কাজের চাপ, নোটিস সাঁটলেন জেরবার চিকিৎসকই

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সঙ্কট তৈরি হয়েছে ইএসআই ও স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে সব হাসপাতালেই। চিকিৎসকেরা অনেক বার জানিয়েছেন, বিপুল রোগীর চাপ সামলানো দুঃসহ হয়ে উঠেছে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০২:১৮
Share:

সেই নোটিস। নিজস্ব চিত্র

প্রবীণ চিকিৎসক নিজেই নোটিস ছাপিয়ে হাসপাতালের সর্বত্র সেঁটে দিয়েছেন!

Advertisement

নোটিসের মূল প্রতিপাদ্য— তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন। শরীরও বিশেষ ভাল নয়। তা সত্ত্বেও সরকার তাঁকে একসঙ্গে দু’-দু’টি হাসপাতালে কাজ করতে বাধ্য করছে। ফলে তিনি কোনও জরুরি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে পারবেন না! নোটিসের নীচে নিজে সইও করেছেন।

শ্রম দফতরের অধীনে উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটেছে। ২১৬ শয্যার এই হাসপাতালে সব সময় রোগীর চাপ থাকে। ফি দিন আউটডোরে ২৫০-৩০০ জন রোগী আসেন। প্রতিবাদী চিকিৎসকের নাম উদয়কুমার দাস (৬০)। রেডিওলজিস্ট। তাঁর পোস্টিং ব্যান্ডেল ইএসআই-এ। কিন্তু গত বছর অগস্ট থেকে সপ্তাহে এক দিন তাঁকে ব্যান্ডেলে থাকতে হয়, বাকি পাঁচ দিন ডিউটি করতে হয় উলুবেড়িয়ায়। ইএসআই কর্তৃপক্ষের যুক্তি, রেডিওলজিস্ট পাওয়া যাচ্ছে না।

Advertisement

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সঙ্কট তৈরি হয়েছে ইএসআই ও স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে সব হাসপাতালেই। চিকিৎসকেরা অনেক বার জানিয়েছেন, বিপুল রোগীর চাপ সামলানো দুঃসহ হয়ে উঠেছে। কিন্তু একেবারে নোটিস আটকে কাজ করতে না পারার ঘোষণা! সরকারি পরিকাঠামোয় এর পরিণাম মারাত্মক হতে পারে, এটা কি তিনি জানেন না?

উদয়বাবুর জবাব, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। বয়স হয়েছে। প্রেশার-সুগার-হাইপার টেনশনে জর্জরিত। কোথায় এখন অবসর নেব, তা না সরকার অবসরের বয়স ৬২ করে দিল! অবসরকালীন সুবিধার জন্য চাকরিটা করতে হচ্ছে। কিন্তু এই বয়সে এত চাপ নেওয়া কি সম্ভব!’’ উদয়বাবুর দাবি, শুধু উলুবেড়িয়ায় মাসে তাঁকে একা ৪৫০-৫০০ আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে হয়। অধিকাংশই জরুরি থাকে। মাসে এক্স-রে করতে হয় ১৪০০-১৫০০টি। এ ছাড়া কিডনির কিছু পরীক্ষা, বেরিয়াম— সব একা করতে হয়। উলুবেড়িয়ায় আরও এক জন রেডিওলজিস্ট রয়েছেন। তাঁকেও এই হাসপাতালের পাশাপাশি কল্যাণী ও শ্রীরামপুরে গিয়ে ডিউটি করতে হয়।

উদয়বাবু বলেন, ‘‘অন্য হাসপাতালে ডিউটি করাচ্ছে বলে যে বেশি টাকা দেবে, তা-ও নয়। সরকার বলছে, ‘জনস্বার্থে’ এই অতিরিক্ত কাজ করতে হবে। অথচ নতুন লোক নিচ্ছে না। কত বার যে ইস্তফা দিতে চেয়েছি। কর্তৃপক্ষ হেসে বলেছেন, ‘দিয়ে দিন, আমরা অনুমতি আটকে দেব। আপনার নির্ধারিত ২০২০ সালেই ছাড়ব।’ ভাবুন!’’ হাসপাতালের সুপার সমীর কুমার মাইতির বক্তব্য, ‘‘নিজের সমস্যা জানিয়ে তিনি রোগীদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। নোটিসের দায় ওঁর। আমি বারণ করেছিলাম।’’

পরিকাঠামো নিয়ে নাজেহাল হয়ে মুখ খোলার নজির চিকিৎসক অরুণাচল দত্তচৌধুরী-সহ কয়েক জনের ক্ষেত্রে নিকট অতীতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের শাস্তির কোপেও পড়তে হয়েছে। উলুবেড়িয়া ইএসআই-এর মতো নামী হাসপাতালেও চিকিৎসকের অভাবে পরিকাঠামো ভেঙে পড়তে বসেছে। হাসপাতালের একমাত্র সার্জন ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসর নিয়েছেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি ছুটিতে ছিলেন। সুপার নোটিস জারি করে জানিয়েছেন, ১৫ তারিখ থেকে ইমার্জেন্সি-সহ সমস্ত অস্ত্রোপচার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ! কবে অচলাবস্থা কাটবে, কেউ জানে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন