Coronavirus

বিপদ বাড়িয়ে সংক্রামক রোগের শীর্ষে করোনা

এমনিতে প্রাণীদেহ থেকে মানুষের শরীরে আসা রোগের সংখ্যা (জুনোটিক) আগের চেয়ে বহু গুণ বেড়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৪০
Share:

ছবি এএফপি।

করোনাভাইরাস কি এই মুহূর্তে সভ্যতার সব চেয়ে বড় বিপদ? কোভিড-১৯ সংক্রমণের মধ্যে উত্তর খোঁজা চলছে এই প্রশ্নের। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ‘প্রায়োরিটি ডিজ়িজেস’-এর তালিকায় দেখা যাচ্ছে, তিনটি সংক্রামক রোগের উৎসই হল করোনাভাইরাস, অর্থাৎ তার একাধিক প্রজাতি। হঠাৎ করে করোনাভাইরাসের এই আগ্রাসন চিন্তায় ফেলেছে বিজ্ঞানী-গবেষকদেরও।

Advertisement

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রের খবর, বর্তমানে সংক্রামক রোগের মধ্যে প্রত্যাশিত ভাবেই প্রথম স্থানে রয়েছে কোভিড-১৯। পাঁচ নম্বর স্থানে রয়েছে মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) এবং সার্স (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম)। তিনটিই বেটা করোনাভাইরাসের প্রজাতি। ডব্লিউএইচও-র সাউথ-ইস্ট এশিয়ার রিজিয়ন অফিসের কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়ের প্রাক্তন অধিকর্তা রাজেশ ভাটিয়া বলেন, ‘‘যা দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস ক্রমশ জটিল ও ধূর্ত হয়ে উঠছে। ফলে এখনও পর্যন্ত সার্স-কোভ ২-কে বোঝা যায়নি।’’ অথচ তথ্য বলছে, ২০০২-’০৩ সালে সার্সের সংক্রমণ হলেও তার পর থেকে কোথাওই সেটির সংক্রমণের খবর শোনা যায়নি। ফলে সে দিক থেকে সার্সকে ‘প্রায়োরিটি ডিজ়িজ’-এর তালিকায় রাখায় কিছুটা অবাক গবেষকমহল। এক গবেষকের কথায়, ‘‘মার্স-কে প্রায়োরিটি ডিজ়িজের তালিকায় রাখা ঠিকই হয়েছে। কারণ ২০১২ সালের পর থেকে ২০১৯ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এই সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সার্সকে কেন রাখা হল সেটাই চিন্তার।’’

এমনিতে প্রাণীদেহ থেকে মানুষের শরীরে আসা রোগের সংখ্যা (জুনোটিক) আগের চেয়ে বহু গুণ বেড়েছে। সেই কারণে ‘জুনোটিক ডিজ়িজ’ নিয়ে গবেষণা করার উপরে জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। একই বিষয়ে জোর দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। তাদের মতে, সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য ‘পোটেনশিয়াল’ প্যাথোজেনের সংখ্যা অনেক বেশি। অথচ তা নিয়ে গবেষণার পরিধি সীমিত। তাই সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রোগ বেছে নেওয়া হয়। ডব্লিউএইচও-র সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘সেই রোগগুলিকেই তালিকায় রাখা হয় যেগুলির সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা বেশি এবং যেগুলির মোকাবিলা করার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা দিশা আমাদের কাছে নেই।’’ বিশ্বে রোগের মাত্রা ও তার পরিসরের ভিত্তিতে এই তালিকা প্রয়োজন মতো আপডেট করা হয়। যাতে প্রতিটি রোগ প্রতিরোধের জন্য আলাদা আলাদা ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরি করা যায়।

Advertisement

বর্তমানে বিপজ্জনক সংক্রামক রোগ

• কোভিড-১৯

• ক্রিমেন-কঙ্গো হেমারেজিক ফিভার

• ইবোলা ও মারবার্গ

• লাসা ফিভার

• মার্স ও সার্স

• নিপা ও হেনিপাভাইরাল সংক্রমণ

• রিফট ভ্যালি ফিভার

• জিকা

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

সেই মতো করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। এই কারণে তাঁরা এর উৎস এবং তার সম্পর্কে যত তথ্য পাওয়া যায় সেগুলি সংগ্রহ করছেন। গবেষকমহলের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রথম করোনাভাইরাসের দেখা মিলেছিল ১৯৩০ সালে। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, করোনাভাইরাসের সাতটি প্রজাতি মূলত মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম। সাতটির মধ্যে চারটি প্রজাতির কারণে মানুষের সর্দি (কমন কোল্ড) হতে পারে। ২২৯ই এবং ওসি৪৩ করোনাভাইরাসের কারণে যেমন সর্দি লাগে, তেমনই আবার এই দু’টির ‘স্টিরিয়োটাইপ’ এনএল৬৩ ও এইচইউকে১ করোনাভাইরাস সর্দির কারণ। তবে এদের মধ্যে কোনওটিই সচরাচর বিপজ্জনক বা প্রাণঘাতী পর্বে পৌঁছয় না। কিন্তু বাকি তিনটি প্রজাতি অর্থাৎ সার্স, মার্স এবং সার্স-কোভ-২ করোনাভাইরাসের কারণে যে শ্বাসযন্ত্রে গুরুতর সংক্রমণ হতে পারে, তা ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে। কেরলের নিপা ভাইরাস প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেওয়া তথা ওই রাজ্যের কোভিড-১৯ ম্যানেজমেন্টের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য অনুপ ববি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস যে আমাদের জন্য বিপদ হয়ে উঠেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই ভাইরাসের সংক্রমণ কী ভাবে রোখা যায়, সেই পন্থা খোঁজাই এখন একমাত্র লক্ষ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন