ফণীর ভয়ে দিনভর বন্ধ নির্মাণকাজ 

পুরীতে ফণীর তাণ্ডবের ভিডিয়ো তত ক্ষণে হাতে হাতে ঘুরছে। চৌরঙ্গি এলাকায় শহরের নির্মীয়মাণ সব থেকে উঁচু (৬২ তলা) আবাসন থেকে বেরিয়ে আসার মুখে এক যুবকের চোখও তখন মোবাইলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০১:৫০
Share:

শিরে সংক্রান্তি: নির্দেশ উড়িয়ে ই এম বাইপাসে একটি বহুতলের মাথায় ক্রেন। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

পুরীতে ফণীর তাণ্ডবের ভিডিয়ো তত ক্ষণে হাতে হাতে ঘুরছে। চৌরঙ্গি এলাকায় শহরের নির্মীয়মাণ সব থেকে উঁচু (৬২ তলা) আবাসন থেকে বেরিয়ে আসার মুখে এক যুবকের চোখও তখন মোবাইলে। পর্দা জুড়ে ঝড়ের দৃশ্য। কোনও এক বহুতলে লাগানো ক্রেন বিকট শব্দে পাশের কয়েকটি দোতলা বাড়ির উপরে ভেঙে পড়ছে! মোবাইলের দিকে তাকিয়েই নিরাপত্তারক্ষীর ঘরে রাখা ছুটির খাতায় সই করে দিয়ে যুবক বললেন, ‘‘পুরীর ভিডিয়ো। ভাগ্যিস আমাদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে! কী বিপদ আসছে কে জানে!’’

Advertisement

ঝড়ের তাণ্ডবের আশঙ্কায় শুক্রবার বিকেলের মধ্যেই কার্যত ছুটির চেহারা শহর জুড়ে। নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যেই আকাশছোঁয়া বহুতলগুলি নিয়েও বাড়তি তোড়জোড় শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহলে। পুরসভা সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে শুক্রবার সকালেই বিল্ডিং বিভাগের তরফে আরেক দফা কথা বলা হয়েছে নির্মাণ সংস্থাদের সংগঠন ক্রেডাইয়ের সঙ্গে। শহরের সবক’টি নির্মীয়মাণ বহুতলের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে তাদের। সেই সঙ্গে পুরসভার সঙ্গে কথা বলে ক্রেডাই একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি নির্মীয়মাণ বহুতলের গায়ে লাগানো ক্রেন এবং কাজে সুবিধার জন্য তৈরি ‘স্ট্রাকচার’ খুলে ফেলতে হবে। যদিও নির্দেশিকা অমান্য করে বাইপাসের নির্মীয়মাণ কিছু বহুতলের উপরে এ দিন দুপুরেও ক্রেন লাগানো থাকতে দেখা গিয়েছে। ক্রেডাইয়ের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হর্ষ পাটোডিয়া বলেন, ‘‘বহুতলগুলিতে লাগানো কাচের নির্মাণ আমাদের চিন্তায় রেখেছে। তবে এখনকার প্রতিটি বহুতলই এমন ভাবে তৈরি যে, বিপজ্জনক পরিস্থিতি সামলে দিতে পারবে।’’ হর্ষ জানান, তাঁদের জারি করা নির্দেশিকার জন্যই এ দিন ৪২, জওহরলাল নেহরু রোডের বহুতলে কাজ বন্ধ করা হয়েছে।

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ওই বহুতলের জন্য ‘কমপ্লিশন সার্টিফিকেট’ বা সিসি নেওয়া হয়নি। ফলে সেখানকার ৫০-৬০ তলা পর্যন্ত ফ্ল্যাটগুলিতে কাজ চলছিল। এ দিন অবশ্য ওই বহুতলে গিয়ে দেখা যায়, কর্মীরা ছুটির খাতায় সই করে ফিরে যাচ্ছেন। ওই বহুতলের নির্মাণ সংস্থার অফিস হরিশ মুখার্জি রোডে। সেখানকার এক আধিকারিক মদন ধর বলেন, ‘‘সব রকম নিরাপত্তা আমাদের রয়েছে। তবে এখনও ওই বহুতলে কেউ থাকেন না, তাই বাঁচোয়া।’’

Advertisement

শহরের আরও একটি আকাশছোঁয়া বহুতল প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে। এ দিন দুপুর থেকেই সেখানে ঝড়ের আশঙ্কায় নিরাপত্তার বন্দোবস্ত শুরু হয়েছে। সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা জানাচ্ছেন, বহুতলের প্রতিটি টাওয়ার এ দিন তাঁরা ঘুরে দেখেছেন। সঙ্গে পার্কিং স্পেসের বেশ কিছু নির্মাণও পরখ করে দেখা হয়েছে তাঁদের তরফে। ওই আবাসনের চার নম্বর টাওয়ারের বাসিন্দা ভারতী নন্দী ঝড় প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতায় আচ্ছন্ন। বললেন, ‘‘জরুরি দরকারে বেরিয়েছি। আয়লার সময়ে আমি সপরিবার পুরীতে ছিলাম। চোখের সামনে দেখেছি তো তাই জানি, সকাল থেকে ওখানে কী হচ্ছে।’’ এর পরে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমাদের টাওয়ারগুলির সামনের ফাঁকা অংশে এমনিতেই প্রবল হাওয়া চলে। ঝড় উঠলে গাড়িগুলির না ক্ষতি হয়।’’ এ দিন দুপুরের দিকে হাওয়ার একটু গতি বাড়তেই দেখা গেল,

মোটরবাইক উল্টে রয়েছে সেখানকার পার্কিং স্পেসে।

ঝড় নিয়ে একই রকম আশঙ্কার চিত্র উত্তর কলকাতার উল্টোডাঙা মেন রোড এবং ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোডের ধারের বহুতলগুলিতে। আনন্দপুরের এক বিলাসবহুল আবাসনের বাসিন্দা, পেশায় আইনজীবী শৌনক সেন বললেন, ‘‘আটতলায় আমার ফ্ল্যাট। জানলা খুললে এমনিই বছরভর ঝড় অনুভব হয়। মনে হয় না সে ভাবে কিছু মালুম হবে।’’ তবে ঝড় আসছে জেনে উত্তেজনার ছাপ তাঁর চোখে স্পষ্ট।

একই রকম উত্তেজিত প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের বহুতলের বাসিন্দা এক শিশু। বাবার কোলে পার্কিং স্পেসের গাছের ডাল ধরে ঝুলতে ঝুলতে একরত্তি বলল, ‘‘ঝড় আসছে। হাওয়া দিলেই আমি ঝুলে পড়ব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন