কাটল ধর্মসঙ্কট, স্ত্রীর দেখানো পথে নির্বেদও

কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মালা রায়ের স্বামী নির্বেদ রায়ের বিগত মাসখানেক কেটেছে মানসিক দোটানায়। পুরভোটের মুখে কট্টর তৃণমূল-বিরোধী মালার দল বদলের জেরে নির্বেদ ব্রাত্যই থেকেছেন কংগ্রেসে। ডাক পাননি কোনও সভায়। উল্টে কংগ্রেসের নেতা-বন্ধুদের কাছে কটাক্ষ শুনেছেন। অথচ আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ না দেওয়ায় স্ত্রীর প্রচার-মিছিলে সঙ্গ দিতেও ‘সঙ্কোচ’ হয়েছে নির্বেদের। শুধু মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনটায় স্ত্রীর পাশে ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৩
Share:

পুরভোটের প্রচারে মমতার সঙ্গে নির্বেদ রায়। শুক্রবার সত্যনারায়ণ পার্কের সভায়। ছবি: দেবাশিস রায়।

রাজনৈতিক ধর্ম না সহধর্মিণী— কোন পথে যাবেন, এই দোলাচলেই থমকে ছিলেন কিছু দিন। না পারছিলেন পুরনো মেজাজে শাসকের বিরোধিতা করতে। না পারছিলেন স্ত্রীর পদাঙ্কে নিজেকে মেলে ধরতে!

Advertisement

কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মালা রায়ের স্বামী নির্বেদ রায়ের বিগত মাসখানেক কেটেছে মানসিক দোটানায়। পুরভোটের মুখে কট্টর তৃণমূল-বিরোধী মালার দল বদলের জেরে নির্বেদ ব্রাত্যই থেকেছেন কংগ্রেসে। ডাক পাননি কোনও সভায়। উল্টে কংগ্রেসের নেতা-বন্ধুদের কাছে কটাক্ষ শুনেছেন। অথচ আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ না দেওয়ায় স্ত্রীর প্রচার-মিছিলে সঙ্গ দিতেও ‘সঙ্কোচ’ হয়েছে নির্বেদের। শুধু মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনটায় স্ত্রীর পাশে ছিলেন। পুরভোটের উত্তাপেও বাকি সময়টা নির্বেদ নিজেকে ব্যস্ত রাখছিলেন লেখালেখি আর প্রকাশনার কাজে। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পুরভোট মিটলে দল বদলানোর। শেষ পর্যন্ত দোটানার দিন শেষে শুক্রবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে উঠে পড়লেন নির্বেদ। টিভি চ্যানেলের বিতর্কে কট্টর তৃণমূল-বিরোধিতার জন্য যাঁর সঙ্গে অরুণাভ ঘোষের জুটিকে ‘টেলি কংগ্রেস’ তকমা দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল!

বড়বাজারের সত্যনারায়ণ পার্কে মমতার নির্বাচনী সভামঞ্চে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে স্ত্রীর মতোই নির্বেদও কাঠগড়ায় তুললেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে। বললেন, ‘‘বৃহস্পতিবার আমার বাড়ির সামনে কংগ্রেসের বন্ধুরা সভা করে বুঝিয়ে দিলেন, আমার থেকে দুর্নীতিপরায়ণ আর কেউ নেই কংগ্রেসে। তাঁদের কাছে এ ভাবে অপমানিত হয়ে আমি কৃতজ্ঞ! তৃণমূলের কাছে আমার ঋণ শোধ করার তাগিদটা বেশি করে অনুভব করলাম।’’ বস্তুত, তৃণমূলে ফিরে গিয়ে ‘ঋণ’ শোধ করতে চান নির্বেদ।

Advertisement

তৃণমূলের জন্ম থেকে সঙ্গে থাকা নির্বেদকে বিধায়ক করেছিলেন মমতা। সেই ‘ঋণ’ই শোধ করতে চান এখন। সেই সুযোগও খানিকটা আচমকাই তাঁর বাড়িতে হাজির হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে। রায়-বাড়িতে যান রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ হাজির হয়েছিলেন মমতার দূত ফিরহাদ হাকিম। ফোনে মমতার সঙ্গেও কথা হয় নির্বেদের। মমতা নির্বেদকে অনুরোধ করেন শুক্রবার বিকেলে সত্যনারায়ণ পার্কের সভায় তাঁর উপস্থিতিতেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো এ দিন ফিরহাদের সঙ্গেই সভায় হাজির হন নির্বেদ। সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতার বিদায়ী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে মমতার পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন নির্বেদ। মমতা তাঁকে দলে স্বাগত জানানো ছাড়া অবশ্য আর বিশেষ বাক্যব্যয় করেননি!

বিগত এক দশক সভায়-টেলিভিশনে কংগ্রেসের হয়ে তৃণমূলকে তুলোধোনা করে যাওয়ার পরেও অধীরের সভাপতিত্বে তাঁরা চরম অপমানিত হয়ে দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে রায়-দম্পতির অভিযোগ। নির্বেদের কথায়, ‘‘আমি ভাল সম্পর্ক রাখতে চাইলেও অধীর বা কংগ্রেসের কোনও নেতা, এমনকী, কোনও প্রার্থী এক বারের জন্যও প্রচারে যাওয়ার অনুরোধ করল না!’’ কংগ্রেসে নিজেকে ‘অপাংক্তেয়’ মনে হচ্ছিল নির্বেদের। তাই মমতার ডাক না ফিরিয়ে ফিরে গেলেন পুরনো তৃণমূলেই।

এই সে দিন পর্যন্ত কড়া সমালোচক মালার পরে তাঁর স্বামীকেও সাদরে মমতা এ ভাবে দলে বরণ করে নেওয়ায় তৃণমূলের একাংশে গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। প্রদেশ সভাপতি অবশ্য জানিয়েই দিয়েছেন, যাঁরা দল ছাড়ছেন, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নিজেদের তাগিদেই।

এত দিন পুরপ্রচারে গুটিয়ে রাখার পরে নির্বেদ এ বার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তৃণমূলের হয়ে পথে নামার। নির্বেদ বলছেন, ‘‘এ বার তো আর কোনও বাধা থাকল না! অন্তত একটা সভা তো করবই মালার হয়ে। না হলে যে ধর্মসঙ্কটে পড়ে যাব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন