জঙ্গি দমনে এ বার তৈরি চারপেয়ে ‘পুলিশ’

এত দিন মাদক, বিস্ফোরক বা অপরাধীর সন্ধান করত ওরা। এ বার কলকাতা পুলিশের জঙ্গি-দমন বাহিনীতেও যোগ দিতে চলেছে ছ’টি কুকুর।

Advertisement

সোমনাথ চক্রবর্তী ও শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৮
Share:

চলছে পুলিশ-কুকুরদের প্রশিক্ষণ। —নিজস্ব চিত্র।

ধীরে ধীরে, সতর্ক পায়ে এগোচ্ছে ওরা। ওদের শরীরে বাঁধা ক্যামেরা। তাতে ছবি উঠছে অবিরাম। সেই ছবি পৌঁছে যাচ্ছে পুলিশের কন্ট্রোল রুমে। আর ঘটনাস্থলে ওরা খুঁজে চলেছে সূত্র। যে সূত্রের হাত ধরে অপরাধীকে ধরতে নামবে পুলিশ। সিনেমা নয়, এমন দৃশ্য এ বার দেখা যাবে কলকাতাতেও।

Advertisement

এত দিন মাদক, বিস্ফোরক বা অপরাধীর সন্ধান করত ওরা। এ বার কলকাতা পুলিশের জঙ্গি-দমন বাহিনীতেও যোগ দিতে চলেছে ছ’টি কুকুর। লালবাজার সূত্রের খবর, গ্বালিয়রে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সম্প্রতি ফিরেছে ১২টি কুকুর। তার মধ্যে রয়েছে ছ’টি জার্মান শেফার্ড, যারা জঙ্গি-দমন অভিযানে বিশেষ ভাবে পটু। কারণ, তারা সকলে কম্যান্ডো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

মার্কিন সেনাই হোক বা এ দেশের ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড (এনএসজি), জঙ্গি-দমন অভিযানে সর্বত্রই কুকুরদের প্রয়োজন হয়। ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার অভিযানেও কুকুরদের কাজে লাগানো হয়েছিল। কম্যান্ডো বাহিনীর জন্য উপযুক্ত বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া প্রজাতির কুকুর কেনার সিদ্ধান্ত হলেও এখনও তা হাতে পায়নি কলকাতা পুলিশ। তাই জার্মান শেফার্ডদেরই ব্যবহার করা হচ্ছে। আগ্রাসী স্বভাবের এই কুকুরও এ কাজে যথেষ্ট সক্ষম বলে লালবাজারের দাবি। এক পুলিশকর্তার দাবি, ‘‘কুকুর হলেও জঙ্গি দমনে মানুষের চেয়ে এদের ভূমিকা কম নয়।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: বাঘ ধরতে এ বার শুয়োরের টোপ

কী ভাবে অভিযানে সামিল হবে এই কুকুর-কম্যান্ডোরা?

লালবাজার সূত্রের খবর, কোথাও জঙ্গি হানার ঘটনা ঘটলে গায়ে ক্যামেরা বেঁধে সেখানে ঢুকে যাবে কুকুরেরা। গন্ধ শুঁকে পথ দেখানোর পাশাপাশি তাদের পিঠে বাঁধা ক্যামেরায় ছবিও উঠবে। স্বয়ংক্রিয় ভাবে তা চলে আসবে কম্যান্ডোদের কাছে। ঝাঁপিয়ে প়ড়ে শত্রুকে ঘায়েল করতেও পিছপা হবে না এরা। গ্বালিয়র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আপাতত এ শহরের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে ওই ছ’টি কুকুর। আগামী সপ্তাহ থেকে পুলিশের কম্যান্ডোদের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করবে তারা। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘জঙ্গি দমন দলবদ্ধ অভিযান। তাতে মানুষে-মানুষে যেমন সমন্বয়ের প্রয়োজন প়়ড়ে, তেমনই মানুষ ও কুকুরের সমন্বয় ও বোঝাবুঝিও দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন।’’

এই ছ’টি কুকুরকে বাদ দিলে বাকি চারটি জার্মান শেফার্ড ও দু’টি ল্যাব্রাডর অবশ্য সাধারণ পুলিশি কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছে। লালবাজারের খবর, বর্তমানে তাদের কাছে ৩১টি কুকুর রয়েছে। ১৫টি ল্যাব্রাডর, ১২টি জার্মান শেফার্ড এবং একটি করে ডোবারম্যান, ককার স্প্যানিয়েল, রটওয়েলার এবং গোল্ডেন রিট্রিভার। নতুন ১২টি যোগ দিলে সেই সংখ্যাটি দাঁড়াবে ৪৩। যার মধ্যে ৩৭টি সাধারণ ও বাকি ছ’টি কম্যান্ডো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, তাদের এলাকা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ-কুকুরের প্রয়োজনও বে়ড়েছে। নবান্ন-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাড়ি এবং ভিআইপি চত্বরে নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও কুকুর ব্যবহার করা হয়। ফলে অনেক সময়েই কুকুরদের উপরে চাপ পড়ে। কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ায় চাপ কিছুটা হলেও কমবে। পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু নবান্নের নিরাপত্তার জন্য একটি বিশেষ ‘ডগ স্কোয়াড’ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার জন্য সাধারণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরদের কয়েকটিকে বেছে নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের ট্রেনিং স্কুলের ডগ স্কোয়াডে যান পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। সঙ্গে ছিলেন ডিসি (এসটিএফ) মুরলীধর শর্মা। পুলিশ সূত্রের খবর, বাহিনীর নতুন সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে যাতে এসটিএফ-এর সমন্বয় ঠিক থাকে, তা দেখতে বলেছেন তিনি। কী ধরনের কাজে ওই কুকুরদের ব্যবহার করা হবে, তা নিয়েও নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার। শীঘ্রই ওই কুকুরদের কাজে লাগানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন