় মিলেছে।

পার্ক সার্কাসে আর একটি মলের লাউঞ্জবারে দুপুর থেকেই চলকে ওঠা বিয়ার ও মোহিতোর গেলাসে চুমুক দিয়ে ফুরফুরে দেবজ্যোতি, দেবাদৃতা, এণাক্ষী, কৃশানুদের দলটা। ওঁরা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। হাসতে হাসতেই বললেন, রোজ ১০-১২ ঘণ্টা শিফ্‌টের খাটুনিতে সপ্তাহের ক্লেদ মুছে ফেলতে বন্ধুত্বের দিনের উপলক্ষ টনিকের কাজ করছে। তবে বন্ধুত্বের এই হাতছানির কোনও বয়স নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় পারস্পরিক ‘উইশ’ করার সংক্রমণে শেষমেশ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছে আসানসোলের নামী কনভেন্টের প্রাক্তনী ষাটোর্ধ্বদের দলও। বিলেতের ডাক্তার মুশারফ আলি, মস্কো প্রবাসী ইয়াসিন খান, পাহাড়প্রেমী রাজেশ পণ্ডিত, ব্যবসায়ী মিহির বিশ্বাসদের গন্তব্য পার্ক স্ট্রিটের সাবেক চা-ঘর। আগে থেকে ঠিক করে সকলেই চাপিয়েছেন ‘ম্যাচিং’ ধপধবে কুর্তা-পাজামা। মুশারফ সাহেব চোখ টিপে হাসলেন, ‘‘আমাদের কম বয়সে ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’ ছিল না। জেনে রাখুন, বুড়ো বয়সের দোস্তিও কম মজাদার নয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন