কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের সাবওয়েতে জমা জল পেরিয়েই যাতায়াত। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা মেট্রোয় পরিষেবার খামতি নিয়ে বারবারই অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু মেট্রোর পরিকাঠামোর দশাও যে একেবারেই বেহাল, তা আবার প্রমাণ করে দিল গত দু’দিনের বৃষ্টি। কোথাও সাবওয়েতে জল ভেঙে যেতে হয়েছে যাত্রীদের, কিছু স্টেশনে আবার ছাদ থেকে জল গড়িয়ে গায়ে প়ড়ল গায়ে। উল্লেখ্য, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন হাল দেখা গিয়েছে তুলনামূলক ভাবে পরে তৈরি হওয়া স্টেশনগুলিতে।
এই বেহাল দশার পিছনে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবই যে মূলত দায়ী, তা মেনে নিয়েছে মেট্রোর একাধিক সূত্র। কোথাও আবার উঠে এসেছে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে মেট্রোর সঙ্গে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের টানাপড়েনের কথা। কিন্তু এই সমস্যার সুরাহা কী ভাবে হবে, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।
সোমবার সকালে অফিস যাওয়ার জন্য কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনে এসেছিলেন মাধবী বসু। দেখলেন, গোটা সাবওয়ে জল থইথই করছে। চটি হাতে নিয়ে সেই জল পেরিয়েই মেট্রো স্টেশনে ঢুকলেন তিনি। এ দিন দমদম স্টেশনে লিফটের সামনের চলমান সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাচ্ছিলেন সমীর ঘোষ। দেখলেন, মেঝে ভেসে যাচ্ছে জলে। একটু এগোতেই মাথার উপরে কয়েক ফোঁটা জল পড়ল তাঁর। উপরে তাকিয়ে দেখলেন, ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ছে।
শহরবাসীর ‘লাইফলাইন’ হওয়ার পাশাপাশি মেট্রো কলকাতার অন্যতম দর্শনীয়ও বটে। কলকাতা শহর দেখতে এসে ভিন্দেশি অনেকেই মেট্রোয় যাতায়াত করতে পছন্দ করেন। সেই মেট্রোর এমন হাল হবে কেন, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। পরিকাঠামোর এমন হাল হলে কি মান থাকবে রাজ্য এবং দেশের?
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, বৃষ্টি হলে টালিগঞ্জ থেকে কবি সুভাষের অংশেই সবচেয়ে বেশি জল পড়ে। নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশনেও শেড ফুটো। কমবেশি একই পরিস্থিতি কবি নজরুল, শহিদ ক্ষুদিরামের মতো স্টেশনগুলিতেও। ওই স্টেশনে শেড ফুটো হয়ে জল পড়লে গামলা পাততেও দেখা গিয়েছে মেট্রো কর্মীদের। প্রবীণ যাত্রীদের অনেকে বলছেন, মেট্রোর মেঝেতে পাথর বসানো। তাতে জল প়ড়লে পা পিছলে পড়ে বিপদ ঘটতে পারে। কোনও কোনও স্টেশনে মেঝেতে জল পড়ে থাকার ফলে চলমান সিঁড়ি বন্ধ করে রাখতে হয়। তা না হলে জল ঢুকে বিদ্যুৎ সংযোগে বিভ্রাট ঘটতে পারে।
কেন এমন দশা? মেট্রো সূত্রের খবর, নতুন স্টেশনের শেডগুলি ফাইবার শিটের। সেগুলি নিয়মিত এবং যথার্থ রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। গত কয়েক বছরে সেগুলি পুরনো হয়েছে। বদলানোর প্রয়োজন। কিন্তু তা না করে জল পড়লে কোনও রকমে জো়ড়াতালি দেওয়া হয়। মেরামতির প্রয়োজন দমদম স্টেশনেও। মেট্রোর এক কর্তা বলেন, ‘‘এমনিতেই আমাদের আয়ের থেকে ব্যয় বেশি। তাই এই সব মেরামতিতে বেশি খরচ করার উপায় নেই।’’ কবি সুভাষ স্টেশনের সাবওয়ে প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, নিউ গড়িয়া রেল স্টেশনের সঙ্গে মেট্রোর যোগাযোগ ওই সাবওয়ে দিয়ে। রেল স্টেশনের শে়ড ফুটো হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি হলেই সেখান থেকে হুড়মুড়িয়ে জল প়ড়ে সিঁড়ি বেয়ে সাবওয়েতে জমে যায়। সেই জল সরানোর জন্য একটি ছোট পাম্প বসানো হয়েছে। কিন্তু সেটা নেহাতই সাময়িক বন্দোবস্ত। মেট্রোর মুখপাত্র ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কবি সুভাষ স্টেশনে পরিদর্শনে যাওয়া হয়েছিল। জল জমে রেলের এলাকাতেই। এ ব্যাপারে আমরা ওদের চিঠি দিয়েছি।’’
শিয়ালদহ শাখার এক রেলকর্তা বলেন, ‘‘জমা জল সরানোর জন্য আপাতত ব্যবস্থা হয়েছে। শেডের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু মেরামতি নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’