গঙ্গায় পিতৃতর্পণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
একলা ঘরের আধো-অন্ধকারে মহালয়া শোনার রেওয়াজ এখন অতীত। বরং সাতসকালে রেডিও খুলেই ফেসবুক-হোয়াট্স অ্যাপের মজলিস জমে উঠেছিল। মঙ্গলবার বেলা বাড়তেই পুজোর বাজারের আড্ডাও নেট-পাড়ার জরুরি ট্রেন্ড হয়ে উঠল।
ক’দিন ধরে খামখেয়ালি বৃষ্টির চক্রান্তে নাজেহাল হলেও কলকাতার জন্য দেবীপক্ষের সূচনাটা ছিল মোটামুটি খটখটে। গঙ্গার ঘাটে তলিয়ে যাওয়ার একটি ঘটনা বাদ দিলে পিতৃপক্ষের অবসানে সাতসকালে তর্পণ-পর্ব মসৃণ ভাবেই কেটেছে। সেই সঙ্গে বাজারুদের উৎসবে বাড়তি মাত্রা যুক্ত হয় ট্যাক্সি-ধর্মঘটের অবসানেও।
পুজোর বাজার শুরু হয়েছিল সেই সকাল-সকাল! ক্রমশ হাতিবাগানের ফুটপাথ থেকে গড়িয়াহাটের মল সর্বত্র বাজার করায় স্লগ ওভারের জঙ্গি মেজাজটাই ঝাঁঝিয়ে উঠল।
কেনাকাটার ফাঁকে-ফাঁকে স্মার্টফোনে শপিং-সংক্রান্ত টিপ্স বিনিময়ও চলেছে পুরোদমে। দামি তসর বা কেরল কটন কেনার পরে একটু সস্তার টাঙ্গাইল কোথায় মিলবে? ফোনে-ফোনে কনফারেন্স বেশ জমজমাট। মানে, ২০১৪-র পুজোর কাউন্টডাউনে বাস্তব জগৎ ও তার সমান্তরাল নেট-দুনিয়া দু’টোই তীব্র ভাবে বহাল। দীর্ঘদিন প্রবাসের পরে সদ্য শহরে ফেরা এক প্রবীণ দম্পতি কিন্তু বলছিলেন, ঘুরে ঘুরে পুজোর বাজার না-করলে মন ভরে না! শপিং মলের এক ছাদের নীচে সব পেয়ে যাওয়াটা মোটেই সব সময়ে ভাল নয়!
খুদে পুরোহিত। মহালয়ার সকালে গঙ্গায় তর্পণ। মঙ্গলবার উত্তর
কলকাতার একটি ঘাটে শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
পুজোর সাজের এই উদ্দীপনার সঙ্গে তাল মিলিয়েই জমে ওঠে মণ্ডপের প্রস্তুতিও। শুভ দিন দেখে প্রতিমায় চক্ষুদান করেছেন হেভিওয়েট ‘দাদা’র বিগ বাজেট পুজোর নামী শিল্পী। কুমোরটুলি থেকে প্রতিমার মণ্ডপযাত্রাও শুরু। তাই পুলিশের মাথাব্যথাও এখন থেকেই বাড়ছে। দুপুরে উত্তর কলকাতার রাস্তায় কতর্ব্যরত দুই পুলিশকর্মী আলোচনা করছিলেন, পুজোর ডিউটি এখন মোটামুটি মহালয়ার বিকেল থেকেই শুরু!
উৎসবের দিনে বেসুরে বাজার মতো ঘটনাও অবশ্য ঘটেছে। প্রিন্সেপ ঘাটে সকালেই গঙ্গায় স্নান করতে নেমে নিখোঁজ হয়ে যান এক প্রৌঢ়। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর নাম প্রতাপ সিং রসাইলি। বাড়ি নিউ মার্কেটের কলিন স্ট্রিটে। সকালে ছেলের সঙ্গে তর্পণ করতে এসেছিলেন তিনি।