Coronavirus

পঞ্চসায়রে করোনা আক্রান্তের আবাসনে ত্রাস, বেরোচ্ছেন না বাসিন্দারা

করোনাভাইরাসে কলকাতায় এখনও পর্যন্ত একমাত্র আক্রান্তের বাসস্থান, পঞ্চসায়রের আবাসনে গিয়ে বুধবার দেখা গেল এমনই আতঙ্কের দৃশ্য।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২০ ০৪:১৮
Share:

বন্ধ: পঞ্চসায়রের আবাসনের এই ফ্ল্যাটেই থাকছিলেন রাজ্যের প্রথম করোনা আক্রান্ত যুবক ও তাঁর পরিবার।

যেন অঘোষিত ১৪৪ ধারা চলছে! বাসিন্দা ছাড়া সকলেরই আবাসনের ভিতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ। মূল ফটকের বাইরে লম্বা লাইন অর্ডার পৌঁছে দিতে আসা ডেলিভারি বয়দের। সেখানে ভিড় জমতে দেখলেই সরিয়ে দিচ্ছেন আবাসনের মাস্ক পরা নিরাপত্তাকর্মীরা। গুরুতর কারণ জানালেও যেন ছোটখাটো পরীক্ষা দিতে হচ্ছে ভিতরে প্রবেশের জন্য!

Advertisement

করোনাভাইরাসে কলকাতায় এখনও পর্যন্ত একমাত্র আক্রান্তের বাসস্থান, পঞ্চসায়রের আবাসনে গিয়ে বুধবার দেখা গেল এমনই আতঙ্কের দৃশ্য। সেই সঙ্গে বাসিন্দাদের ক্ষোভ, কী করে সব কিছু জানার পরেও ছেলেকে নিয়ে ওই আবাসনে প্রায় দু’দিন কাটিয়ে দিলেন তাঁর মা! যিনি আবার রাজ্য সরকারের আমলাও বটে! আবাসনের এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘আক্রান্ত ওই তরুণ অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে মেল আসার পরে টনক নড়ে তাঁর মায়ের। কিন্তু তিনি এম আর বাঙুর হাসপাতালে ছেলেকে দেখানোর পরে তাঁকে নিয়ে আইডি হাসপাতালে যাওয়ার বদলে কী করে ফ্ল্যাটে চলে এলেন? কেনই বা তাঁকে নিয়েই নবান্নে গেলেন, কেউ জানেন না!’’

আতঙ্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আবাসনের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি মিললেও যেতে বলা হচ্ছে নাক-মুখ ঢেকে। তার আগে গেটের একপাশে রাখা সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে নিয়ে এগোনোরও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ভিতরে প্রবেশের পরে মালুম হয়, গোটা আবাসনই যেন স্বেচ্ছা-কোয়রান্টিনে চলে গিয়েছে। সেখানে ঘণ্টা তিনেক কাটিয়েও ১১টি টাওয়ারের প্রায় কোনও বাসিন্দাকেই বাইরে বেরোতে দেখা যায়নি। টাওয়ারগুলির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শুধু মাস্ক পরা নিরাপত্তাকর্মীরা।

Advertisement

পাঁচ নম্বর টাওয়ারের তেরোতলায় বাবা ও মায়ের সঙ্গে ওই তরুণ থাকেন ১৩০১ নম্বর ফ্ল্যাটে। ওই পর্যন্ত পৌঁছনোর লিফট জুড়ে জীবাণুনাশকের গন্ধ। বার কয়েক ফ্ল্যাটের বেল বাজানো হলেও কেউ দরজা খোলেননি। উল্টো দিকের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা চন্দ্র দম্পতি বললেন, ‘‘ওঁরা কেউ এখানে নেই। কলকাতার প্রথম করোনা-আক্রান্ত আমাদেরই প্রতিবেশী।’’

সৌমিত্র চন্দ্র সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। স্ত্রী ঋতুপর্ণা ছাড়াও অশীতিপর শাশুড়ি, দুই মেয়ে এবং চার পোষ্য নিয়ে তাঁর বাস। সৌমিত্র বললেন, ‘‘ছেলেটার ১৮ বছর বয়স। পড়াশোনায় দারুণ। সম্প্রতি অক্সফোর্ডে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। কবে ইংল্যান্ড থেকে এল, প্রথমে বুঝতে পারিনি। শেষে মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ আমাদের আবাসনের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে খবরটা আসে।’’ তাঁর স্ত্রী ঋতুপর্ণা প্রবল আতঙ্কিত। বললেন, ‘‘মারাত্মক ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল খবরটা পেয়ে। আবাসনের সকলে মিলে প্রথমেই ফ্লোরের কমন জায়গাগুলি পরিষ্কার করি। তার পরে লিফট। এই লিফট দিয়েই তো ওঁরা যাতায়াত করেছিলেন।’’

সৌমিত্রবাবু এর পরে বলেন, ‘‘কিন্তু ওই মহিলা প্রভাব খাটিয়েছেন, এটা বিশ্বাস করি না। তবে ওঁর নবান্নের বদলে আইডি হাসপাতালে যাওয়া

উচিত ছিল।’’ ঋতুপর্ণা অবশ্য বললেন, ‘‘ওঁরা আমাদের প্রতিবেশী। চাইলেও সাহায্য করতে পারব না। এটা এমনই একটা ভাইরাস। তবে এটাও মনে হচ্ছে, ছেলেটি যদি রবিবারই কলকাতায় এসে থাকে, তা হলে দু’দিন ফ্ল্যাটে থাকল কেন? কেনই বা লিফট ব্যবহার করল?’’ ঋতুপর্ণা আরও বলেন, ‘‘বাচ্চাদের নিয়ে থাকি। ফ্ল্যাটে বয়স্ক মানুষও রয়েছেন। শুধু মনে হচ্ছে, কোনও ভাবে যদি আক্রান্ত হই, কী ভাবে সামাল দেব? আমাদের সরকারি পরিকাঠামোই বা কতটা শক্তপোক্ত?’’

ওই আবাসন কমিটির সম্পাদক নীলাঞ্জন দাসের কথায়, ‘‘কোনও আবাসন এই সবের জন্য তৈরি থাকে না। মঙ্গলবার ঘটনাটি জানার পর থেকে রাত আড়াইটে পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়েছি। নতুন অনেক

পদক্ষেপও করেছি। কিন্তু করোনা নিয়ে এত তথ্য জানা সত্ত্বেও কেউ কী করে আবাসনের ভিতরে ঢুকে পড়ে থেকে গেলেন? খবর রটে যাওয়ার পরেও তো সরকারের তরফে জায়গাটি সাফসুতরো করার কোনও উদ্যোগ দেখা গেল না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন