Dengue

সচেতনতার বালাই নেই পুরপিতাদের

ওই আমলাদের বক্তব্য, কাউন্সিলরদের প্রধান দায়িত্ব হল, তাঁদের এলাকায় বছরভর মশা মারার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, ওয়ার্ড স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকছে কি না, সেখানে চিকিৎসকেরা নিয়মিত যাচ্ছেন কি না, রক্ত পরীক্ষা ঠিকঠাক হচ্ছে কি না— প্রভৃতি বিষয় দেখা।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরেরা আদৌ তাঁদের ওয়ার্ডে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে তৎপর কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন পুরসভার আমলাদের একাংশ।

Advertisement

ওই আমলাদের বক্তব্য, কাউন্সিলরদের প্রধান দায়িত্ব হল, তাঁদের এলাকায় বছরভর মশা মারার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, ওয়ার্ড স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকছে কি না, সেখানে চিকিৎসকেরা নিয়মিত যাচ্ছেন কি না, রক্ত পরীক্ষা ঠিকঠাক হচ্ছে কি না— প্রভৃতি বিষয় দেখা। আর এ সব নিয়ে কাউন্সিলরদের সজাগ রাখতে পুরসভার তরফে প্রায়ই আলোচনাচক্রের ব্যবস্থা করা হয়। ডাকা হয় বৈঠকও। ওই সব আলোচনাচক্র এবং বৈঠকে কাউন্সিলরদের উপস্থিতির হার কিন্তু নগণ্য।

পুরসভার এক আমলার মন্তব্য, ‘‘আমাদের ওই সব আলোচনাচক্র ও বৈঠকে থাকতে হয় জায়গা ভরাতে। কিন্তু যাঁদের জন্য ওই আয়োজন, তাঁরা আসছেন কি না, তা দেখা হয় না কখনও।’’ পুর নথি বলছে, ওই বৈঠকে কাউন্সিলরদের উপস্থিতির হার মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ, ১৪৪টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট পুরসভার মাত্র ৩০-৩৫ জন কাউন্সিলর থেকেছেন ওই সব কর্মসূচিতে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, গত জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গি দমনে পুরসভার কর্মসূচি চলছে। কিন্তু তাতে আগ্রহ দেখা যায়নি অনেকেরই। এ বিষয়ে পুরসভার এক মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘বেশির ভাগ কাউন্সিলরেরই নির্মাণকাজ নিয়ে আগ্রহ বেশি। যে সব কাজে ঠিকাদারদের প্রয়োজন হয়, সেখানেই কাউন্সিলরদের উৎসাহ। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে নয়।’’

শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তেই পুর প্রশাসন এবং পুর স্বাস্থ্য দফতরের ‘অপদার্থতা’ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন কাউন্সিলরেরা। তাতে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শাসক দলের কাউন্সিলরেরাও। আর আমলা-অফিসারেরা আঙুল তুলেছেন কাউন্সিলরদের একটি বড় অংশের উদাসীনতার দিকে। পুরসভা সূত্রের খবর, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে কোন কাউন্সিলর কেমন কাজ করেছেন, সে বিষয়ে পুর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব মূল্যায়ন করে একটি তালিকা তৈরি করেছেন।

২০১০ সালে তৃণমূল পুরসভার ক্ষমতায় আসার আগে ওই দলের কর্মী-সমর্থকেরা দেওয়ালে লিখতেন, ‘ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া সরকার, আর নেই দরকার’। সেই সরকার আর নেই ঠিকই, কিন্তু ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া থেকে নিস্তার মেলেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে ‘ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’— সব সংস্থাই বলছে, মশাবাহিত রোগ নিবারণের ভিত্তিই হল জন-সচেতনতা বাড়ানো। জমা জল থেকে মশার বংশ বৃদ্ধি রুখতে একটাই স্লোগান, জল জমতে দেবেন না। জঞ্জাল জমতে দেবেন না। আর এই কাজটা সরকারি কর্মীদের করতে হয় ঠিকই। তবে সেই কাজে জনপ্রতিনিধিরা হাত না লাগালে সমস্যা বাড়ে।

দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর, খিদিরপুর, কসবা, যাদবপুর, ঢাকুরিয়া, বাঘা যতীন, বাঁশদ্রোণী, নাকতলা-সহ একাধিক এলাকায় জঞ্জাল পড়ে থাকা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বাসিন্দাদের। পুর নথি বলছে, ঢাকুরিয়া ও যোধপুর পার্কে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ৯৩ এবং ৯১ নম্বর ওয়ার্ডে। ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবার পুরসভার মেয়র পারিষদ রতন দে। ওই ওয়ার্ডে কর্মরত এক পুরকর্মীর কথায়, ‘‘অনেক বাড়ির ছাদে বাগান রয়েছে। ঢুকতে না দেওয়ায় সেখানে জল জমে আছে কি না দেখা যাচ্ছে না।কাউন্সিলর একটু দৃষ্টি দিলে ভাল হয়।’’

অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন রতনবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গি এখন অনেকটা কমেছে। শুধু আমি নয়, আমাদের দলের ছেলেরাও কাজে নেমে পড়েছে।’’

১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এলাকার সৌন্দর্যায়ন নিয়ে যতটা আগ্রহী, মশা দমন নিয়ে ততটা উদ্যোগী নন। বাঁশদ্রোণী এলাকার ১১২ এবং ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডেঙ্গিবাহী মশা দমনের কাজ নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। কলকাতা পুরসভার নথি বলছে, এ বার সব থেকে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১০, ১১ এবং ১২ নম্বর বরোয়।

উত্তর কলকাতার বিবেকানন্দ রোডে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও মশা দমনের কাজ নিয়ে উদ্যোগী নন বলে অভিযোগ। একই অবস্থা এক নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষেত্রেও। কাশীপুর এলাকা এমনিতেই ডেঙ্গিপ্রবণ। দমদম ও দক্ষিণ দমদম লাগোয়া কলকাতা পুরসভার ওই এলাকা নিয়েও চিন্তায় পুর প্রশাসন। তবে কলেজ স্ট্রিট, উল্টোডাঙা, কাঁকুড়গাছি এলাকায় মশা দমনের কাজে সন্তুষ্ট পুর প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন