হেরিটেজ তুমি কার, কমিটি না কমিশনের

শহরের হেরিটেজ ভবন চিহ্নিতকরণ ও তা ঘোষণার কাজটা কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটিই করে থাকে। যদিও সেই কমিটির কাজের ধারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০২:২০
Share:

ওল্ড কেনিলওয়ার্থ হোটেল

ঐতিহ্যেও এলাকা ভাগ! আর তাতেই ঐতিহ্য কতটা সুরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন!

Advertisement

শহরের হেরিটেজ ভবন চিহ্নিতকরণ ও তা ঘোষণার কাজটা কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটিই করে থাকে। যদিও সেই কমিটির কাজের ধারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে। সম্প্রতি এক সাবেক হোটেল ভাঙার ঘটনা সেই বিতর্ক ফের উস্কে দিয়েছে। পুরসভার ঘোষিত কোনও হেরিটেজ ভবনের গ্রেড নির্ধারণে অসঙ্গতি থাকলেও রাজ্য হেরিটেজ কমিশন কেন তাতে মাথা ঘামাবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন হেরিটেজ স্থপতিদের একাংশ।

কমিশন জানাচ্ছে, আদালত নির্দেশ না দিলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কমিশন এ ব্যাপারে কিছু করতে পারে না। কারণ, শহরে কোনও ভবনকে হেরিটেজ ঘোষণার কাজটা পুরসভার হেরিটেজ কমিটিই করে। কমিশন সে ব্যাপারে সচরাচর মাথা ঘামায় না। আর তাতেই ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে ‘আমরা-ওরা’র দ্বন্দ্ব চলে আসছে বলে মনে করছেন হেরিটেজ স্থপতিদের একাংশ।

Advertisement

সম্প্রতি বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা লিটল রাসেল স্ট্রিটের ‘ওল্ড কেনিলওয়ার্থ হোটেল’ ২০০৯ সালে পুরসভার হেরিটেজ তালিকা অনুযায়ী ‘গ্রেড টু এ’ ছিল। যা কোনও ভাবেই ভাঙা যাবে না। কিন্তু একটি আবেদনের প্রেক্ষিতেই হেরিটেজ কমিটি ২২৫ বছরের পুরনো ওই হোটেলকে ‘গ্রেড থ্রি’ করে দিয়েছে। কীসের ভিত্তিতে এই বদল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এখানেই চলে এসেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের ভূমিকা। বাগবাজারে ভগিনী নিবেদিতার বাড়ির সংস্কারে যুক্ত হেরিটেজ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রি গুহ বলেন, ‘‘আইনগত কারণে পুরসভার ঘোষিত কোনও হেরিটেজ ভবনের ক্ষেত্রে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন মাথা ঘামায় না। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন ক্ষেত্রে একটা জনশুনানির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়। না হলে শহরের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলার ধারাবাহিকতা চলবেই।’’ অন্য এক হেরিটেজ স্থপতির কথায়, ‘‘আইনি ধোঁয়াশার দিক মাথায় রেখেও বলতে হয়, পুর হেরিটেজ কমিটির ঘোষিত গ্রেডে যদি কোনও অসঙ্গতি থাকে, তা হলে কমিশনের তা বলা উচিত।’’ যদিও হেরিটেজ কমিশনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শহরে হেরিটেজ ঘোষণার কাজটা পুরসভাই করে থাকে। আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু করতে পারি না। কোনও মামলার প্রেক্ষিতে কোর্ট নির্দেশ দিলে বা মুখ্যমন্ত্রীর দফতর আমাদের মতামত চাইলে তবেই আমরা এ ব্যাপারে মাথা ঘামাতে পারি।’’

পুর হেরিটেজ কমিটির সদস্যদের একাংশের আরও বক্তব্য, খিদিরপুরে কবি মাইকেল মধুসূদনের বাড়ির ক্ষেত্রে আদালত রাজ্য হেরিটেজ কমিশনকে মতামত দিতে বলেছিল। মতামত দিলেও ওই বাড়ির গ্রেড কী হবে, সে ব্যাপারে কমিশন পুরসভার হেরিটেজ কমিটির কোর্টেই বল ঠেলে দিয়েছিল। সে প্রসঙ্গ মনে করিয়ে হেরিটেজ কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘হেরিটেজ কমিশন সারা রাজ্য জুড়েই কাজ করে। অথচ দেখা যায়, গ্রেডেশনের দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হয়! বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যখন কোনও রদবদল করা হয়, তা নিয়ে হইচই হয়।’’ হেরিটেজ ভবন সংক্রান্ত পুরসভার বর্তমান যে তালিকা রয়েছে, সেটি পূর্ণাঙ্গ ভাবে প্রকাশ করা হয় বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মেয়র থাকাকালীন। যদিও শহরের হেরিটেজ ভবন চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘বাম আমলে গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল নিয়ে শোরগোল হয়েছিল। আমরা কিন্তু বাইরে কোনও পরিবর্তন হতে দিইনি। এখন তো ঐতিহ্যশালী ভবন পুরোটাই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। প্রোমোটারদের উৎসাহ দিতেই এ সব করা হচ্ছে।’’ এ ব্যাপারে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন