ডেঙ্গ-২ জীবাণু মিলল সরকারি রিপোর্টেই

ইতিমধ্যেই পুর স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গ-২ টাইপ চিহ্নিত করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান তিনি। এর জন্য আইজিজি (এক বার ডেঙ্গি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে ফের শরীরে ওই জীবাণু ঢুকলে, তা জানা যায় এই পরীক্ষায়) টেস্ট করানোর পরিকাঠামো তৈরি করছে পুরসভা।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৬
Share:

—প্রতীকী ছবি

ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে ছ’জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে পুর বৈঠকে। তাঁদের মধ্যে তিন জন আক্রান্ত হয়েছিলেন ডেঙ্গ-২ টাইপে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা পতঙ্গবাহী রোগ নির্ণয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস’ বা ‘নাইসেড’ রক্ত পরীক্ষা করে ওই রিপোর্ট দিয়েছে। যে তিন জনের রক্তে ডেঙ্গ-২ মিলেছে, তাঁদের মধ্যে আছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গোকুল মুখোপাধ্যায়, বিজয়গড়ের ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৌ মুখোপাধ্যায় এবং কলেজ স্ট্রিট এলাকায় ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শীর্ষেন্দু ঘোষ। এঁরা সকলেই সম্প্রতি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা হয়েছিল। এঁদের রক্ত পুরসভাই পাঠিয়েছিল নাইসেড-এ। এই রিপোর্ট পেয়ে কার্যত চিন্তায় পুর কর্তৃপক্ষ। মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গ-২ নিয়ে আগে থেকেই সকলকে সতর্ক করা হচ্ছিল। ডেঙ্গির ওই টাইপ গত বছর পর্যন্তও তেমন ভাবে দেখা যায়নি। তবে এ বার বেশ কিছু রক্ত পরীক্ষায় তা ধরা পড়ছে।’’

Advertisement

ইতিমধ্যেই পুর স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গ-২ টাইপ চিহ্নিত করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান তিনি। এর জন্য আইজিজি (এক বার ডেঙ্গি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে ফের শরীরে ওই জীবাণু ঢুকলে, তা জানা যায় এই পরীক্ষায়) টেস্ট করানোর পরিকাঠামো তৈরি করছে পুরসভা। পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, এক বার যাঁদের ডেঙ্গি হয়েছে, তাঁদের ডেঙ্গ-২ ধরা পড়ার আশঙ্কা বেশি। সময়ে চিকিৎসা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ বার শহরে আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি অস্বস্তিতে ফেলছে রাজ্য ও পুর প্রশাসনকে। প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে পুরসভার পক্ষ থেকেই জ্বরে আক্রান্ত ১৬ জনের রক্ত পাঠানো হয়েছিল নাইসেড-এ। প্রতি ক্ষেত্রেই ডেঙ্গ-২ জীবাণু মিলেছিল। তার পরেই ডেঙ্গ-২ নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে পুর প্রশাসন।

জেলাগুলি থেকেও তো ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবর মিলছে। সেখান থেকেও কি মৃতদের রক্ত পাঠানো হচ্ছে নাইসেড-এ? স্বাস্থ্য প্রশাসনের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘তেমনটা শোনা যায়নি। নাইসেড কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। তাই রাজ্য তাদের ততটা নির্ভর করতে চায় না।’’ তবে সামগ্রিক ভাবে ডেঙ্গির টাইপ নির্ণয়ে এখনই কোমর বেঁধে না নামলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। বুধবার বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা রূপকথা পোলাইয়ের মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এ তার ক্ষেত্রেও এই পরীক্ষা করানোর কথা ভাবছে পুরসভা।

Advertisement

পুর সূত্রে খবর, কলকাতা পুর এলাকায় এ বছরে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৩০। গত সপ্তাহে ছিল ১৫৬০। কলকাতায় বেসরকারি হিসেব অনুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ ছাড়িয়ে গিয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সামনে ডেঙ্গির টাইপ নিয়ে কথা হয়েছিল। তা যে ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেই প্রসঙ্গ তোলা হয়েছিল। এখন তা বোঝা যাচ্ছে। এখনই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন