corona virus

কেন্দ্রীয় দলকে নিয়ে ব্যস্ত বাঙুর, সেই ফাঁকে ‘হাওয়া খেতে’ বেরিয়ে পড়লেন করোনা রোগী

প্রায় সকলের অলক্ষ্যেই তিনি হাসপাতালের চৌহদ্দি পেরিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটতে শুরু করেন টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের দিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২০ ১৫:২৩
Share:

হাসপাতালের ওয়ার্ড ছেড়ে ওই প্রৌঢ়ের বেরিয়ে যাওয়া প্রথমে কেউ খেয়ালই করেনি—নিজস্ব চিত্র

সবে তখন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এম আর বাঙুর হাসপাতালে ঢুকেছে। হঠাৎ হাসপাতালের মেন গেটের ভিতর থেকে ভেসে এল কথাগুলো, ‘‘সরে যান, উনি করোনা পজিটিভ পেশেন্ট। সবাই সরে যান।’’ আতঙ্কে তত ক্ষণে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। পড়িমরি করে যে যার মতো ছিটকে যাচ্ছেন। তখনই দেখা গেল এক প্রৌঢ়কে। পরনে সাদা স্ট্রাইপ দেওয়া কালো ট্র্যাক প্যান্ট, উপরে সাদা-কালো ছাপের টি-শার্ট।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বেলা তখন দেড়টা। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আসায় হাসপাতাল জুড়ে সাজ সাজ রব। চিকিৎসক থেকে হাসপাতালকর্মী— সকলেই ব্যস্ত। তার মধ্যেই হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে পড়েন ওই প্রৌঢ়। প্রায় সকলের অলক্ষ্যেই তিনি হাসপাতালের চৌহদ্দি পেরিয়ে বেরিয়ে পড়েন দেশপ্রাণ শাসমল রোডে। তার পর হাসপাতালের গা ঘেঁষে ফুটপাথ ধরে তিনি হাঁটতে শুরু করেন টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের দিকে।

হাসপাতালের ওয়ার্ড ছেড়ে ওই প্রৌঢ়ের বেরিয়ে যাওয়া প্রথমে কেউ লক্ষ্যই করেনি। মেন গেটের বাইরে রোগীর পরিজনদের সঙ্গে কয়েকজন হাসপাতালকর্মীও দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছু ক্ষণ ধরেই সেখানে কয়েক জন আলোচনা করছিলেন, তাঁদের রোগীকে ওয়ার্ডে পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি করোনা পরীক্ষায় সেই রোগীর পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। ওই প্রৌঢ়কে এমন পোশাকে ও ভাবে হেঁটে যেতে দেখে হাসপাতালকর্মীদের সন্দেহ হয়। তাঁরাই প্রথমে পথ আটকান ওই প্রৌঢ়ের।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা হাসপাতালে নিষিদ্ধ হল মোবাইল

হাসপাতালের কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েই ফের হাসপাতালের দিকে হাঁটা দেন ওই প্রৌঢ়। তত ক্ষণে খবর পৌঁছেছে হাসপাতালের ভিতরে। রোগী বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে তত ক্ষণে হুলস্থুল অবস্থা সেখানে। পিপিই পরেই কয়েক জন হাসপাতাল কর্মী ছুটে আসেন বাইরে। যদিও তখনও নির্বিকার ওই প্রৌঢ়। হাসপাতালকর্মীরা তখন গেটের মুখে থাকা লোকজনকে সাবধান করছেন, ‘‘সরে যান, উনি করোনা পজিটিভ পেশেন্ট।”

আরও পড়ুন: আতঙ্কে পাল্টে যাচ্ছে চেনা পড়শির আচরণ

সকলেই আতঙ্কে রাস্তা ছেড়ে সরে যান। এক স্বাস্থ্যকর্মী প্রশ্ন করেন ওই প্রৌঢ়কে, ‘‘কোথায় যাচ্ছিলেন?’’ নির্বিকার মুখের জবাব আসে, ‘‘একটু হাওয়া খেতে যাচ্ছিলাম। হাসপাতালে ভাল লাগছিল না। দমবন্ধ লাগছে। তাই একটু বেরিয়েছিলাম। যাচ্ছিলাম টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের দিকে।’’ ওই প্রৌঢ় ওয়ার্ডে ফিরে যাওয়ার পরেই হাসপাতালের মেন গেট-সহ গোটা চত্বর জীবাণুমুক্ত করার কাজ করা হয়।

গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক হাসপাতালকর্মী বলেন, ‘‘আমরা কয়েক জন বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি ওই ব্যক্তি বাইরে বেরিয়ে আসছেন। আমরা তাঁকে ডেকে কথা বলে জানতে পারি, তিনি করোনা আক্রান্ত। তার পরেই হাসপাতালের ভিতরে খবর পাঠাই। ভদ্রলোককে ফের ওয়ার্ডে ফেরত পাঠানো হয়।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হাসপাতাল কর্তার দাবি, ‘‘কেউ পালানোর চেষ্টা করেছে বলে জানা নেই। শুনেছি, এক প্রৌঢ়কে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামানোর পরেই তিনি গেটের বাইরে বেরিয়ে যান। তাঁকে ফের হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’’ তবে প্রৌঢ়কে ঢোকানোর পর কেন গোটা হাসপাতাল চত্বর কেন জীবাণুমুক্ত করা হল, তার কোনও ব্যাখ্যা দিতে রাজি হননি ওই কর্তা।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন