এক হাতে নতুন কেনা ট্রলি-ব্যাগের হ্যান্ডেল। অন্য হাতে বছর চারেকের মেয়ে। বাবা আগে আগে। পিছনে দুই মহিলা। এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ধরে এগিয়ে একদম পার্ক স্ট্রিটের প্রান্তে গিয়ে দাঁড়ালেন তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে মেট্রোও হাজির। মেয়ের হাত ধরে কোনও ক্রমে ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে উঠলেন ভদ্রলোক। ধাক্কাধাক্কিতে প্ল্যাটফর্মেই রয়ে গেলেন সঙ্গী দুই মহিলা। কোনওক্রমে সামলে উঠে একে অপরকে বললেন, ‘‘যাক! ব্যাগটা উঠেছে ভাগ্যিস! ওটাতেই পুজোর জামাকাপড় ছিল।’’
রবিবারের দুপুরে ভিড়ের চাপে মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনে দমদমমুখী মেট্রোর দরজা বন্ধ হচ্ছিল না। মিনিট ১৫ চেষ্টার পরে মেট্রোকর্মী ও আরপিএফ প্ল্যাটফর্মে ছোটাছুটি করে দরজা থেকে প্রায় ঝুলন্ত যাত্রীদের কার্যত হাতজোড় করে নামিয়ে দরজা বন্ধের ব্যবস্থা করেন।
এক দিকে যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ডার্বি ম্যাচ, অন্য দিকে পুজোর বাজার। এই দুইয়ের যুগলবন্দিতে প্রায় সারাদিনই অস্বাভাবিক ভিড়। মেট্রো থেকে নামা-ওঠা করতে গিয়ে কালঘাম ছুটেছে নিত্যযাত্রীদের।
রবিবার এমনিতেই মেট্রো চলে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে। ফলে অন্য দিনের চাইতে ট্রেনও কম। তার উপরে খেলা দেখতে যাওয়া সমর্থক ও পুজোর বাজার করতে যাওয়া আমবাঙালি পুরো ভিড়টাই এ দিন আছড়ে পড়ে মেট্রোর উপরে। ফলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড়ে ঠাসাঠাসি অবস্থা চলেছে। কাজের দিনে মেট্রোয় এখন দিনে পৌনে ৬ লক্ষ থেকে সাড়ে ৬ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। রবিবার বা অন্য ছুটির দিনগুলিতে গড়ে যাত্রী সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে চার লক্ষের কাছাকাছি। এ দিন সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে।
যাত্রীদের বক্তব্য, মেট্রো কর্তৃপক্ষের বোঝা উচিত ছিল, পুজোর আর এক মাসও নেই। ফলে প্রতিটি রবিবারেই কেনাকাটা সারতে শহরতলি থেকে কলকাতায় আসবেন মানুষ। স্বাভাবিক ভাবেই ভিড় বাড়বে মেট্রোয়। তার উপরে যোগ হয়েছে যুবভারতী যাওয়া-আসার ভিড়। তা সত্ত্বেও অন্যান্য ছুটির দিনের নিয়মে মেট্রো চলাচল করায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে আরও।
মেট্রো সূত্রে খবর, পুজোর ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত ট্রেন চালানো, বেশি যাত্রী হলে কী ভাবে তা সামাল দেওয়া হবে, সুরক্ষা-ব্যবস্থাই বা কী হবে সে সব নিয়ে মেট্রোকর্তারা ইতিমধ্যে কয়েক দফা ঘুরে দেখেছেন। এ দিনও মেট্রোকর্তাদের কেউ কেউ আগাম প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন। মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “প্রত্যেক বছরের মতো এ বারও পুজোর সময়ে (সেপ্টেম্বর) সারা মাস ধরেই শনি-রবিবার অন্য দিনের মতো পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।” উৎসবের দিনগুলিতে অন্য বারের মতোই বাড়তি ট্রেনের ব্যবস্থা হবে বলেও তিনি জানান।