Coronavirus

সরকারি হাসপাতালে মাস্কের হাহাকার

মঙ্গলবার দুপুরে খাস কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলির ছবিই বলে দিচ্ছে, সারা রাজ্যে বিপুল চাহিদার তুলনায় মাস্কের জোগান কতটা অপ্রতুল।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২০ ০৩:৪৭
Share:

সাবধানি: মাস্ক পরে এক রোগী। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন আউটডোরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সার্জিক্যাল স্টোরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের এক কানে ল্যান্ডফোন। অন্য কানে মোবাইল ধরে রয়েছেন কার্ডিয়োথোরাসিক বিভাগের নিরাপত্তারক্ষী। বিভাগীয় দু’টি ফোনে যাঁরা ফোন করেছেন, তাঁদের দাবি একটাই— ‘মাস্ক চাই, মাস্ক দিন!’ দক্ষিণ কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আধিকারিক বিনীত সুরে বলছেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনও তো মাস্ক চাইছে। কিন্তু পাব কোথায়?’’ উত্তর কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের আধিকারিকদের মাস্কের কথা জিজ্ঞাসা করতেই জবাব এল, ‘‘যা খুশি প্রশ্ন করুন, উত্তর দেব। মাস্ক নিয়ে কিছু বলা বারণ!’’

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে খাস কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলির ছবিই বলে দিচ্ছে, সারা রাজ্যে বিপুল চাহিদার তুলনায় মাস্কের জোগান কতটা অপ্রতুল। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় নোভেল করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় এ রাজ্যে তৎপরতা শুরু হয়। সেই সময় থেকেই বাড়তে শুরু করেছিল মাস্কের চাহিদা। এখন আতঙ্কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই চাহিদাও বাড়ছে।

কিন্তু জোগান সে ভাবে না বাড়ায় দেখা দিয়েছে হাহাকার। এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারির গোড়ায় স্বাস্থ্য ভবন থেকে কোনও রকমে ৪০টি এন-৯৫ মাস্ক আনানো সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে সেই মাস্ক ঢোকা মাত্রই মাইক্রোবায়োলজি এবং আইসিটিসি সেন্টার থেকে সেগুলি কার্যত ছোঁ মেরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে খবর। এর পরে অসুস্থতা ছাড়া কাউকে এন-৯৫ মাস্ক দেওয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। এখন তো ত্রিস্তরীয় সার্জিক্যাল মাস্কেরও আকাল দেখা দিয়েছে। এসএসকেএম সূত্রের খবর, এ দিন স্থানীয় ভাবে কিছু সার্জিক্যাল মাস্ক কিনে অবস্থা সামাল দেওয়া গিয়েছে।

Advertisement

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক পদস্থ কর্তা জানান, এক লক্ষ কুড়ি হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক ‘লোকাল পারচেজ’ করার কথা ছিল। কিন্তু সরবরাহকারী সংস্থা হাত তুলে দিয়েছে। ওই আধিকারিক জানান, এন-৯৫ মাস্ক আরও ১০০০টি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা পাওয়া যায়নি। এন আর এসের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে বিভিন্ন ইউনিটে ৪০ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক গিয়েছে। পুলিশ ফাঁড়ি প্রতিদিন ৫০টি করে মাস্ক চেয়ে চিঠি দিয়েছে। আর সিএমএস জানিয়েছে, আমরা ৫০টাই মাস্ক পাব। এই তো অবস্থা।’’ এই পরিস্থিতিতে এ দিন সিদ্ধান্ত হয়েছে, ত্রিস্তরীয় সার্জিক্যাল মাস্কও সবাইকে দেওয়া যাবে না। সূত্রের খবর, এসএসকেএম তিন হাজার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ পাঁচ হাজার এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ এক হাজার এন-৯৫ মাস্কের অর্ডার দিয়েছে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল আবার ত্রিস্তরীয় সার্জিক্যাল মাস্ক চেয়েছে ৪০ হাজার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ওই মাস্ক চেয়েছে ১০ হাজার। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবার সার্জিক্যাল মাস্কের প্রয়োজন ২৫ হাজার। কিন্তু দেবে কে!

শহরতলির একটি মেডিক্যাল কলেজের সুপার বললেন, ‘‘আমরা যাঁরা প্রথম আড়াইশোটি এন-৯৫ মাস্ক চেয়েছিলাম, তাঁরাই পেয়েছি মাত্র ২৫টি! যা অবস্থা, তাতে মাস্ক তৈরির জন্য দর্জির খোঁজে নামতে হবে।’’

সঙ্কটের কথা স্বীকার করে নিয়ে এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘মাস্ক নেই মানে, কোথাও নেই। পিপিই, এন-৯৫, ত্রিস্তরীয় সার্জিক্যাল মাস্কের একটা অর্ডার রয়েছে। সেটাও অর্ডার দেওয়া সামগ্রী পাওয়ার পরেই দিতে পারব।’’ তিনি জানান, সারা রাজ্যে এই মুহূর্তে অন্তত ৫০ হাজার দু’ধরনের মাস্কের রিকুইজিশন রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজগুলিকে ধরলে তা এক লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে।

শহরের একাধিক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত মাস্ক ও দস্তানার জোগান না থাকায় বহির্বিভাগে রোগীদের দেখার ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ভীত হয়ে পড়ছেন। বহির্বিভাগে যাতে একসঙ্গে অনেকে মিলে চিকিৎসকের কাছে জড়ো না হন, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক প্রশাসনিক কর্তা জানান, ত্রিস্তরীয় সার্জিক্যাল মাস্কও যেহেতু অমিল, তাই আগের মতো সবুজ রঙের কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করার নির্দেশ জারি হতে পারে।

সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘একটি হ্যান্ডলুম সংস্থাকে মাস্ক তৈরির জন্য বলা হয়েছে। শুক্রবার সেগুলির ডেলিভারি মিলতে পারে। এখনও অসুখ সে ভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। মাস্কের ব্যবহারে রাশ না-টানলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন