কাঁথি পুরসভাকে নবান্নের চিঠি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বাড়ির কর (হোল্ডিং ট্যাক্স) নিয়ে খামখেয়ালি, নাগরিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার-সহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাঁথি পুর কর্তৃপক্ষকে শো কজ় করল নবান্ন। তৃণমূল পরিচালিত ওই পুরসভা পরিচালনার সমালোচনা করে খোঁচা দিয়েছে বিজেপি।
সম্প্রতি রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর চিঠি দিয়েছে কাঁথি পুর কর্তৃপক্ষকে। কেন বর্তমান পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফিরহাদ হাকিমের দফতরের ওই পদক্ষেপ ঘিরে রাজনৈতিক শোরগোল শুভেন্দু অধিকারীর শহরে।
পুরসভা সূত্রে খবর, ওই পদক্ষেপের নেপথ্যে রয়েছে কাঁথি শহরবাসীর গণস্বাক্ষর সংবলিত একটি দীর্ঘ অভিযোগপত্র। নাগরিকদের মূল অভিযোগের তির পুরসভার চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরির দিকে। অভিযোগ, কোনও আলোচনা কিংবা যুক্তি ছাড়া অস্বাভাবিক হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। শুধু আর্থিক বোঝাই নয়, পুর পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ করা হয়। বলা হয়েছে, কোনও সমস্যা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ কিংবা কথা বলতে গেলে অযথা হয়রানি হতে হয়। অপমানিত হতে হয়। দুর্ব্যবহার করা হয় তাঁদের সঙ্গে। যার প্রেক্ষিতে শো কজ় নোটিসে বলা হয়েছে, রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া— প্রতিটি ক্ষেত্রেই বর্তমান পুরবোর্ড চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। শহরের নর্দমা সাফাই না-হওয়ায় দুর্গন্ধ, মশার উপদ্রবে জেরবার বাসিন্দারা। এমনকি, পথবাতি বিকল হয়ে শহরের মোড়গুলো অন্ধকারে ডুবে রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন শহরবাসী। নাগরিকদের প্রতি এই দায়বদ্ধতাহীনতা পুর আইনের পরিপন্থী। সাত দিনের মধ্যে এই ব্যর্থতার সন্তোষজনক উত্তর না-মিললে আইনি পথে কাঁথির বর্তমান পুরবোর্ড ভেঙে দিয়ে প্রশাসক বসানো হতে পারে বলেও চিঠিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
শো কজ় চিঠি পেয়ে স্বাভাবিক ভাবে অস্বস্তিতে পুরসভা তথা শাসকদলের নেতারা। তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান তরুণ মাইতি বলেন, “পুরসভা পরিচালনার সঙ্গে আমরা সরাসরি যুক্ত নই। চেয়ারম্যান নিশ্চয়ই শো কজ়ের জবাব দেবেন এবং আশা করি রাজ্য তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট হবে।” অন্য দিকে, এ নিয়ে আক্রমণাত্মক মেজাজে পদ্মশিবির। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অসীম মিশ্রের কটাক্ষ, “ছাপ্পা ভোটে জেতা এই পুর বোর্ড পরিষেবা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কাটমানির ভাগ ঠিকমতো না পৌঁছোনোর ফলেই হয়তো নিজেদের সরকার এখন শোকজ করছে।”
উল্লেখ্য, প্রায় ৪ দশক পরে কাঁথি পুরসভায় ক্ষমতার ভরকেন্দ্র বদলেছে। অধিকারী পরিবারের একচ্ছত্র দাপট সরে গিয়ে ওই পুরসভার চেয়ারম্যান হয়েছেন অখিল-পুত্র। প্রায় ২৫ বছর ওই পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ শিশির অধিকারী। তার পরে তাঁর দুই পুত্র, বর্তমান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এবং বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। এখন তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৃণমূল সরকারের শো কজ় কাঁথির রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করল।