ঝড় না আসায় স্বস্তির সঙ্গে আক্ষেপও

উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ করতেও অবশ্য দেখা গিয়েছে অনেককে। ঝড় তো দূর অস্ত্, বৃষ্টি পর্যন্ত হল না, অকারণ মানুষকে আতঙ্কিত করা হল— খেদ প্রকাশ করেন এক জন।

Advertisement

সুনীতা কোলে

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০১:০৯
Share:

সুন সান: ঝড়ের আশঙ্কায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বিমান পরিষেবা। ছবি পিটিআই।

রাতে দফায় দফায় বৃষ্টি আসায় শঙ্কার প্রহর গুনছিল শহর। শুক্রবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় ফণী শহরে হাজির হবে, এমনটাই জানিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। বিপদে পড়লে আশ্রয় মিলবে তাঁদের কাছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন বহু শহরবাসী। শেষমেশ অবশ্য দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়নি। শহরের বেশ খানিকটা দূর দিয়ে চলে যাওয়ায় ঝোড়ো হাওয়া আর দু’-এক পশলা বৃষ্টি ছাড়া ফণীর উপস্থিতি সে ভাবে টেরও পাওয়া যায়নি। শনিবার সকাল হতেই তাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল গোটা শহর।

Advertisement

উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ করতেও অবশ্য দেখা গিয়েছে অনেককে। ঝড় তো দূর অস্ত্, বৃষ্টি পর্যন্ত হল না, অকারণ মানুষকে আতঙ্কিত করা হল— খেদ প্রকাশ করেন এক জন। ‘ফাইট ফণী ফাইট’ বলে ঝড়ের উদ্দেশে উৎসাহবার্তাও দেন এক ব্যক্তি। এমন পোস্টের সমালোচনাও করেছেন নেটিজেনরা। এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নানা মানুষের নানা মানসিকতা। কেউ রসিকতার চোখে দেখছেন, আবার কেউ সিরিয়াসলি দেখছেন। সব মতই গ্রহণ করতে হবে, উপায় কী। তবে আগে থেকে সাবধান হলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়। কলকাতায় ঝড়ের প্রভাব পড়েনি, সেটা ইতিবাচক। তা নিয়ে আক্ষেপ করার অর্থ হয় না।’’ মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, কিছু মানুষ দুর্যোগকেও বিনোদনের গোত্রে ফেলে দিচ্ছেন। নতুনত্বের খোঁজ করতে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছেন না। তাৎক্ষণিক আনন্দের পিছনে দৌড়চ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরীর সঙ্গে বাঙালির অন্য রকম যোগ। পাশের রাজ্যে এত ক্ষতি হল, সেটা নিয়েও তো ভাবা উচিত। তা না করে ঝড় না আসার জন্য মুষড়ে পড়লে অসংবেদনশীলতাই প্রকাশ পায়’’।

শনিবার সকাল থেকেই শহর ফিরতে শুরু করে স্বাভাবিক ছন্দে। ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হতে হল না বলে উচ্ছ্বসিত পোস্টে ভরে যায় সোশ্যাল মিডিয়া। যাঁরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছিলেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি শহরের ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেন অনেকে। ফণী আদৌ বঙ্গে আসবে না— বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে শুক্রবার ছড়িয়েছিল অনেক মিম। ফের সেই মিম শেয়ার করে অনেকে লেখেন, ‘আগেই বলেছিলাম, ফণী আসতে ভয় পাবে’। বাঙালির বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে কেউ পোস্টে লেখেন, ‘উড়ালপুল বিপর্যয়, সেতু ভেঙে পড়া, ভাগাড়ের মাংস— কিছুই কাবু করতে পারেনি বাঙালিকে। শেষমেশ কি না ঘূর্ণিঝড়ে ভয় পাবে বাঙালি?’

Advertisement

মেঘ কেটে রোদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সপ্তাহান্ত উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা ছকে ফেলেন অনেকে। কেউ পোস্ট করেন, ‘ঝড় এল না। সেই আনন্দে আজ দুপুরে খিচুড়ি-ডিমভাজা।’ কেউ আবার পছন্দের প্রাতরাশ বানিয়ে চটজলদি ছবি দিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। গরম থেকে সাময়িক মুক্তি মিলেছে, তাই সারা দিনে কী কী বই পড়বে‌ন, তা-ও ঠিক করে ফেলেন কেউ কেউ। ফণীর দাপটে নির্বাচনের ভরা মরসুমেও পিছিয়ে পড়েছিল রাজনীতি। এ দিন সকাল থেকেই অবশ্য ফের নেটিজেনদের আলোচনার তালিকায় উঠে আসতে থাকে রাজনীতি। তার সঙ্গে জুড়ে যায় ফণী। সকালেই এক রেডিয়ো জকি পোস্ট করেন, ‘ফণী আর শিল্প, কোনওটাই আর বাংলায় ঢুকবে না।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন