পথে কম লোক, তবু ‘সচল’ শহর

কলকাতায় বন্‌ধের খবরটা সাতসকালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেই কানে এসেছিল ফারহানা ও রাকিবুলের। অতঃপর সোমবার ভরদুপুরে ‘মিছিল-নগরী’তে নেমে কী পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ভেবে রীতিমতো দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায় তাঁদের। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৩৪
Share:

বাদুড়ঝোলা: বন্‌ধের জেরে ট্রেনে উপচে পড়া ভিড়। সোমবার, বারুইপুর স্টেশনে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

কলকাতায় বন্‌ধের খবরটা সাতসকালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেই কানে এসেছিল ফারহানা ও রাকিবুলের। অতঃপর সোমবার ভরদুপুরে ‘মিছিল-নগরী’তে নেমে কী পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ভেবে রীতিমতো দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায় তাঁদের।

Advertisement

তবে কয়েক ঘণ্টা বাদে যে কলকাতাটা তাঁরা দেখলেন, তাতে সেই আশঙ্কা অতটা ধোপে টিকল না। ট্যাক্সি ধরে সদর স্ট্রিটের হোটেলে পৌঁছতে বরং সময় লাগল অন্য দিনের থেকে কিছুটা কম। রাস্তা ফাঁকা, যানজটের ঝামেলা নেই। সপ্তাহের গোড়ায় কেজো দিনের কলকাতার ছবির সঙ্গে যা মিলল না।

‘কর্মনাশা বন্‌ধের সংস্কৃতি মানি না’, বলে খোদ শাসক দলের তর্জন-গর্জনের পরেও কলকাতার দৃশ্যপটের এটাই নির্যাস। রাস্তায় বড়সড় গোলমাল হোক না হোক, রাজপথে পর্যাপ্ত গাড়ি থাকুক না থাকুক, বন্‌ধের জুজু যে এ শহরের আম-নাগরিকের মজ্জায় ঢুকে গিয়েছে, কার্যত সেটাই দেখিয়ে দিল এ দিনের কলকাতা। সরকারি কর্মচারীরা হাজিরায় নাম তোলার তাড়নায় অফিসে এসেছিলেন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়া ১১টার মধ্যে নবান্নে ঢুকে পড়েন। নবান্ন ছাড়াও অন্য রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারি অফিসগুলোতেও ভালই ভিড়। তবুও বাসমালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের কর্তাদের হিসেব, অন্য দিনের তুলনায় কম লোক পথে নেমেছিল শহরে। পরিবহণ দফতরের কর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, শহর সচল রাখতে বাড়তি ৪০০ বাস পথে নামবে। কিন্তু দুপুরের দিকে বাস-মালিকদের একটি সংগঠনের কর্তা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বাড়তি বাস পথে নামলেও সে-ভাবে লোক হয়নি। ফলে দুপুরের দিকে অনেকেই পেট্রোলের দাম গচ্চা দিয়ে বাস চালাতে রজি হননি।’’ এর ফলে, বিকেলের অফিস টাইমে দেখা যায় গুটিকয়েক বাসে বাদুড়ঝোলা ভিড়। মাঝেরহাট সেতুভঙ্গের পরে হাইড রোডের মতো কয়েকটি রাস্তায় ইদানীং নাগাড়ে যানজট চলছে। বন্‌ধের দিনও অবশ্য তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ ছাড়া, বিকেলে ধর্মতলায় তৃণমূলের সভা উপলক্ষে মিছিলের সৌজন্যে শিয়ালদহ, বেলেঘাটা, মৌলালি-সহ মধ্য কলকাতার কিছু অংশেও যান চলাচল মন্থর ছিল।

Advertisement

তবে বন্‌ধ উপলক্ষে শহরের রাস্তায় ভিড় যেমন হয়নি, তেমনই বড়সড় অশান্তির ঘটনাও ছাপ ফেলতে পারেনি। বড়বাজারে, পার্ক সার্কাসে এলাকার দাপুটে বন্‌ধ সমর্থক নেতাদের দৌলতে জবরদস্তি দোকান বন্ধ করার অভিযোগ এসেছে। হাজরা মোড়, ডোরিনা ক্রসিং, পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়, তারামণ্ডলের কাছ থেকে ৯৯ জন বন্‌ধ সমর্থককে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। সকালে মৌলালি থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট পর্যন্ত পথে নেমেছিলেন বামেরা। হাজরা মোড়, ধর্মতলায় ছিল কংগ্রেসের কর্মসূচি। যাদবপুরে রেল অবরোধ করেন বামেরা। কলাপাতা ফেলে মথুরাপুরে রেললাইন অবরোধের জেরে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় সকালের দিকে ঘণ্টা দুই রেল চলাচল বিঘ্নিত হয়। দক্ষিণ বারাসতে অবরোধের জেরেও রেল চলাচল ধাক্কা খেয়েছে।

হাওড়াতেও দু’টি জায়গায় বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দাশনগরের শানপুর মোড়ে হাওড়াগামী একটি বেসরকারি বাস বাম-কংগ্রেসের অবরোধের ‘শিকার’ হয় বলে অভিযোগ। ওই তল্লাটে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের

ধস্তাধস্তিও হয়। সেখানে দু’জন সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মধ্য হাওড়ার ফাঁসিতলাতেও কংগ্রেস কর্মীরা একটি বেসরকারি বাসে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। পুলিশ সেখান থেকে দু’জন কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করে। তবে বন্‌ধের তেমন প্রভাব হাওড়া শহরে পড়েনি। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও কম লোক পথে নেমেছিল। দাশনগর শহর শিল্প এলাকায় কর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল স্বাভাবিক। দাশনগর এলাকার কাপড় কল দু’টিতেও উৎপাদন ছিল স্বাভাবিক। হাওড়ার বঙ্গবাসীর মোড়ে আবার দেখা গিয়েছে, বন্‌ধের দিনে পথে নামা বাসচালকদের মিষ্টি বিলি করছেন বিজেপি কর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন