আট বছর পার, ঘরে ফিরল ছেলে

এনআরএস থেকে অপহৃত হয় আট বছরের যাদব মণ্ডল। সে দিনই তার মা কল্পনা মণ্ডল মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এর ভিত্তিতে ওই অপহরণ-কাণ্ডে দুই অভিযুক্ত সুরিন্দর রায় ও তার ভাই সিকন্দর রায়কে গ্রেফতারও করে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৬:২০
Share:

মায়ের সঙ্গে যাদব। নিজস্ব চিত্র

আট বছর ধরে নিখোঁজ ছিল ছেলে। তার খোঁজ পেতে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে পুলিশ কমিশনারের অফিস, একাই দৌড়ে বেড়িয়েছেন মা। মায়ের সেই লড়াই সেলুলয়েডের গল্পকেও হার মানাবে। অবশেষে শনিবার সেই হারানো সন্তান ফিরল মায়ের ঘরে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ২০০৯-এর ২২ অক্টোবর এনআরএস থেকে অপহৃত হয় আট বছরের যাদব মণ্ডল। সে দিনই তার মা কল্পনা মণ্ডল মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এর ভিত্তিতে ওই অপহরণ-কাণ্ডে দুই অভিযুক্ত সুরিন্দর রায় ও তার ভাই সিকন্দর রায়কে গ্রেফতারও করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জয়নগরের বাসিন্দা কল্পনা ২০০৪ থেকে কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করছেন। তিলজলায় একটি ভাড়া বাড়িতে তিন সন্তানকে নিয়ে থাকতেন তিনি। স্বামী অসীম মণ্ডল থাকতেন গ্রামের বাড়িতেই। কলকাতায় সুরিন্দর রায় নামে এক ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় কল্পনার। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সুরিন্দরের বাড়ি বিহারের বৈশালীতে। সেখানে তার স্ত্রী থাকেন। কিন্তু তাঁদের কোনও সন্তান নেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: কাপড় ধরে টানতেই বেরিয়ে এল জেঠুর পা

পুলিশ জানায়, ‘অপূর্ণ’ সংসার ভরে তুলতেই ভাই সিকন্দরের সাহায্যে যাদবকে অপহরণ করে সুরিন্দর। কল্পনাদেবীর প্রথমেই তা সন্দেহ হয়। তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেন। কিন্তু ধরা পড়ার কিছু দিনের মধ্যে জামিন পেয়ে যায় তারা।

পুলিশ জানায়, সুরিন্দর জামিন পাওয়ার পরে কল্পনাদেবী তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কথাবার্তা শুনে নিশ্চিত হন, ছেলে রয়েছে সুরিন্দরের বাড়িতেই। নজর রাখতে থাকেন তার উপরে। পেয়েও যান প্রমাণ। এক দিন দেখেন, সুরিন্দরের ফোনে রয়েছে যাদবের ছবি। ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু অভিযোগ, উল্টে তাঁকে খুনের হুমকি দিতে থাকে সুরিন্দর। মাস কয়েক আগে সুরিন্দরের ফোনের ‘চিপ’ হাতিয়ে কল্পনাদেবী সোজা হাজির হন থানায়। পুলিশ দেখে, তাতে সুরিন্দর ও যাদবের একাধিক ছবি রয়েছে। এর সূত্র ধরেই গত ৮ আগস্ট অপহৃত কিশোর যাদবকে খুঁজতে বিহারে সুরিন্দরের বাড়িতে যায় মুচিপাড়া থানার পুলিশ।

এ দিন আঁচল দিয়ে যাদবের ঘাম মোছাতে মোছাতে নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছিলেন মা কল্পনা। বলেন, ‘‘পুলিশের গাফিলতিতেই ছেলেকে ফিরে পেতে এত দেরি হল। বারবার বলেছি, ছেলে সুরিন্দরের বিহারের বাড়িতেই রয়েছে।’’ কিন্তু অসহায় মায়ের আর্জিতে গুরুত্ব দেয়নি কেউ। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, পুলিশ কমিশনার ও ডিসি (সেন্ট্রাল)-কে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন তিনি। উপর মহলের চাপে ফের তদন্ত শুরু হয় বলে অভিযোগ কল্পনার।

কিন্তু এত বছর কী ভাবে কাটাল সুরিন্দর? পুলিশ জানিয়েছে, ২০০৯ সালে যাদবকে অপহরণ করে নেপালে নিজের আত্মীয়ের বাড়িতে তিন বছর রেখেছিল সুরিন্দর। শেষ পাঁচ বছর যাদব ছিল বিহারেই। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সেখানে একটি হিন্দি মাধ্যম বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ছিল যাদব।

তদন্তকারীরা জানান, নিজেদের পরিবারে পুত্র সন্তান নেই, সেই জন্যই যাদবকে অপহরণ করে দুই ভাই। এর পরিকল্পনা করেই দীর্ঘদিন ধরে কল্পনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছিল সুরিন্দর। এ দিন মুচিপাড়া থানার সামনে ছেলেকে পাশে নিয়ে কল্পনাদেবী বলছিলেন, ‘‘আমার ছেলেকে অপহরণ করতেই সুরিন্দর আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আমি সুরিন্দরের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’’

মুচিপাড়া থানার সামনে ছেলেকে আদর করতে করতে কল্পনাদেবী বারবার বলছিলেন, ‘‘ও যত দূর পড়তে চায় পড়াব। আট বছর আগে তিলজলার স্কুলে তখন থ্রিতে পড়ত। এক দিনও স্কুল কামাই করত না।’’ এ দিকে আট বছর বাইরে থেকে বাংলা বলতেই ভুলে গিয়েছে যাদব। হিন্দিতে বলল, ‘‘আট বছর ধরে বাবা-মাকে দেখতে পাইনি। আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুরিন্দরকাকুর কঠোর শাস্তি চাইছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement