মন্দার শীতে ভরসা রেখেছে পঞ্জাবি কিন্নো

মেছুয়া বাজারে পাইকারি ফল ব্যবসায়ী রাজা খানের কথায়, শীতের সময়ে মেছুয়াতে কমপক্ষে প্রতিদিন ৩০-৩৫ গাড়ি কমলালেবু আসে। এ বছর সেখানে খুব বেশি হলে ১৫টি করে গাড়ি এসেছে। এখন সেই সংখ্যা আরও কমে গিয়েছে।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৯
Share:

দার্জিলিং লেবুর দেখা মিলছে না শহরের বাজারে। নিজস্ব চিত্র

বাজার ভরে গিয়েছে পঞ্জাবি কিন্নোয়!

Advertisement

দার্জিলিং প্রায় নেই বললেই চলে। নাগপুরও মাঝে কিছু দিনের জন্য এসে ফের উধাও। ফলে শীতের দুপুরে বাঙালির ভরসা কিন্নোই।

এক কালে বাঙালির শীত আর মিষ্টি দার্জিলিং কমলালেবু ছিল প্রায় সমার্থক। এ বার আর তার দেখাই মিলছে না। যেটুকু মিলছে, তা আকারে ছোট, দামও বেশ চড়া। মেছুয়া বাজার পাইকারি ফলপট্টির ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, শীতে দার্জিলিং লেবুর এমন আকাল তাঁরা শেষ কবে দেখেছেন মনে করতে পড়ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, সুন্দরী, স্বাস্থ্যবান পঞ্জাবি কিন্নো বা ‘কিনু’-ই এখন বাজার মাতাচ্ছে।

Advertisement

কলকাতার খুচরো বাজারগুলিতে এ বছর প্রথম থেকেই কমলালেবুর বিশেষ দেখা মিলছিল না। অন্যান্য বছর এই সময়ে ফলের দোকানগুলিতে দার্জিলিংয়ের লেবুতে ভরে থাকে। শীতের আনাজের সঙ্গে বাজারের থলেতে জায়গা করে নেয় সেই লেবু। এ বছর চিত্রটা একেবারেই উল্টো। পঞ্জাবি কিন্নোতেই মন ভরাতে হচ্ছে আমজনতাকে। শীতের জানুয়ারিতে মেছুয়া ফলপট্টিতে গিয়ে দেখা গেল, দার্জিলিং লেবুর খোঁজ করলেই নজর ঘোরানো হচ্ছে ডাঁই করে রাখা কিন্নো লেবুর দিকে। কারণ, দার্জিলিংয়ের কার্যত দেখাই নেই।

মেছুয়া বাজারে পাইকারি ফল ব্যবসায়ী রাজা খানের কথায়, শীতের সময়ে মেছুয়াতে কমপক্ষে প্রতিদিন ৩০-৩৫ গাড়ি কমলালেবু আসে। এ বছর সেখানে খুব বেশি হলে ১৫টি করে গাড়ি এসেছে। এখন সেই সংখ্যা আরও কমে গিয়েছে। ১০ গাড়িতে এসে দাঁড়িয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘দার্জিলিংয়ের লেবুর ফলন এ বছর অত্যন্ত কম। যে কারণে ভাল কমলালেবু কলকাতার বাজারে প্রায় আসেনি বললেই চলে।’’ পাশাপাশি অনেকের বক্তব্য, ভাল লেবু বাংলাদেশেও প্রচুর পরিমাণে রফতানি হয়ে গিয়েছে।

কিন্নো লেবু খেতে মোটেই তেমন সুস্বাদু নয়। ওই ধরনের লেবু সাধারণত রস তৈরি করে তাতে চিনি মিশিয়ে খেতে হয়। কিন্তু পঞ্জাবে গত কয়েক বছর ধরে এই কিন্নো লেবুর ফলন এত হচ্ছে যে দেশের বাজার তো বটেই, বিদেশেও প্রচুর পরিমাণে রফতানি হচ্ছে। মেছুয়া বাজারের ব্যবসায়ী আসগর হোসেন মনে করেন, এ বছর পঞ্জাবের কিন্নো না থাকলে শীতের ফল ব্যবসায়ীরা ব্যাপক মার খেতেন।

টালা থেকে টালিগঞ্জ খুচরো ফল ব্যবসায়ী, সকলেরই বক্তব্য— পাইকারি বাজারে ভাল কমলালেবুই নেই। যদিও বা কিছু পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম এত চড়া যে তাঁদেরও কেনার সাহস হচ্ছে না। ছোট মাপের দার্জিলিং লেবু পাইকারি বাজারেই বিক্রি হচ্ছে ১৬-১৮ টাকায়। একটু বড় হলেই তার দাম ২০ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে ২৫ টাকায় একটা কমলালেবু বাজারে বিক্রি করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

চাঁদনি চক ফল বাজারের ব্যবসায়ী মহম্মদ নজির শনিবার আপেল কুলের মাপের ছোট কমলালেবু বিক্রি করছিলেন। দাম ১০ টাকা করে। একটু বড় হলে ২৫ টাকা। নজির বলেন, ‘‘মেছুয়াতে লেবুই নেই তো কম দামে কী করে ভাল কমলালেবু খাওয়াবো?’’

দার্জিলিং, কালিম্পং-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার কমলালেবু চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পাহাড়ে টানা বন্‌ধের কারণে এ বছর লেবুর বাগানের গাছের পরিচর্যাই তাঁরা করতে পারেননি। পাশাপাশি, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণেও ব্যাপক ভাবে মার খেয়েছে ফলন। অনেকে আবার বলছেন, লেবু চাষ ছেড়ে অনেক চাষি এ বার বড় এলাচ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কারণ লেবুর থেকে এলাচ চাষে লাভ বেশি এবং কম সময়ে ভাল ফলনও দেয়। ফলে অনেক বাগানে কমলালেবু চাষ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন