corona virus

ক্যানসার অস্ত্রোপচারের সম্মতি এল ভিডিয়ো কলে

শহরের একাধিক চিকিৎসক বলছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে ক্যানসার রোগীদের পাশে এ ভাবেই থাকা উচিত  সকলের। তবেই ক্যানসারকে মহামারি হওয়া থেকে রোখা সম্ভব।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২০ ০৩:১৫
Share:

অস্ত্রোপচারের পরে হাসপাতালে প্রত্যয়। নিজস্ব চিত্র

অসমের ডিগবয় থেকে কলকাতার প্রকৃত দূরত্ব কত? সড়কপথে প্রায় ১৫১০ কিলোমিটার। তবে, মনের সেই দূরত্ব মেটাতে ভরসা হলেন চিকিৎসক এবং ভিডিয়ো কল। সন্তানের জিভের ক্যানসার ধরা পড়েছে খবর পেয়েও লকডাউনের মধ্যে কলকাতায় আসতে পারেননি অসহায় মা-বাবা। এ জন্য অবশ্য আটকে থাকেনি তাঁদের ছেলের অস্ত্রোপচার। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককেই অভিভাবক মেনে সব দায়িত্ব সঁপেছিলেন তাঁরা। ভিডিয়ো কল করে ছেলের অস্ত্রোপচারে বাবা-মায়ের সম্মতি নিয়ে চিকিৎসা শুরু হয় বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে। যা শুনে শহরের একাধিক চিকিৎসক বলছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে ক্যানসার রোগীদের পাশে এ ভাবেই থাকা উচিত সকলের। তবেই ক্যানসারকে মহামারি হওয়া থেকে রোখা সম্ভব।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার তিন ঘণ্টা ধরে ওই রোগীর জিভের অস্ত্রোপচার হয়।আপাতত সুস্থ হওয়ার পথে প্রত্যয় চৌধুরী নামে বছর পঁচিশের ওই যুবক। রাইল্‌স টিউব দিয়ে তাঁকে খাওয়ানো হচ্ছে।

কর্মসূত্রে বাগবাজারে থাকেন প্রত্যয়। ফেব্রুয়ারি থেকেই তাঁর জিভে মাংস বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়েও বিশেষ ফল মিলছিল না। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে যায় লকডাউন। দূরে আটকে থাকা উদ্বিগ্ন বাবা-মা প্রশান্ত এবং সঙ্গীতা চৌধুরী ভিডিয়ো কল করে ছেলের জিভের ক্ষতস্থান দেখে দ্রুত এক আত্মীয়ের পরামর্শ নেন। তিনিই ক্যানসার চিকিৎসক শান্তনু পাঁজার কাছে পাঠান প্রত্যয়কে। বাগবাজার থেকে বাইপাসের অ্যাপোলো গ্লেনেগ্‌লস হাসপাতালে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যান ওই যুবক।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার বর্ষপূর্তি নীরবেই পার

আরও পড়ুন: করোনা-ভয়ে মেডিক্যালে রোগী ‘হয়রানি’ চলছেই

বায়োপ্সির অপেক্ষা না করে প্রথমে রোগীর ফ্রোজ়েন সেকশন করা হয়। তার মাধ্যমে শান্তনুবাবু জানতে পারেন, প্রত্যয়ের জিভের বাঁ দিকে ক্যানসার ছড়িয়েছে। অ্যানাস্থেশিয়ার মাধ্যমে ওই জায়গার টিসু নিয়ে পরীক্ষা করে জানা যায়, দ্রুত অস্ত্রোপচার জরুরি। ওই একই অ্যানাস্থেশিয়ায় শান্তনুবাবুর নেতৃত্বে চিকিৎসকেরা প্রত্যয়ের জিভের টিউমার এবং গলার গ্রন্থির কিছু অংশ বাদ দেন। শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘মুখ বা জিভের ক্যানসার গলার গ্রন্থিতে ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। সে জন্য ওই অংশও বাদ দেওয়া হয়েছে। আপাতত রাইল‌্‌স টিউবে সপ্তাহখানেক খাবেন রোগী। ধীরে ধীরে খাওয়া এবং কথা বলা স্বাভাবিক হবে।’’

ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই ধরনের রোগের চিকিৎসায় পরিবারের পাশে থাকা জরুরি। সেখানে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে পরিবারের সম্মতি নিয়ে দ্রুত চিকিৎসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত। কারণ, সব কিছু নিয়ম মেনে করতে গেলে চিকিৎসক তাঁর সেরাটা রোগীকে দিতে পারেন না। পাশাপাশি এমন কঠিন সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় আর্থিক দিকটি মানবিকতার সঙ্গে বিবেচনা করা হোক।’’ আর প্রত্যয়ের বাবা প্রশান্তবাবু বলছেন, ‘‘এমন কঠিন পরিস্থিতিতে যে অস্ত্রোপচারটুকু হয়েছে, তাতে খানিকটা হলেও স্বস্তি পেয়েছি। ছেলে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারলে আরও শান্তি পাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন