ধৃত দীপক সিংহ
দু’জনে বসে মদ্যপান করছিল। সেই সময়ে কোন ফাঁকে মদের গ্লাসে তার সঙ্গী বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে, সেটা বোঝেনি রোশনলাল বরদিয়া। কালীঘাটে জৈন দম্পতিকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত রোশনলালকে ওই ভাবেই বিষ দিয়ে খুন করা হয় বলে জেনেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, কালীঘাটে জৈন দম্পতির উপরে হামলার ঘটনায় রোশনের সঙ্গী দীপক সিংহই তাকে কৌশলে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে। মঙ্গলবার রাতে দীপককে দফায় দফায় জেরা করে গোটা বিষয়টি জানা গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
ডিসি (সাউথ) প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘রোশনলাল বরদিয়াকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে দীপক।’’ রবিবার সকালে হাওড়ার রোজমেরি লেনের একটি গেস্ট হাউসের ঘরে রোশনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তার কিছুক্ষণ আগেই ওই গেস্ট হাউস ছেড়ে বেরিয়ে যায় দীপক। সোমবার সকালে দিল্লিতে স্থানীয় রেলপুলিশ পূর্বা এক্সপ্রেস থেকে দীপককে পাকড়াও করে। পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় কালী টেম্পল রোডের একটি বহুতল আবাসনের ফ্ল্যাটে নরেন্দ্র ও সরলা জৈনের উপরে ভোজালি নিয়ে হামলা চালায় দীপক ও রোশন। তার পরে রাতে তারা হাওড়ার গেস্ট হাউসে ওঠে।
কিন্তু কেন রোশনলালকে খুন করল দীপক?
তদন্তকারীরা জানান, এর পিছনেও সেই টাকা নিয়েই গণ্ডগোল। দূর সম্পর্কের আত্মীয় নরেন্দ্র জৈনের কাছে পাওনা টাকা দীর্ঘ দিন ধরে আদায় করতে না পেরে গোটা পরিবারকেই খুনের ছক কষে রোশনলাল। নরেন্দ্র ও সরলা জৈনের এক কন্যা আছেন, তিনি স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। জৈনদের তিন জনকে খুন করতে দীপক সিংহকে রোশনলাল ভাড়াটে খুনি হিসেবে নিয়োগ করে। রোশনলাল বলেছিল, তিন জনকে শেষ করে দিতে পারলে দীপককে সে পাঁচ লক্ষ টাকা দেবে। কিন্তু পরে রোশনলাল বেঁকে বসে। কারণ, তার বক্তব্য ছিল, জৈন দম্পতিকে মেরে ফেলা যায়নি, তাঁদের মেয়েও বেঁচে গিয়েছে। দীপককে জেরা করে এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
যদিও জৈন দম্পতির উপরে দীপক প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছিল। এমনকী, ভোজালির এক কোপে সে সরলাদেবীর বাঁ হাত কব্জি থেকে কেটে ফেলে। তবে জৈন দম্পতির কলেজপড়ুয়া মেয়েকে তারা কব্জা করতে পারেনি। বরং, তিনিই মা-বাবার চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে কালীঘাট থানায় খবর দেন। পরিকল্পনা ভেস্তে যায় রোশনলালের।
পুলিশ জেনেছে, মাস খানেক আগে শহরের একটি পানশালায় রোশনলালের সঙ্গে দীপকের আলাপ হয়। বছর দুয়েক আগে নিজের বৌদিকে খুনের অভিযোগে মাস ছয়েক জেল খেটেছিল দীপক। রোশন ভাবে, দীপকই তার পরিকল্পনা কার্যকর করতে পারবে। হামলার প্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার রাতে জৈন দম্পতির বাড়ির আশপাশে দু’জন ঘুরেও গিয়েছিল।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, হাওড়ার গেস্ট হাউসে উঠে দীপককে রোশনলাল সাফ বলে দেয়, জৈন পরিবারকে শেষ করে দেওয়া যায়নি, ফলে সে টাকা দেবে না। এই নিয়ে দু’জনের একপ্রস্ত বচসা হয়। তার পরে দু’জনে মদ্যপান শুরু করে গেস্ট হাউসের ঘরে। টাকা পাবে না বুঝতে পেরে রোশনের মদের গ্লাসে এক ফাঁকে বিষ মিশিয়ে দেয় দীপক।
এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘টাকা না পাওয়ার ব্যাপার তো আছেই, সেই সঙ্গে দীপক বুঝেছিল, রোশন বেঁচে থাকলে সেও ধরা পড়বে। সেই জন্যই রোশনকে সরিয়ে দিয়েছিল।’’
জৈন দম্পতির উপরে হামলার মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে দীপককে কালীঘাট থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বুধবার দীপককে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আবার হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট সূত্রের খবর, রোশনলাল বরদিয়ার রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় গোলাবাড়ি থানায় এ বার খুনের মামলা রুজু করা হবে। সেই মামলাতেও অভিযুক্ত দীপক সিংহ। তাকে হেফাজতে পেতে আদালতে আবেদন জানাবে গোলাবাড়ি থানার পুলিশ।