সুরজকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
রাত বারোটা থেকে একটা। এই এক ঘণ্টায় পার্ক স্ট্রিটের এক নাইট ক্লাবে গিয়ে বিমানসেবিকা ক্লারা আকণ্ঠ মদ্যপান করেছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে পুলিশ। এক ধরনের নয়, ওইটুকু সময়ের মধ্যে তিন-চার ধরনের মদ খেয়েছিলেন ক্লারা এবং তাঁর দুই বন্ধু। সেটা ছিল মঙ্গলবার, স্বাধীনতা দিবসের মাঝরাত। আর বুধবার ভোরে কেষ্টপুরে তাঁরই ফ্ল্যাটের সামনে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ইন্ডিগোর ওই বিমানসেবিকা ক্লারা বংশরাই খোঙসিটকে (২৩)।
বুধবার রাতেই ময়না-তদন্তের পরে তাঁর ভাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ক্লারার দেহ। খবর পেয়ে কলকাতায় আসেন ক্লারার মা-ও। বৃহস্পতিবার দুপুর একটায় ইন্ডিগোর উড়ানে ক্লারার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় গুয়াহাটিতে। সেখান থেকে সড়ক পথে শিলং গিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তাঁর। ক্লারার মামা লিও খোঙসিট এ দিন জানিয়েছেন, ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট জেনে সিদ্ধান্ত নেবেন, পুলিশে অভিযোগ জানাবেন কি না। তাঁদের সন্দেহ, ক্লারার মৃত্যুর পিছনে কারও হাত রয়েছে। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘খুব কম ছুটি নিত ক্লারা। গত ২ অগস্ট শেষ বার শিলঙের বাড়িতে এসেছিল ও। শান্ত স্বভাবের মেয়ে।’’
এ দিকে পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত দশটার পরে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় নামেন ক্লারা। বিমানবন্দরে পোশাক পাল্টে সোজা যান পার্ক স্ট্রিটের নাইট ক্লাবে। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন দুই বন্ধু সুরজ সুতোদিয়া এবং ইবলিম ননগ্রাম। সুরজের বাড়ি অসমে এবং ইবলিম শিলঙের মেয়ে। পুলিশ জানিয়েছে, ইবলিমও বিমানসেবিকা। তিনি অন্য একটি সংস্থায় কর্মরত। সুরজও মাস খানেক আগে ইবলিমের সংস্থায় কাজ করতেন। তিনি সে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশকে।
১৫ অগস্ট ছিল ইবলিমের জন্মদিন। এক তদন্তকারীর দাবি, ‘‘ছোট ছোট গ্লাসে ৬০ থেকে ৯০ মিলিলিটার মদ নিয়ে এক ঢোকে তা গলাধঃকরণ করেছিলেন ওঁরা।’’ সে দিন নাইট ক্লাবে ক্লারা তিন চার বার বিভিন্ন মদ জল ছাড়াই খেয়েছিলেন বলে জেনেছে পুলিশ। রাত একটা নাগাদ নাইট ক্লাব থেকে বেরিয়ে তাঁরা অ্যাপ-ক্যাব ধরে কেষ্টপুরে আসেন। ফ্ল্যাটে ফিরে তাঁরা আবার মদ্যপান করেছিলেন কি না এবং সেখানে আর কেউ উপস্থিত ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশের দাবি, ফ্ল্যাটে ফেরার পরে ক্লারা আর সুরজ একই ঘরে ছিলেন। ইবলিম ছিলেন অন্য ঘরে। যে ঘরে ক্লারা ছিলেন সেই ঘরের খাট থেকে খোলা জানলার দূরত্ব ছিল বড়জোর তিন-চার ফুট। তদন্তকারীদের ধারণা, ভোরে বেসামাল অবস্থায় খাট থেকে নেমে জানলার কাছে গিয়ে অসাবধানতা বশত সেখান থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান ক্লারা।
এই ঘটনায় এখনও কেউ অভিযোগ জানাননি। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ পেলে যতটা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত হতো, এ ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে। এ কারণে বুধবার এক বার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের দল ঘটনাস্থল ঘুরে যাওয়ার পরে আবার বৃহস্পতিবার ফরেন্সিকের দল সুরজকে নিয়ে যায় ক্লারার ফ্ল্যাটে। উপর থেকে বালিশ ফেলে তাঁরা দেখেন কী ভাবে দেহটি নীচে পড়েছে। এ দিন বিকেলে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়ে পুলিশ জানিয়েছে, উপর থেকে পড়েই মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর। তবে পুলিশের মতে, শুধু ময়না-তদন্ত নয়, ফরেন্সিক রিপোর্টও এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওই দু’টি রিপোর্ট এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।