রাস্তায় থামিয়ে শুরু স্কুলগাড়ির নথি পরীক্ষা

সরকারি সূত্রের খবর, ২০১৬ সালেও একই নির্দেশ দিয়েছিল পরিবহণ দফতর।পুলিশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:০৩
Share:

স্কুলগাড়ির নথি পরীক্ষা করছেন পুলিশকর্মীরা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

শহরের স্কুলবাস এবং স্কুলগাড়ির অবস্থা সরেজমিন দেখতে পথে নামল পুলিশ এবং পরিবহণ দফতর। বুধবার সকাল থেকে রাস্তায় স্কুলগাড়ি এবং স্কুলবাস থামিয়ে গাড়ি এবং চালকের কাগজপত্র খতিয়ে দেখা শুরু হয়। কিছু গাড়ির ক্ষেত্রে বৈধ নথিপত্র মেলেনি। যে চালক ও গাড়ির বৈধ কাগজ নেই, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। সোমবার চিৎপুরে একটি স্কুলবাস দুর্ঘটনায় ১৪ জন পড়ুয়া-সহ মোট ২২ জন আহত হন। তার পরেই এই অভিযানের নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। স্কুলগাড়ি ও বাস নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদেরও সচেতন করার নির্দেশ দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, ২০১৬ সালেও একই নির্দেশ দিয়েছিল পরিবহণ দফতর।পুলিশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সাউথ পয়েন্টের পক্ষে কিশোর দামানি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের নিরাপত্তা সব চেয়ে আগে। পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ এমন অভিযান নিয়মিত ভাবে চালানোর দাবি করেছেন লা মার্টিনিয়ারের সচিব সুপ্রিয় ধর এবং গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাজ় স্কুল বয়েজ টাকি হাউসের সহকারী প্রধান শিক্ষক অমিতকুমার গঙ্গোপাধ্যায়। সুপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘চার-পাঁচ দিন অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিলে কিন্তু হবে না।’’

তবে আচমকা এই অভিযানের বিরোধিতাও করছেন অভিভাবকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কোনও গাড়ি বেআইনি ভাবে চললে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করতে পারে ঠিকই। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ওই গাড়িতে থাকা পড়ুয়ারা কোথায় যাবে? এ ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য, কোনও পড়ুয়াকে বিপদে ফেলা হবে না। কিন্তু বেআইনি ভাবে গাড়ি চালিয়ে যাতে বিপদ না ঘটে, তার জন্যই এই অভিযান। চিৎপুরের ঘটনায় দেখা গিয়েছে, ফিট সার্টিফিকেট ছাড়াই স্কুলবাসটি চলছিল। আহত চালক সোনু হালদার পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, বেপরোয়া গতি নয়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই তিনি বাসের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি।

Advertisement

অমিতবাবুর বক্তব্য, স্কুলবাস চালানোর অভিজ্ঞতা যেন চালকের থাকে, সেটাও দেখা উচিত। চিৎপুরের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের চালক আগে পণ্যবাহী গাড়ি চালাতেন বলে জানা গিয়েছে। স্কুলবাস চালানোর ক্ষেত্রে যে যে নিরাপত্তা-বিধি মেনে চলা প্রয়োজন তা তিনি জানতেন কি না, সেটাও জানা দরকার। তাই অভিযানে নেমে স্কুলগাড়ি ও স্কুলবাস চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ রয়েছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নিয়ে কর্মশালা হতে পারে বলেও পুলিশ সূত্রের খবর।

এ দিন চিৎপুরের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিকে পরীক্ষা করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। তদন্তকারীদের দাবি, বাসটির যান্ত্রিক ত্রুটির পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। কিন্তু ঘটনাস্থল ও বাসটিকে পরীক্ষা করে মনে করা হচ্ছে, দুর্ঘটনাস্থলে একটি বাঁক ছিল। চালক ওই রাস্তা সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত ছিলেন না এবং বাঁকের মুখে গতিও তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল।
পরিবহণ দফতরের খবর, বিভিন্ন স্কুলের কর্তৃপক্ষকে বলা হচ্ছে, পড়ুয়াদের যাতায়াতের স্কুলগাড়ি বা বাসের ফিট সার্টিফিকেট, বিমা সংক্রান্ত নথিপত্র যাতে ঠিক থাকে তা দেখতে হবে। চালক যাতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি না-চালান, সেটাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। যদিও অনেক স্কুলেরই বক্তব্য, তাদের নিজস্ব গাড়ি বা বাস নেই। বহু ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা নিজেরাই গাড়ি বা বাস ঠিক করে ছেলেমেয়েদের পাঠান। তাই তাঁদেরও সচেতন হওয়া জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন