এত বছর ধরে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে কাজ হয়নি। তামাক সেবনের প্রবণতা পুরোপুরি কমাতে তাই আইনের পথ নিতে হবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের মতে, এর জন্য সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে হবে। তাঁরা চান, স্কুলের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ-সহ এই সংক্রান্ত আইন কার্যকরে সরকার কড়া হোক।
পরিসংখ্যান বলছে, এ রাজ্যে প্রতি বছর নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ। তাঁদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই আক্রান্ত হচ্ছেন মুখ ও গলার ক্যানসারে। পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসার সর্বাধিক। আর এখানেই চিকিৎসকেরা শঙ্কিত। সরকারের উপরে এ নিয়ে চাপ বাড়ানোর লক্ষ্যে তাই রবিবার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিয়ে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত স্তরে বহু চিকিৎসক তামাকমুক্ত পশ্চিমবঙ্গ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এ বার অনেকে মিলে চেষ্টা শুরু করেছি। মনে হয়, কাজটা এ বার আরও একটু সহজ হবে।’’ নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে চিকিৎসকেরা হাতে হাত মিলিয়ে এই কাজে নামলে আরও বেশি সাফল্য মিলবে বলে মনে করেন রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও বিধায়ক চিকিৎসক নির্মল মাজিও।
মাসখানেক আগে আবেশ দাশগুপ্তের রহস্যমৃত্যুর তদন্ত-পর্বেই গ্রেফতার করা হয়েছিল তিন মদবিক্রেতাকে। অভিযোগ ছিল, আবেশ ও তার বন্ধুরা প্রাপ্তবয়স্ক না হলেও, তাদের মদ বিক্রি করেছিলেন তাঁরা। কী ভাবে স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীদের হাতে নেশার সামগ্রী আসছে তা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রশ্নও উঠেছিল। কিন্তু শহরের বাস্তব চিত্র বলছে, শুধু সুরা নয়, তামাকজাত দ্রব্যও স্কুলপড়ুয়াদের কাছে যথেষ্ট সহজলভ্য। সারা বছর সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করেও সেই ছবি বদলানো যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আইন মানা হচ্ছে কি না, সে দিকে আরও নজর দিতে হবে। এ দেশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির সুস্পষ্ট আইন রয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের তামাকসেবন রুখতে যে কোনও স্কুলের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ। অথচ কলকাতা শহরের বহু স্কুলের কাছেই দেদার বিক্রি হচ্ছে সিগারেট, পানমশলা-সহ তামাকজাত দ্রব্য। যার অর্থ, আইন থাকলেও তার প্রয়োগ হচ্ছে না। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা। তাঁদের একাংশ চান, এই আইন কড়া ভাবে প্রয়োগ
করুক সরকার। তামাকজাত পণ্য কেনার প্রবণতা কমাতে প্রয়োজনে তার উপরে রাজ্যের কর আরও বাড়ানো হোক।
এ দিন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) এবং বেঙ্গল স্টেট অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে গড়া কমিটিতে রয়েছেন চিকিৎসক শান্তনু সেন, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সৌরভ দত্ত, চিকিৎসক রাজু বিশ্বাস, চিকিৎসক দ্বৈপায়ন মজুমদার ও চিকিৎসক তীর্থঙ্কর দেবনাথ। তাঁদের মতে, দোকান থেকে খুচরো সিগারেট বিক্রি বন্ধেও জোর দিক সরকার। যাতে কেউ চাইলেও দোকানে গিয়ে একটি, দু’টি বা তিনটি সিগারেট কিনতে না পারেন। কিনতে হলে গোটা প্যাকেট কেনা বাধ্যতামূলক করা হোক। দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছাত্ররা খুচরো সিগারেট কেনে। কারণ, সঙ্গে প্যাকেট রাখার ঝুঁকি নিতে চায় না তারা। তাতে অভিভাবকদের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে খুচরো সিগারেট বিক্রি বন্ধ অপ্রাপ্তবয়স্কদের তামাক সেবনেও রাশ টানবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কমিটির সদস্য শান্তনুবাবুর কথায়, ‘‘যাঁরা এখন তামাকে আসক্ত, তাঁদের নেশামুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নতুন ভাবে যাতে কেউ তামাকে আসক্ত না হন, তা নিশ্চিত করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের দোকান স্কুলপড়ুয়াদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।’’ রাজ্য সরকার অসুস্থ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছে, ন্যায্যমূল্যে ওষুধ দিচ্ছে। কিন্তু মানুষের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা যদি কমানো যায়, তার চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।