Coronavirus

কোভিড-১৯ রোগীর মন ভাল রাখতে ভিডিয়ো কল

প্রিয়জনকে দেখার আশায় এই ফোন করার প্রয়োজন কতটা, তা শুধুই উপলব্ধি করতে পারেন করোনা আক্রান্ত রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০৪:২৫
Share:

দেখা: ভিডিয়ো কলেই রোগীর সঙ্গে পরিবারের কথা বলিয়ে দিচ্ছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী। সল্টলেকের এক হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

‘কী করছো তুমি? কোথায় আছ, ছাদে?’ ভিডিয়ো কলিংয়ে নাতির হাসিমুখ দেখে জানতে চাইলেন সল্টলেকের বেসরকারি কোভিড হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সিআইটি রোডের বাসিন্দা ৭৪ বছরের বৃদ্ধা। আপাতদৃষ্টিতে ঠাকুরমা-নাতির সাধারণ আলাপচারিতা। আসলে তা নয়। এক মারাত্মক ছোঁয়াচে সংক্রমণে আক্রান্ত একাকী বৃদ্ধার নিজের পরিচিতদের চোখে দেখা, তাঁদের কণ্ঠস্বর শোনার অনুভূতি। যে সুখে তিনি শিশুসুলভ হাসি নিয়ে ছেলে-বৌমা এবং নাতিকে বলেন, ‘‘তোমাদের দেখব বলেই ভিডিয়ো কল করছি। ভাল থেকো।’’

Advertisement

প্রিয়জনকে দেখার আশায় এই ফোন করার প্রয়োজন কতটা, তা শুধুই উপলব্ধি করতে পারেন করোনা আক্রান্ত রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা। প্রতিবেশী করোনা পজ়িটিভ জানার পরে আক্রান্ত ও তাঁদের পরিজনদের একঘরে করে রাখার প্রবণতা ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা এক করোনা রোগীর পরিজনের কথায়, ‘‘বাড়ির কারও এ রোগ হয়েছে তা যেন কেউ জানতে না পারেন, আপ্রাণ সেই চেষ্টা করছি।’’ বড়তলা থানা এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘জানাজানি হওয়ার ভয়ে লুকিয়ে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।’’

এমন পরিস্থিতিতে দূরে থাকা পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল মোবাইল। কারণ, সংক্রামক ওয়ার্ডে সাধারণ হাসপাতালের মতো রোগীর পরিজনদের যাতায়াতের সুযোগ নেই। সম্প্রতি সেই মোবাইলের ব্যবহারেও রাশ টেনেছে সরকারি নির্দেশিকা। নবান্নের ব্যাখ্যা, মোবাইলের ব্যবহারে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে এই আশঙ্কায় কোভিড হাসপাতালে চলভাষ যন্ত্রটির প্রবেশ নিষিদ্ধ। বিরোধীদের অবশ্য দাবি, আসলে সরকারি কোভিড হাসপাতালের বেহাল ছবির ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসায় এই নির্দেশিকা।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা আবহে সাহায্য চেয়ে ফোন ১০০-তেও

সেই বিতর্ককে দূরে সরিয়ে রেখে রবিবার পরিজনদের দেখা-শোনার আনন্দে মাতলেন সল্টলেকের বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৮ জন রোগীর মধ্যে আট জন এখন আইসিইউয়ে রয়েছেন। তাই বাকি তিরিশ জনের জন্য এই ব্যবস্থা করেছেন ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন বিকেল ৪টে থেকে ৫টা— এক ঘণ্টার ‘ভার্চুয়াল ভিজ়িটিং আওয়ার’ বরাদ্দ হয়েছে। পিপিই পরিহিত হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী রোগীর সামনে ধরে রাখছেন ট্যাব। তাতে ভিডিয়ো কল করে পরিজনদের সঙ্গে কথা বলছেন রোগীরা। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক রোগী তিন মিনিট বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। এই ১৮০ সেকেন্ডের কাছে পর্যুদস্ত করোনাও। এ দিনের প্রতিটি আইসোলেটেড কেবিনের আবহই বলে দিচ্ছিল সেই কথা।

সল্টলেকের বাসিন্দা ৫৭ বছরের প্রৌঢ় তাঁর স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন, ‘‘তোমরা কেমন আছ? সব ঠিক আছে তো? খাওয়াদাওয়া ঠিক মতো করবে।’’ সিআইটি রোডের বাসিন্দা সেই বৃদ্ধা বললেন, ‘‘এপ্রিলের কুড়ি তারিখ এখানে এসেছি। তার আগে দু’দিন অন্য হাসপাতালে ছিলাম। পজ়িটিভ শুনে ভয় হয়েছিল। তার উপরে ছেলে-বৌমাকে ছেড়ে কখনও থাকিনি। ভিডিয়োয় ওদের দেখে খুব ভাল লাগল। কষ্টও হল। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যেন বাড়ি ফিরতে পারি।” এই কথোপকথনের মাঝেই হাওড়ার গোলাঘাটার বাসিন্দা ৬৯ বছরের বৃদ্ধ আবার পরিজনের কাছে এলাকার পরিস্থিতি কেমন তা শুনে নিলেন।

বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্বেগকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসকদের একটি অংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এমনি হাসপাতালে ভিজ়িটিং আওয়ারের জন্য রোগীরা মুখিয়ে থাকেন। কোভিড হাসপাতালে সেই তাগিদ তো আরও বেশিই হবে। মোবাইলের ব্যবহার বন্ধ হওয়ায় কোভিড রোগীদের মানসিক চাপ কাটাতে এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।

আরও পড়ুন: প্রাক্তন ও বর্তমানের মুষ্টিবদ্ধ হাত পৌঁছে দিচ্ছে ত্রাণ

ওই হাসপাতালের গ্রুপ সিইও রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘এই রোগ ছোঁয়াচে। তাই রোগীর সঙ্গে পরিজনেদের দেখা করার অনুমতি নেই। আবার বহু ক্ষেত্রেই পরিবারের লোকেরা কোয়রান্টিনে আছেন। কোভিড হাসপাতালে মোবাইল বন্ধ হওয়ায় রোগীর সঙ্গে তাঁর পরিবারের এই যোগাযোগটা খুব জরুরি ছিল। তিন মিনিটের ভিডিয়ো কল রোগীদের সুস্থ হওয়ার পথে মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে বলে আশা করছি।’’

এমন কিছু কি সরকারি কোভিড হাসপাতালে করা যায়? প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন