বিপজ্জনক বাড়ি: বোঝা মাথায় নিয়ে আজ বৈঠক

দিন কয়েক আগে পাথুরিয়াঘাটায় এক বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যু দেখেছিলেন তাঁরা। নিজেরাও থাকেন এক বিপজ্জনক বাড়িতে। ১ নম্বর বিবেকানন্দ রোড ঠিকানায় থাকা শেঠিয়া হাউসে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায় ও সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৩
Share:

দিন কয়েক আগে পাথুরিয়াঘাটায় এক বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যু দেখেছিলেন তাঁরা। নিজেরাও থাকেন এক বিপজ্জনক বাড়িতে। ১ নম্বর বিবেকানন্দ রোড ঠিকানায় থাকা শেঠিয়া হাউসে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়ির পাঁচতলা থেকে একটি চাঙড় ভেঙে পড়ে। ওই ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় এক কিশোর। ওই বাড়ির পাশেই ঘটেছিল বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ভয়ঙ্কর ঘটনা। তাঁদের দাবি, উড়ালপুল ভেঙে পড়ার সময়ে বাড়িগুলিতে ‘বিপজ্জনক’ তকমা সেঁটে দেওয়া হয়েছে। মেরামতি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন মেয়র। কিন্তু গত এপ্রিলের পর থেকে আর কারও দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। তাই ঝুঁকি মাথায় নিয়েই দিন গুজরান করছেন তাঁরা।

Advertisement

তবুও ‘‘পুরসভা ঘোষিত’’ বিপজ্জনক বাড়ি ছাড়তে নারাজ ভাড়াটেরা। বলছেনও, ‘‘৪০-৫০ বছর ধরে ভাড়ায় রয়েছি। যাব কোথায় বলতে পারেন?’’ তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সেখানে থাকতে হবে বলে জানান তাঁরা।

স্থানীয় কাউন্সিলর বিজেপি-র বিজয় ওঝা অবশ্য বলেন, ‘‘পুরসভা কী কারণে বিপজ্জনক তকমা দিয়েছে সেটা আমাকে জানায়নি। মেরামতির কোনও প্রতিশ্রুতিও আমি দিইনি। মেয়র দিয়ে থাকলে উনিই সেটা বলতে পারবেন।’’

Advertisement

পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের দুর্ঘটনার পরে ওই বাড়িতে থাকা গোটা দশেক পরিবারকে স্থানীয় এক ধর্মশালায় রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন স্থানীয় পুর প্রতিনিধি ইলোরা সাহা। বলা হয়েছিল, তাঁদের দেখভাল করার ব্যবস্থা করবে পুর প্রশাসন। ওই বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিন তিনেকের পর থেকে পুর প্রশাসনের কারও দেখা মেলেনি।’’

আর বাড়ির মালিক? শহরের একাধিক বিপজ্জনক বাড়ির মালিকের বক্তব্য, ‘‘ভাড়া হিসেবে ক’টা টাকাই বা পাই! তা দিয়ে সংসার চালানোই যায় না, বাড়ি সারানো তো দূরস্থান।’’ বস্তুত এখনও উত্তর কলকাতায় এমন অনেক বাড়ি রয়েছে যেখানে ঘরভাড়া ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। পুরনো আমল থেকে সে ভাবেই রয়েছে। আর বাড়ির সারানোর দিকে মালিকের নজর না থাকার কারণ মূলত সেটাই। যদিও এমন অভিযোগও রয়েছে কিছু প্রভাবশালী বাড়ির মালিক বাড়ি ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় সারাতে চান না বাড়ি। ভেঙে পড়লে তো ভাড়াটেদের সরে যেতেই হবে।

এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েই নতুন ছকে ভাবতে শুরু করেছে পুরসভা। পুরসভার বিল্ডিং দফতর সূত্রের খবর, সংশোধিত পুর আইনে বলা হয়েছে, ভগ্নপ্রায় বা বিপজ্জনক বাড়ি নতুন ভাবে করলে পুরনো বাড়ির যে পরিমাণ অংশে ভাড়াটে রয়েছে, তার সম পরিমাণ বাড়তি এফএআর
(ফ্লোর এরিয়া রেশিও) দেওয়া হবে। দফতরের এক অফিসার উদাহরণ দিয়ে জানান, ধরা যাক একটি ভগ্নপ্রায় বাড়ি প্রায় ৫০০০ বর্গফুটের। মালিকের রয়েছে ৩০০০ হাজার। আর ২০০০ বর্গফুট অংশ ভাড়া দেওয়া রয়েছে। এখন ওই বাড়িটি নতুন করে নির্মাণ করতে চাইলে পুর প্রশাসন ভাড়াটের অংশের সম পরিমাণ অতিরিক্ত নির্মাণ করার সুযোগ দেবে মালিককে। সে ক্ষেত্রে ওই বাড়িটি মালিকের ৩০০০ বর্গফুটের সঙ্গে আরও ৪ হাজার বর্গফুট বেশি অর্থাৎ মোট ৭ হাজার বর্গফুট করার সুযোগ পাবে।

পুরসভা সূত্রের খবর, বিপজ্জনক, ভগ্নপ্রায় এমন বাড়ির সংখ্যা হাজার পাঁচেক। কিন্তু সেই বাম আমল থেকেই এ সব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই পুর প্রশাসনের। তৃণমূল বোর্ডের প্রথম পাঁচ বছরেও ছিল একই ছবি। অথচ কলকাতা না পারলেও মহারাষ্ট্রের ঠানে পুরসভা বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তা জেনেও হুঁশ ফেরেনি কলকাতা পুরসভার।

সম্প্রতি পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে পুর প্রশাসনকে। যেখানে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে মারা গিয়েছেন মালিকেরই দুই পুত্রবধূ। আর সেই রাতেই ঘটনাটি প্রথম কানে আসে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর। যা শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরের বিপজ্জনক বাড়ির বিষয়ে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেন কলকাতার মেয়রকে। কী হবে সেই সিদ্ধান্ত, তা আজ বুধবার শহরের কিছু স্থপতিবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজ্ঞ, বিশিষ্ট সমাজসেবী, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি-সহ পুলিশ, প্রশাসন এবং দমকলের অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে পুরসভায়। মেয়র শোভনবাবুর কথায়, ‘‘বাড়িওয়ালা, ভাড়াটে কেউই আমাদের লোক নয়। কারও স্বার্থ আলাদা করে দেখাটাও আমাদের কাজ নয়। কিন্তু শহরের মধ্যে বিপজ্জনক বাড়ি অনেকের জীবনহানির কারণ ঘটাতে পারে। তাই এই বিষয়টাকে একটা সামাজিক সমস্যা বলেই মনে করছি।’’ আর সেই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই পুরভবনে জরুরি বৈঠক হচ্ছে বলে জানান মেয়র। তাঁর কথায়, ‘‘পাথুরিয়ার ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে এ ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছেন।’’

মেয়র শোভনবাবু এ দিন বলেন, ভগ্নপ্রায় বাড়ির নতুন করে নির্মাণের আকর্ষণ বাড়াতেই ওই সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল বোর্ড। ভাড়াটে এবং বাড়িওয়ালার আর্থিক সমস্যার সমাধানে বাড়ি নির্মাণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কোনও প্রোমোটারকে নিযুক্ত করার কথাও ভাবনায় রয়েছে পুরসভার। তবে মেয়র জানান, সবই সিদ্ধান্ত হবে বুধবারের বৈঠকের পরই। যা কার্যকর হবে কালীপুজোর পর থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন