Coronavirus in Kolkata

লোক নেই, মেডিক্যালে পিপিই পরে দাদার দেহ মর্গে নিতে হল ভাইকে!

পর পর কোভিড সংক্রমণের জেরে হাসপাতালের চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা দেহ সরাতে আসছেন না বলে মানেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২০ ১৯:৫৮
Share:

রবিবার মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকের সামনে মৃত হজরত জাহানের ভাই মহম্মদ রাজা।

গোটা হাসপাতাল জুড়ে মৃতদেহ সরানোর কেউ নেই। তাই মৃতের ভাইকেই পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) হাতে দিয়ে, তাঁকে দিয়েই ওয়ার্ড থেকে মর্গে সরানো হল মৃতদেহ! ঘটনাটি ঘটেছে খাস কলকাতায়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি ব্লকে। এমনটাই অভিযোগ মৃতের ভাইয়ের। তাঁর অভিযোগ, পাঁচ দিন ধরে হন্যে হয়ে তিনি দৌড়ে বেড়াচ্ছেন হাসপাতাল চত্বরে। তার পরও হাতে পাননি দাদার দেহ।

Advertisement

পর পর কোভিড সংক্রমণের জেরে হাসপাতালে যে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দেহ সরানোর কথা তাঁরা আতঙ্কে কাজে আসছেন না, তা স্বীকার করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। গোটা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্তারা।

হজরত জাহান (৩৬) দমদম চিড়িয়ামোড় এলাকার বাসিন্দা। পেশায় মালবাহক। তাঁর ভাই মহম্মদ রাজা বলেন, ‘‘দাদা সুগারের রোগী। কয়েক দিন ধরে সুগার বেড়ে গিয়ে শরীর খারাপ হয়। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বাড়ির কাছে এক চিকিৎসককে দেখালে তিনি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসতে বলেন দাদাকে।” ৫ মে দুপুরে মেডিক্যাল কলেজে হজরত জাহানকে মেডিক্যাল কলেজে আনলে তাঁকে সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে (এসএসবি) ভর্তি করা হয়। ওই ভবনটি সন্দেহভাজন কোভিড রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড। আইসোলেশন ওয়ার্ড হওয়ায়, ভর্তির পর দাদার সঙ্গে দেখাও করতে পারেননি রাজা।

Advertisement

আরও পড়ুন: মদের দোকানে ভিড় হচ্ছে, আর বিপন্ন শ্রমিকদের বেলায় নিয়ম! প্রশ্ন দেবের​

রাজার কথায়, পরের দিন অর্থাৎ ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ তাঁর কাছে ফোন আসে হাসপাতাল থেকে। তাঁকে জানানো হয় যে রোগী মারা গিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিকেলে আমাকে হাসপাতাল থেকে একজন একটি পিপিই দেন। ডাক্তার বা নার্সরা যেগুলো পরেন সে রকম একটা। তার পর আমাকে হাসপাতালের এক কর্মী নিয়ে যান দোতলার ওয়ার্ডে।” অভিযোগ, পিপিই পরে ওয়ার্ডে গেলে, সেখানে মেঝের উপর পড়ে থাকতে দেখেন দাদার মৃতদেহ। রাজা বলেন, ‘‘গোটা ওয়ার্ড ফাঁকা। হাসপাতাল কর্মীরা নেই। আমাকে যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি আমাকে বলেন দাদার দেহ নিয়ে মর্গে যেতে। আমি ট্রলিতে চাপিয়ে দেহ নিয়ে যাই মর্গে।”

এর পর শুরু হয় দাদার মৃতদেহ ফেরত পাওয়ার অপেক্ষা। ওই দিন সন্ধ্যা থেকে রবিবার (১০ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত বার বার সুপারের অফিসে গিয়েছেন রাজা। রবিবার বিকেলে এসএসবি-র সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার মা ছেলেকে শেষ বারের মতো দেখতে চাইছেন। অথচ কেউ বলতেই পারছেন না কবে দাদার দেহ পাব।”

গোটা ঘটনা শুনে হাসপাতালের এক কর্তা কার্যত স্বীকার করে নেন সমস্যার কথা। তিনি বলেন, ‘‘এই রোগীর ক্ষেত্রে তাঁর ভাইকে মৃতদেহ ওয়ার্ড থেকে নিয়ে যেতে হয়েছে কি না তা বলতে পারব না। তবে ঘটনাটি খুব অস্বাভাবিক নয়।” তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে পর পর সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। তার পর থেকেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের মধ্যে, যাঁদের ওয়ার্ড থেকে দেহ সরানোর কথা। তাঁদের বড় অংশই চুক্তিভিত্তিক। তাঁরা আতঙ্কে কাজেই যোগ দিচ্ছেন না।”

আরও পড়ুন: ১৭ মে-র পর কতটা লকডাউন? কাল মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে মোদীর বৈঠক

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি ঠিক কী হয়েছে।” দেহ পেতে দেরি হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘কোভিড টেস্টের রিপোর্ট হাতে এলেই দেহ দেওয়া হবে।” হাসপাতালের অন্য এক কর্তা দেহ দিতে দেরি হওয়ার জন্য দেরিতে টেস্ট রিপোর্ট পাওয়াকে দায়ী করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রোগীর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। রবিবারই রিপোর্ট এসে পৌঁছেছে। ফলে রাজার হাতে তাঁর দাদার দেহ শীঘ্রই তুলে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন