নিজের বন্দুকের গুলিতেই মৃত্যু পুলিশের

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘ঘটনাটিকে এখনই আত্মহত্যা বলা যাবে না। এটি দু‌র্ঘটনাও হতে পারে।’’ তদন্তকারীরা জানান, ওই ব্যক্তির লেখা কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৩
Share:

সাক্ষী: পড়ে রয়েছে মৃত কনস্টেবল ভৈরব ওঁরাওয়ের টুপি। শুক্রবার, ফুলবাগান থানায়। ছবি: শৌভিক দে

আচমকা গুলির শব্দে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন থানার পুলি‌শকর্মীরা। সকলে বেরিয়ে এসে দেখলেন, থানায় ঢোকার মুখে কর্তব্যরত সেপাই রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন। পাশে পড়ে তাঁর বন্দুকটি। রক্ত ছিটকে লেগেছে ওই গুমটির কংক্রিটের ছাউনিতে। তড়িঘড়ি ওই কনস্টেবলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওই ব্যক্তির থুতনির নীচ দিয়ে গুলি ঢুকে মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে ফুলবাগান থানায়। পুলিশ জানায়, কর্তব্যরত ওই মৃত কনস্টেবলের নাম ভৈরব ওঁরাও (৫৩)। এ দিন তাঁর দেহ নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। খবর পেয়ে আসেন কলকাতা পুলি‌শের কমিশনার রাজীব কুমার, ডেপুটি কমিশনার (ইএসডি) দেবস্মিতা দাস-সহ অন্য আধিকারিকেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, ভৈরবের পরিবারের লোকজন আসার পরে আজ, শনিবার ময়না-তদন্ত করা হবে।

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘ঘটনাটিকে এখনই আত্মহত্যা বলা যাবে না। এটি দু‌র্ঘটনাও হতে পারে।’’ তদন্তকারীরা জানান, ওই ব্যক্তির লেখা কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। তবে থ্রি-নট-থ্রি বন্দুকটির ভুল ব্যবহারের ফলে গুলি ছিটকে বেরিয়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ২০১৭ সালের মে মাসে ফুলবাগান থানায় কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন ওই কনস্টেবল। তার আগে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও ডগ স্কোয়াডে ছিলেন তিনি। পূর্ব বর্ধমানের কালনা থানার বৈদ্যপুর রথতলার বাসিন্দা ভৈরব থানার ব্যারাকেই থাকতেন। বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি পায়ের সমস্যায় ভুগছিলেন। এমনিতে কম কথা বললেও কয়েক জন সহকর্মীকে ভৈরব সেই সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন বলেও এ দিন জেনেছেন তদন্তকারীরা। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ঘটনার সময়ে ওঁর পাশে এক জন পুলিশকর্মী ছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করে কিছু জানা যায় কি না, দেখতে হবে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতের ডিউটি করার পরে এ দিন দুপুর ১২টা থেকে ভৈরব ফের থানার গেটে সেপাইয়ের ডিউটি শুরু করেন। দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ তিনি গুমটির মধ্যেই ছিলেন। পাশে কাঠের বেঞ্চে বসে ছিলেন এক জন এএসআই। এ ছাড়া, আরও কয়েক জন পুলিশকর্মী এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন। আচমকাই গুলির শব্দ পেয়ে সকলে গুমটির সামনে এসে দেখেন, চার দিকে রক্ত। মাটিতে পড়ে রয়েছেন ভৈরব। থুতনির বাঁ দিকের নীচ দিয়ে গুলি ঢুকে মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। তাঁর টুপি ছিটকে পড়েছে পাশের বেঞ্চে। তখনই তাঁকে এনআরএসে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেপাইয়ের গুমটির ছাউনি থেকে রাস্তা— সব জল ঢেলে ভাল ভাবে সাফ করা হয়েছে। তবে বেঞ্চে পড়ে রয়েছে ওই কনস্টেবলের ফুটো হয়ে যাওয়া টুপি। মাটিতে মাথার খুলি, ঘিলুর কিছু অংশ। এ দিন সুপ্রতিমবাবু আরও বলেন, ‘‘ছুটি চাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছিল বলে জানা নেই। এমন কোনও অভিযোগও তাঁর সহকর্মী কিংবা পরিবারের তরফে এখনও পাইনি। যদি আসে, নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখা হবে।’’ পাশাপাশি, থানার ওই জায়গায় সিসি ক্যামেরা ছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন