ঘূর্ণিঝড়ের হয়রানি বহাল বিমানবন্দরে

দু’গাল বেয়ে নেমে আসছে জলের ধারা। লটবহর ভরা ট্রলির হাতলে হাত রেখে, ধরে আসা গলায় সুলতানা নাজনিনের আকুতি — ‘‘দাদা, যে ভাবে হোক ঢাকায় ফেরার ব্যবস্থা করে দিন না! এত অপমান সহ্য করে আর তো থাকা যায় না!’’

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০১:২৩
Share:

অসহায়: কলকাতা বিমানবন্দরে আটকে পড়া সুলতানা নাজনিন এবং তারিক আনোয়ার। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

দু’গাল বেয়ে নেমে আসছে জলের ধারা। লটবহর ভরা ট্রলির হাতলে হাত রেখে, ধরে আসা গলায় সুলতানা নাজনিনের আকুতি — ‘‘দাদা, যে ভাবে হোক ঢাকায় ফেরার ব্যবস্থা করে দিন না! এত অপমান সহ্য করে আর তো থাকা যায় না!’’

Advertisement

শনিবার সকাল সাড়ে আটটা। অকুস্থল কলকাতা বিমানবন্দর। তারিক আনোয়ার আর সুলতানা, ঢাকা থেকে যুগলে কলকাতায় এসেছিলেন কেনাকাটা করতে। পকেট এখন শূন্য। তারিক কাপড়ের ব্যবসা করেন। সুলতানা শখে পত্রিকা চালান। তারিকের দাবি, তাঁদের দু’জনের কারওরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই! ফলে, এখন বিপদের সময়ে টাকা তোলার উপায়ও নেই। নগদ যে টাকা সঙ্গে ছিল, তা শেষ।

ফণীর আশঙ্কায় শুক্রবারে যে প্রায় সওয়া দু’শো উড়ান বাতিল হয়ে গিয়েছে, তার মধ্যে ছিল সুলতানাদের উড়ানও। শুক্রবার দুপুরে সেই উড়ান বাতিল হওয়া ইস্তক তাঁরা দু’জনে টার্মিনালের দোতলায় টিকিট কাউন্টারের সামনে লাউঞ্জেই রয়ে রয়েছেন। সুলতানার কথায়, ‘‘শুক্রবার রাতে চাদর পেতে মেঝেতে শুতে গেলেই কেউ না কেউ এসে উঠিয়ে দিয়েছেন। শেষে চেয়ারে বসেই রাত কেটেছে।’’ এই লাউঞ্জে শৌচালয় নেই। নীচে নেমে পার্কিংয়ের জায়গার সামনে শৌচালয়ে গেলে টাকা দিতে হচ্ছে। ফ্যাকাশে মুখে তারিক বলেন, ‘‘৭ তারিখ, মঙ্গলবারের আগে নাকি বিমানে জায়গা পাওয়া যাবে না! খাবার টাকাও নেই। গতকাল রাতে ‘কিশোরদাদা’ এসে খাবার দিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে জানিও না, চিনিও না। কিন্তু প্রতিদিন এক জন করে কিশোরদাদাকে কোথায় পাব!’’

Advertisement

শনিবার সকাল থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে উড়ান চলাচল স্বাভাবিক হলেও দুর্ভোগ কাটেনি বহু যাত্রীর। ছেলে মানবপুত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন পড়তে। তিনি এখন ওড়িশার কুরদা রোডে। বৃহস্পতিবারের ঝড়ে তিনি একটু অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। বাবা সৌরভ দত্ত, মা মৌ সেনের ছেলের কাছে যাওয়ার কথা ছিল ট্রেনে। তা বাতিল হওয়ায় শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে ট্রাভেল পোর্টালে বিমানের টিকিট কাটেন। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার ভুবনেশ্বরের উড়ান। ছেলে সেই টিকিট পেয়ে ওয়েব চেক-ইনও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু, কোথায় উড়ান? শনিবার সকালে বাঁশদ্রোণী থেকে ৮০০ টাকা দিয়ে ট্যাক্সি চেপে বিমানবন্দরে এসে জানতে পারেন, আপাতত ১২টার আগে ওই সংস্থার কোনও উড়ান নেই। মৌ বলেন, ‘‘উড়ান যদি এত আগে থেকে বাতিলই হয়ে থাকে, তা হলে আগের রাতে টিকিট কেন দিল? এটা তো যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার সমান।’’ গাড়ি ভাড়া করে শনিবার দুপুরে সড়কপথে ওড়িশা রওনা হয়েছেন দম্পতি।

সৌরভ দত্তের প্রশ্ন — ‘‘কোথাও কোনও ঝড়ের আভাস নেই। তা হলে এত শয়ে শয়ে উড়ান বাতিল করে আমাদের দুর্ভোগে ফেলার কারণ কী?’’ শুক্রবার দুপুর থেকে এই প্রশ্নটাই ঘুরে বেড়িয়েছে আরও হাজার হাজার যাত্রীর মনে। বেঙ্গালুরুর ব্যবসায়ী মহম্মদ শাহনওয়াজ পরিবার নিয়ে কলকাতায় আত্মীয়ের বিয়েতে এসেছিলেন। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ফেরার কথা ছিল শুক্রবার রাতে। রাতেই উড়ান বাতিল হওয়ার বার্তা পেয়ে যান বিমান সংস্থা থেকে। শনিবার বিমানবন্দরে পৌঁছন সকাল আটটা নাগাদ। শোনেন, দুপুরের আগে বেঙ্গালুরুর কোনও উড়ান ছাড়বে না। তাঁরও প্রশ্ন — ‘‘এখন তো জানা হয়ে গিয়েছে যে ঝড় আসবে না। তবু কেন আমাদের আটকে রাখা হচ্ছে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন