লিফট-সমস্যার সমাধানে চেয়ার!

প্রবল গরমে নাজেহাল শহরের একাধিক পুরনো আবাসনে এ ভাবেই চেয়ার পেতে ‘বিকল্প পথ’ খোঁজা শুরু করেছেন বাসিন্দারা।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০২:৩৯
Share:

গড়িয়ার একটি আবাসনে সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে চেয়ার পেতে বসার ব্যবস্থা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

গড়িয়ার এক পাঁচতলা আবাসনের সামনে কাঁদো কাঁদো মুখে দাঁড়িয়ে ষাটোর্ধ্ব মহিলা। বয়সের কারণে জবাব দিয়েছে হাঁটু। কী ভাবে সিঁড়ি ভেঙে উঠবেন ভেবেই দিশাহারা। সত্তর ছুঁইছুঁই সঙ্গী হাতটা ধরে বললেন, ‘‘কোনওক্রমে একতলা ওঠো। দোতলায় চেয়ার পাতা রয়েছে।’’

Advertisement

প্রবল গরমে নাজেহাল শহরের একাধিক পুরনো আবাসনে এ ভাবেই চেয়ার পেতে ‘বিকল্প পথ’ খোঁজা শুরু করেছেন বাসিন্দারা। সরকারি আবাসনের বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বহু চার-পাঁচতলা ফ্ল্যাটে লিফট নেই। পুরসভা, আবাসন দফতরকে জানিয়েও লিফট তৈরির ব্যবস্থা হচ্ছে না। বেসরকারি আবাসনের সমস্যা আবার অন্যরকম। একতলা এবং দোতলার বাসিন্দারা লিফটের জন্য ততটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তা ছাড়া, বারবার চিঠি দিলেও আবাসন দফতর লিফটের অনুমতি পাশ করতে দেরি করছে বলেও অভিযোগ।

মধ্য কলকাতার একটি সরকারি আবাসনের বাসিন্দা সৌমেন জানার দাবি, ‘‘বাবা-মা দু’জনেই বয়স্ক। ফি মাসেই ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে হয়। সিঁড়ি দিয়ে স্ট্রেচারে করে নামানো-ওঠানো করতে হয়। অথচ লিফট থাকলে নিজেরাই হেঁটে যেতে পারতেন।’’ গড়িয়ার এক আবাসনের বাসিন্দা সৌমিতা মিত্রের ক্ষোভ, ‘‘সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের সাত দিনের মাথায় শিশু সন্তান-সহ পঁয়ষট্টিখানা সিঁড়ি ভেঙে চার তলায় উঠতে হয়েছিল। অথচ বারবার বলেও লিফটের ব্যবস্থা হয়নি।’’

Advertisement

বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি আবাসনের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে তাঁরা নিজেরাই একটানা হেঁটে ওঠার বদলে প্রতিটি ফ্লোরে বসার ব্যবস্থা করেছেন। কোথাও নিজেদের খরচে প্লাস্টিকের চেয়ার বা বেঞ্চ বসানো হয়েছে, কোথাও আবার বসার জায়গার পাশাপাশি প্রতি ফ্লোরে জল এবং পাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উল্টোডাঙার এক আবাসনের বাসিন্দা বললেন, ‘‘গরমকালে এতটা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে গিয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। তাই আমরা বসার জায়গায় পানীয় জলের ব্যবস্থাও রাখছি।’’

পাটুলির এক আবাসনের বাসিন্দা শম্ভু সেন বলছিলেন, ‘‘আমাদের পাঁতচলা আবাসন প্রায় ২৬ বছরের পুরনো। লিফট নেই। টানা হেঁটে চার-পাঁচতলা উঠতে খুবই কষ্ট হয়। তাই নিজেরাই টাকা তুলে চেয়ার কিনে প্রতিটি ফ্লোরে চেন দিয়ে বেঁধে দিয়েছি। যাঁর দরকার একটু বসে বিশ্রাম নিয়ে ফের উঠবেন।’’

এত দিনেও লিফটের ব্যবস্থা করা যায়নি কেন? রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বহু সরকারি আবাসন থেকে সে ভাবে রাজস্ব আদায় হয় না। আমরা বেশ কিছু আবাসন বিক্রির পরিকল্পনা করেছি। তবে তার মধ্যেই লিফট তৈরির প্রস্তাবগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ যত দিন না লিফট হয় আবাসনগুলিতে প্রতি ফ্লোরে চেয়ার-বেঞ্চ পাতার উদ্যোগ শুনে হেসে ফেললেন মন্ত্রী শোভন। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম প্রস্তাব পেলে ভেবে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন