Jadavpur University Student Death Case

যাদবপুরের হস্টেল ছেড়ে কলকাতার বাইরে কারা? নজর পুলিশের, ফের ডাকা হতে পারে দুই শিক্ষাকর্তাকে

যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পরে হস্টেল ছেড়েছেন কারা? কেন? সে দিকেই এখন নজর তদন্তকারীদের। পাশাপাশি, ধৃতদের মোবাইলের তথ্যও এখন পুলিশের আতশকাচের তলায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৩ ২২:৩২
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর পরেই হস্টেল ছেড়েছিলেন বেশ কয়েক জন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের কেউ কেউ শহরের বাইরে চলে গিয়েছেন। এক জন পড়ুয়া ভিন্‌রাজ্যে গিয়েছেন বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। কেন হস্টেল ছেড়েছেন তাঁরা? এখন সে সবই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে গত বুধবার রাতে কী হয়েছিল, তা জানতে আরও এক বার হস্টেলের সুপার এবং ডিন অফ স্টুডেন্টকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন তদন্তকারীরা। এর আগেও তাঁদের সঙ্গে এক বার কথা বলেছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের নীচে থেকে উদ্ধার করা হয় প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ওই পড়ুয়ার পরিবার র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ তোলে। মৃত ছাত্রের বাবা পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে খুনের অভিযোগ করেন। হস্টেলের ছাত্রদের একাংশের দাবি, ওই ঘটনার পর থেকেই হস্টেল ছেড়েছেন কয়েক জন পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে কারও কারও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে হস্টেলে। এক জন চলে গিয়েছেন উত্তর ভারতে। পূর্ব নির্ধারিত কোনও কারণে তিনি উত্তর ভারতে গিয়েছেন, না কি আচমকা চলে গিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ওই ছাত্রমৃত্যুর সঙ্গে এত জন পড়ুয়ার হস্টেল ছাড়ার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের একাংশের দাবি। সূত্রের খবর, ওই ছাত্র তিন তলা থেকে পড়ে যাওয়ার পরেই হস্টেলে কয়েক জন ছাত্র আলোচনায় বসেছিলেন। কী নিয়ে সেই আলোচনা হয়েছিল, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

ওই ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মোবাইল ফোন মঙ্গলবার ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই তিন জনকে জেরা করে যে তথ্য উঠে এসেছে, তার সঙ্গে মোবাইলের তথ্যও মিলিয়ে দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা। মনে করা হচ্ছে, মোবাইল থেকে পাওয়া তথ্য এই তদন্তে বড় ভূমিকা নিতে পারে।

Advertisement

অন্য দিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় আগেই সক্রিয় হয়েছে মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং সংক্রান্ত নির্দেশাবলি মানা হচ্ছে কি না, কর্তৃপক্ষ কী কী পদক্ষেপ করেছেন, তা জানতে চেয়েছিল তারা। বুধবার তাদের প্রতিনিধি দল আসার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা আসছে না। ওই ছাত্রের মৃত্যুতে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা গত রবিবার ইউজিসি-কে রিপোর্ট দিয়ে জানানো হয়েছিল। সেই রিপোর্টে তারা সন্তুষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।

বুধবার মৃত ছাত্রের নদিয়ার বাড়িতে যাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। ওই দলে রয়েছেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী। দলের তরফে এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে জানানো হয়েছে, ওই দলে থাকছেন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, বাণিজ্যমন্ত্রী শশী পাঁজা, অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং দলের যুব সংগঠনের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। তাঁরা মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে তৃণমূল। এই ঘটনায় সক্রিয় রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সিভি আনন্দ বোস। বুধবার রাজভবনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট সদস্যদের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। বিকেল ৫টা থেকে শুরু হবে বৈঠক।

যাদবপুরে আসছে না ইউজিসি

যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর নেপথ্যে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলেছে পরিবার। ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং সংক্রান্ত নির্দেশাবলি মানা হচ্ছে কি না, কর্তৃপক্ষ কী কী পদক্ষেপ করেছেন, তা আগেই জানতে চেয়েছিল ইউজিসি। বুধবার তাদের প্রতিনিধি দলের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে না তারা। মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত। তিনি জানিয়েছেন, রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুর কাছ থেকে ইউজিসির ওই বক্তব্য তিনি জানতে পেরেছেন। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসিকে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় চার দিনে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে। তার পরেই ইউজিসির তরফে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে না তাদের প্রতিনিধি দল। সহ-উপাচার্য জানিয়েছেন, রেজিস্ট্রারের দাবি, ইউজিসি তাদের রিপোর্টে সন্তুষ্ট হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সংক্রান্ত তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে দফায় দফায় ইউজিসিকে রিপোর্ট দেবে। নিয়মিত তদন্তের খোঁজ নেওয়া হবে ইউজিসির তরফেও। রবিবারের রিপোর্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আরও জানানো হয়েছে, গত বুধবারের ঘটনার পর ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁর চিকিৎসারও বন্দোবস্ত করেন কর্তৃপক্ষ। এর পর তাঁরা পুলিশে এফআইআর দায়ের করেন। কী ভাবে ওই ছাত্র হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গেলেন, তা জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছেন, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর হস্টেল থেকে নতুন ছাত্রদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের রাখা হয়েছে নতুন একটি হস্টেলে। ছাত্রেরা যাতে আতঙ্কিত না হয়ে পড়েন, তার জন্য তাঁদের সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলেছেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রারের দাবি, এই রিপোর্টেই সন্তুষ্ট হয়েছে ইউজিসি।

ফরেন্সিক ল্যাবে ধৃতদের মোবাইল

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জনকে। তাঁরা হলেন বর্তমান ছাত্র দীপশেখর দত্ত, মনোতোষ ঘোষ এবং প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরী। এ বার তদন্তকারীদের নজরে তাঁদের মোবাইল। মঙ্গলবার ধৃত তিন জনের মোবাইল ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই মোবাইলে কী তথ্য রয়েছে, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে ধৃতদের বয়ান। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত তিন জনের মোবাইল থেকে তথ্য উদ্ধারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। মোবাইলগুলি থেকে কী কী তথ্য পাওয়া যায়, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে তার কোনও যোগসূত্র মেলে কি না, সবটাই জানা যাবে ফরেন্সিক পরীক্ষার পর। রিপোর্ট এলে তদন্তের কাজ অনেকটা এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাঁদের কাছ থেকে যে বয়ান পাওয়া গিয়েছে, মঙ্গলবার সেগুলিও মিলিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

ছাত্রের বাড়িতে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল

বুধবার মৃত ছাত্রের নদিয়ার বগুলার বাড়িতে যাবে তৃণমূলের এক প্রতিনিধিদল। মঙ্গলবার তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল বুধবার প্রয়াত ছাত্রের বাড়িতে তাঁর মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাবে। টুইটারে লেখা হয়েছে, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের উজ্জ্বল এক ছাত্রের মৃত্যু আমাদের শুধু মর্মাহতই করেনি, ক্ষুব্ধও করেছে। বুধবার আমাদের দলের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, বাণিজ্যমন্ত্রী শশী পাঁজা, অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও যুব সংগঠনের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ শোকাহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন। গভীর দুঃখের এই মুহূর্তে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এক্স হ্যান্ডেলে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের অবস্থানও স্পষ্ট করে দিয়েছে শাসকদল। তারা লিখেছে, ‘‘ঐক্যে, দুঃখে এবং অটল সংকল্পে আমরা বলি: আর র‍্যাগিং নয়। আর কোনও কষ্ট নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন