‘স্যামন-টুনায় পিৎজ়া হলে ইলিশে হবে না কেন?’

পার্ক স্ট্রিটের মোক্যাম্বোয় গ্রিল্‌ড ইলিশের সেই পদটা আজও আদি-অকৃত্রিম। সাদা প্লেটে কলাপাতার বিছানায় শায়িত এক খণ্ড কাঁটামুক্ত ইলিশ। অ্যাঞ্চোভি সস-শেরিতে স্নাত। মনসুর আলি খান পটৌডিকে ইলিশ-দীক্ষিত করতে শর্মিলা ঠাকুর নাকি সেটাই ধরিয়েছিলেন।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০২:৪২
Share:

পিৎজাতেও এবার শোভা পাচ্ছে ইলিশ। নিজস্ব চিত্র।

কলকাতার রেস্তরাঁ জগতের বুজুর্গমহলে সুবিদিত সেই পুরনো গল্প। অর্ধশতক আগে এক গুণবতী-রূপবতী বাঙালিনী ও তাঁর মহাতারকা হবু বরের ইলিশ-অভিসার কথা!

Advertisement

পার্ক স্ট্রিটের মোক্যাম্বোয় গ্রিল্‌ড ইলিশের সেই পদটা আজও আদি-অকৃত্রিম। সাদা প্লেটে কলাপাতার বিছানায় শায়িত এক খণ্ড কাঁটামুক্ত ইলিশ। অ্যাঞ্চোভি সস-শেরিতে স্নাত। মনসুর আলি খান পটৌডিকে ইলিশ-দীক্ষিত করতে শর্মিলা ঠাকুর নাকি সেটাই ধরিয়েছিলেন। মোক্যাম্বোর প্রবীণ কর্তা নীতিন কোঠারির কাছে শোনা, ইলিশের সেই স্বাদ নবাব পটৌডির কাছে খানিক ‘স্ট্রং’ ঠেকেছিল।

পশ্চিমী শৈলীর সেই সাবেক ইলিশের পথ ধরে মৎস্যকুলতিলকের বিচিত্র অবতারকে আপন করেছে আজকের কলকাতাও। যা বার বার ভেঙে দিচ্ছে ইলিশ উপভোগের চিরকেলে ব্যাকরণ। বেঙ্গল ক্লাবের ধ্রুপদী স্মোক্ড ইলিশ-টিলিশ তো আছেই, প্রতি বছর ইলিশ-জোগান নিয়ে ঘোর দুর্ভাবনার পটভূমিতেও ইলিশ নিয়ে নিরীক্ষার স্পর্ধায় অক্লান্ত এ শহর। যেমন এ বারই তাজ বেঙ্গলের কফিশপ ক্যাল২৭-এ ইলিশ খণ্ডখচিত চমৎকার পিৎজ়া মজুত। পেপারনি বা টুনার টপিংয়ের জনপ্রিয় পিৎজ়াকুলে ঢুকে পড়েও মাথা উঁচু করে লড়ছে ইলিশ। সসের ছোঁয়া যৎসামান্য। বেল পেপার-গেরকিন-পেঁয়াজের কচকচে ভাবটির সঙ্গে দিব্যি জুতসই পিৎজ়ার চি়জ়ের পরতে ইলিশখণ্ড। এগ়জিকিউটিভ শেফ সোনু কৈথারা বলছিলেন, ‘‘স্যামন-টুনায় পিৎজ়া হলে ইলিশে হবে না কেন?’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ইলিশ উপচে পড়ছে ডায়মন্ড হারবারে

গত কয়েক বছরে কখনও মার্কোপোলোয় জমে উঠেছে, টক-টক গেরকিনযোগে ইলিশ-ডিমভাজা কিংবা বোহেমিয়ানে মন জয় করেছে ইলিশ ডিমের ললিপপ। বোহেমিয়ানের কর্ণধার তথা শেফ জয়মাল্য বন্দ্যোপাধ্যায় একদা ইলিশ ভাজা দিয়েই ভেটকির ফ্রাইকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন। ইলিশের কাটলেট ভাজতে গিয়ে অনেক শেফই আগে ব্যাটারে ডিমের তীব্র গন্ধের সঙ্গে টক্কর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ যাত্রা, পুরু কাঁটাবিহীন ফিলের গায়ে বড়িভাজার গুঁড়োর পরতে শেফ জয়ের বাজিমাত। হাল্কা ডিমের সাদার বেশি কিছু মেশেনি এই ব্যাটারে।

আগে ওহ ক্যালকাটা-ও সুরার সঙ্গতে পুঁচকে ইলিশখণ্ডের কানাপে তৈরি করেছে। এখন তাদের মেনুর বড় আকর্ষণ ইলিশের চৌকো প্যাটিতে মোচা-নারকোলের গা-মাখা। শেফ সুবীরও নানা জায়গা ঘুরে ইলিশের জন্য ফর্মুলা আহরণ করেছেন। মেঘনা নদীর স্টিমারের মাঝিদের শৈলী থেকে নেওয়া নারকোলের দুধের ইলিশের নাম শুনেই বাঙালির মনটা উল্‌স করে ওঠে। মার্কোপোলোর বোনলেস ইলিশের উৎসব বচ্ছরকার পার্বণ। শেফ অমিতাভ চক্রবর্তী জানেন, কাঁটাবিহীন ভাপা, মরিচদীপ্ত বরিশালি ইলিশ, ইলিশের কোর্মা বা রকমারি বেক্‌ড পদে কী ভাবে ইলিশের চেনা গন্ধ বজায় রাখতে হয়। ইলিশের সেই গন্ধ কাঁটামুক্ত ইলিশে থাকে না বলে বাঙালির হা-হুতাশ শোনা যায়। কলকাতার শেফরা অনেকেই এখন বোনলেস ইলিশের কাইঝোলেও ইলিশের মুড়োল্যাজা সেদ্ধ করা নির্যাস বা স্টক মিশিয়ে থাকেন। তাতে কাঁটাছাড়া হয়েও ইলিশের স্বাদের খামতি দূরে হটে।

সিক্স বালিগঞ্জ প্লেসের ইলিশ পাতুরি একেবারে নিষ্কণ্টক। চালকুমড়োর স্যান্ডউইচে ইলিশ পুরের ভাজাও রয়েছে। মাংস-বেগুনের গ্রিক পদ মুসাকার প্রেরণায় বেগুনের ফালিতে বন্দি ইলিশ দিয়ে একটা ঝোলও করছেন শেফ সুশান্ত সেনগুপ্ত। বোহেমিয়ানে জয়মাল্য শীঘ্রই নিয়ে আসছেন স্প্যানিশ শৈলির মাছমাংসের ঝোল এসকার্বের ঢঙে টক-টক অভিনব ইলিশ ঝোল।

ভরা বর্ষাতেও ইলিশের জোগান নিয়ে অনিশ্চয়তায় বেশির ভাগ রেস্তোরাঁয় এখন হিমায়িত ইলিশ ভরসা। তা-বলে বাঙালির চিরন্তন প্রেমকে নতুন আঙ্গিকে আবিষ্কার করায় একফোঁটা ক্লান্তি নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন