ফাইল চিত্র।
কারও ক্ষেত্রে সপ্তাহে তিন দিন অফিসে যাওয়ার জরুরি তলব, কারও অসুস্থ আত্মীয়কে হাসপাতাল অথবা বাড়িতে দেখতে যাওয়ার তাড়া, কেউ আবার ব্যরবসার প্রয়োজনে কলকাতার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ভিড় বাসে চেপেই ছুটে বেড়াচ্ছেন। এঁদের প্রত্যেকের বাড়িতেই একাধিক সদস্য। রয়েছেন প্রবীণেরাও। তবু কার্যত নিরুপায় হয়েই সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে ভিড়ে ঠাসা বাসে যাতায়াত করছেন তাঁরা। তবে সকলেই যে নিরুপায় হয়ে বাসে চড়ছেন, এমনটাও নয়। স্রেফ বান্ধবীর জন্মদিন পালন করতেও ভিড় বাসে চেপে বসছেন কেউ কেউ।
শহর ও শহরতলির মধ্যে লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ হতেই যাত্রীর চাপ বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি বাসে। এ দিকে, শহরের রাস্তায় বাসের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কমে যাওয়ায় প্রতিদিনই কার্যত ‘বাদুড়ঝোলা’ অবস্থায় যাতায়াত করছেন অধিকাংশ যাত্রী। সকালে ও বিকেলে ভিড়ের জেরে বাসে ওঠাই কার্যত অসাধ্য হয়ে উঠেছে। যাত্রীদের বক্তব্য, এ ভাবে ঝুঁকির যাতায়াতে নিজেদের সংক্রমিত হওয়ার ভয় তো থাকছেই, সঙ্গে পরিবারের বাকিদেরও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
মঙ্গলবার সকালে গড়িয়াহাট থেকে বিমানবন্দরগামী একটি বেসরকারি বাস থেকে ভিড় ঠেলে চিংড়িঘাটায় নামলেন বছর চল্লিশের প্রশান্ত সরকার। ভিড় বাসে এ ভাবে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে উঠছেন? তাঁর উত্তর, ‘‘আমি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করি। কর্তৃপক্ষ সপ্তাহে তিন দিন অফিসে যেতে বলেছেন। রাস্তায় ঘণ্টাখানেক দাঁড়ানোর পরে একটা বাস পেলাম। ভিড় থাকলেও উপায় কী বলুন, চাকরিটা তো বাঁচাতে হবে! এমনিতেই প্রায় অর্ধেক বেতন দিচ্ছে। এই অবস্থায় যদি অ্যাপ-ক্যাব বা ভাড়ার গাড়িতে যাই, তা হলে বেতনের কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না।’’ কিন্তু এ ভাবে যাতায়াত করলে তো আপনার থেকে বাড়ির অন্যেরাও সংক্রমিত হতে পারেন? প্রশ্ন শুনে একটু থমকে প্রশান্তবাবুর উত্তর, ‘‘ও সব নিয়ে আর ভেবে কী করব বলুন! ভাগ্যে থাকলে হবে! বাড়ির সকলের থেকে যতটা সম্ভব আলাদা থাকার চেষ্টা করছি।’’ শুধু প্রশান্তবাবু নন, এমন অবস্থা অনেকেরই। অদৃষ্টের উপরেই গোটা বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা।
হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা উদয়বাবু আবার শিয়ালদহে এসেছিলেন জরুরি ওষুধের খোঁজে। সেই ওষুধ নিয়েই অসুস্থ আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। ভিড় বাস প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সংক্রমণের ভয়েই বাড়ির কাউকে আপাতত বেরোতে দিচ্ছি না। আমিও যতটা সম্ভব কমই বেরোই। এক আত্মীয়ের ওষুধের প্রয়োজনেই শিয়ালদহে আসতে হল।’’ আজকাল বাইরে বেরোলে পরিবারের সকলেই দুশ্চিন্তা করেন, জানালেন উদয়বাবু।
তবে সকলেই যে নিরুপায় হয়ে ভিড় বাসে যাচ্ছেন, এমন নয়। এ দিন উল্টোডাঙা মোড়ে দেখা গেল, বান্ধবীর হাত ধরে কর্তব্যরত পুলিশের কাছে নিউ টাউনে যাওয়ার বাসের কথা জানতে চাইছেন এক তরুণ। বাইরে বেরিয়েছেন কোনও কাজে? তরুণের উত্তর, ‘‘ওর আজ জন্মদিন। তাই একটু বেরিয়েছি।’’ কিন্তু আপনাদের থেকে বাড়ির অন্যেরা সংক্রমিত হতে পারেন তো? তরুণের জবাব, ‘‘বাড়ির সকলেই তো মাঝেমধ্যে বাইরে যাচ্ছেন। বাবা-মা দু’জনেই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ় নিয়েছেন। আর কিছু হবে না!’’ এর পরেই ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে এগিয়ে গেলেন তাঁরা।
কেউ জরুরি কাজে, কেউ আবার চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ভিড় বাসে সফর করছেন। কিন্তু কেউ কেউ আবার তেমন প্রয়োজন না থাকলেও পরিস্থিতির গুরুত্ব না বুঝে অকারণ বাসে চড়ে এ-দিক ও-দিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। করোনার লেখচিত্র যে ভাবে ঊর্ধ্বপানে দৌড়চ্ছে, তাতে এমন বেপরোয়া মনোভাব বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।