গঙ্গাপ্রসাদ মুখার্জি রোড

কমেছে আড্ডার পরিধি

সুখ-দুঃখে যেখানে দিন কাটে, সেটাই পাড়া। আমার পাড়ার বিস্তৃতি পদ্মপুকুর রোড থেকে গিরিশ মুখার্জি রোড পর্যন্ত। এই বর্ধিষ্ণু পাড়াটা সময়ের প্রভাবে আজ অনেকটাই বদলেছে। এক কালের বাঙালিপাড়ায় আজ এসেছেন বহু অবাঙালি পরিবার।

Advertisement

জয়ন্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০২
Share:

হেঁইও: টানাটানির যাত্রা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সুখ-দুঃখে যেখানে দিন কাটে, সেটাই পাড়া। আমার পাড়ার বিস্তৃতি পদ্মপুকুর রোড থেকে গিরিশ মুখার্জি রোড পর্যন্ত। এই বর্ধিষ্ণু পাড়াটা সময়ের প্রভাবে আজ অনেকটাই বদলেছে। এক কালের বাঙালিপাড়ায় আজ এসেছেন বহু অবাঙালি পরিবার। ফলে বদলেছে পাড়ার চরিত্রটা। তৈরি হয়েছে হরেক দোকান, বিউটি পার্লার, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। পুরনো সব বাড়ি একে একে ভেঙে তৈরি হচ্ছে বহুতল। তবে নানা কারণে কমেছে যোগাযোগ।

Advertisement

আগে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে প্রতিবেশীরা নিজেরা এসে পরিবেশন করতেন ঠিক আত্মীয়ের মতো। তেমনই পাড়ার কেউ প্রয়াত হলে, কাউকে গিয়ে ডেকে আনতে হতো না। নিজে থেকেই এসে পড়শিরা সাহায্যের হাত বাড়াতেন। এখন সম্পর্কটা মৌখিক মাত্র। মনে পড়ে পাড়ার শম্ভুদা, এককড়িদার কথা। তাঁরা যে কোনও সমস্যায় নিঃস্বার্থে মানুষের পাশে থাকতেন।

অন্যান্য পাড়ার মতো এখানেও নাগরিক পরিষেবা উন্নত হয়েছে। তবে জলকষ্ট রয়েই গিয়েছে। কিছু দিন আগে বাড়ির সামনে একটি গভীর নলকূপ বসানোয় সেই সমস্যা কিছুটা মিটেছে। রয়েছে পার্কিং-এর সমস্যা। পার্কিং-এর জন্য রাস্তায় নামতেই অসুবিধা হয়। কাছেই লেডিজ পার্ক। তবে ইদানীং কচিকাঁচাদের সে ভাবে খেলতে দেখি না।

Advertisement

তবে আমার জীবনের প্রথম অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই পাড়াটা। সে সময়ে পাড়়ায় হাঁক দিয়ে যেত কত ফেরিওয়ালা। খেলনা, পুতুল, হজমি থেকে ঘুগনি কিংবা কুলফিমালাই। এক দিন এরা সকলেই
হারিয়ে গেল। অগ্রহায়ণ মাসে এ পাড়ার বেশ কিছু বাড়ির ছাদে বড়ি দেওয়া হত। ছাদের কার্নিশে বয়ামে শুকতো নানা রকমের আচার। এক বাড়িতে তৈরি আচারের সদ্ব্যবহার হতো অন্য বাড়ির কারও পাতে।

তেমনই দৈনন্দিন জীবনে কর্মব্যস্ততা বাড়ায় কমে এসেছে পাড়ার আড্ডাটা। একে একে রকগুলো হারিয়ে যাওয়াটাই যেন আড্ডায় যবনিকা পতন ঘটাল। আগে আড্ডাই ছিল বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণ। আজ হাজার মনোরঞ্জনের ভিড়ে ফিকে হয়ে এসেছে আড্ডার আকর্ষণটাও। মাঝেমাঝে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দু’-এক জনকে আড্ডা দিতে দেখলেও পাড়ার যুব সম্প্রদায়কে আড্ডা দিতে দেখি না। আগে পাড়াতেই রাধুর চায়ের দোকানে বসত জমাটি আড্ডা। সেই দোকানটা আজ আর নেই। আগে কাছাকাছির মধ্যে বেশ কয়েকটি ভাল লাইব্রেরি ছিল। তবে পাঠক সংখ্যা কমে আসায় এখন বেশির ভাগই আর নেই।

মাঝেমাঝে স্মৃতি মেদুর হয়ে ডুব দিই অতীতে। মনে পড়ে পাড়ার কত ঘটনা। পাড়ার অতীত আর বর্তমান যেন দুই ভিন্ন জগৎ। বর্তমানের চেয়ে সেটাই বোধহয় বেশি সুখপ্রদ।

লেখক শিক্ষক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন