‘কমজোর’ বাঙালিকে বাঁচাতে বিতর্ক

বাঙালি আসরে নামলে, পারস্পরিক যুদ্ধং দেহী ভাব তো থাকবেই! রাজ্যে শাসক দলের অনুগত, কবি সুবোধ সরকার বাঙালির ঐক্যের শক্তিতে বিশ্বাসী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫১
Share:

আড্ডা: মঞ্চে সঞ্চালক কুনাল সরকারের সঙ্গে বক্তা শমীক ভট্টাচার্য। রয়েছেন স্বাতী গৌতম। নিজস্ব চিত্র

সময়টা খুব ভাল যাচ্ছে না বাঙালির! শনিবার সন্ধ্যায় ক্যালকাটা ডিবেটিং সার্কলের বচ্ছরকার বিতর্কসভাতেও সেই আফশোস ঘনিয়ে উঠল।

Advertisement

‘বাঘের মতো বাঙালিরও কি সংরক্ষণ দরকার?’— লেক ক্লাবের আসরে সবার আগে বলতে উঠে প্রাক্তন আমলা তথা সংস্কৃতি-ইতিহাস সংক্রান্ত প্রাবন্ধিক জহর সরকারই মূল সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন। ‘‘সংস্কৃতির আসল জোরটাও কিন্তু সাহিত্যে বা কবিতায় নয়, অর্থনীতি ও রাজনীতির জোরেই তা বাঁচে!’’ রাজনীতি-অর্থনীতির এই দুর্বলতাই কি বাঙালিকে বাঘের মতো বিলুপ্ত প্রায় করে তুলছে। এই কথার সূত্র ধরেই উঠে এল, কী ভাবে ভাঙা-ভাঙা হিন্দিই হয়ে উঠছে বাঙালির কাজের ভাষা। বিয়ে-পার্বণ-ধর্মাচারণে বুঝে না বুঝে উত্তর ভারতের সংস্কৃতি জাঁকিয়ে বসছে।

তবে বাঙালি আসরে নামলে, পারস্পরিক যুদ্ধং দেহী ভাব তো থাকবেই! রাজ্যে শাসক দলের অনুগত, কবি সুবোধ সরকার বাঙালির ঐক্যের শক্তিতে বিশ্বাসী। আবেগপ্রবণ। কট্টর সরকার বিরোধী আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ কিছুটা ‘দুর্মুখ’। পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, ত্রিপুরা— কোথাও ঠিকঠাক ভোট হয় না। এ কথা বলে শাসকের সামনে বাঙালির মেরুদণ্ডহীনতাকেই দুরমুশ করলেন অরুণাভ। এই অবস্থার সমাধান তাঁর জানা নেই। সুবোধ কিন্তু অদম্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হলে বাঙালির সমস্যা মিটে যাবে!’’

Advertisement

অধুনা সংসদীয় বিতর্ক নিয়ে হতাশার দিনকালে, বিতর্কের আসর অন্য ভাবে সাজিয়েছিলেন সঞ্চালক, চিকিৎসক কুণাল সরকার। এক-এক জন বক্তার কথা কাটাছেঁড়ায় দর্শকাসনে এক-এক জন আলোচক। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য আফসোস করছিলেন, আত্মবিস্মৃত বাঙালিকে নিয়ে। বাঙালি বেছে-বেছে প্রতিবাদ করে! এই বাংলার বাঙালি মনীষীদের সম্মান করে না! বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের কষ্ট আমল দেয় না। বাঙালির মধ্যে ফাটল ধরানোর জন্য তাঁর দিকে আঙুল তুললেন জনৈক দর্শক। জটায়ু থাকলে এখন ‘কোচবিহারে কুচকাওয়াজ’ লিখতেন শুনতে হল শমীককে।

তবু বাঙালির দুরবস্থার জন্য বাঙালিই দায়ী, দৃঢ় স্বরে বললেন সাংবাদিক চন্দ্রিল ভট্টাচার্য। আজকের বাঙালি স্বধর্মচ্যুত। উৎকর্ষ নয় ফাটকাবাজিতেই তার মোক্ষ। আবার একবেলা রেড মিট খেতেও অপরাধবোধ। সংরক্ষণে এই কমজোর জাতিকে বাঁচানোর পথেই শেষটা গণভোটে সায় দিয়ে ফেললেন আসরের বেশিরভাগ দর্শকই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন