আগুন নেভাতে ব্যস্ত এক দমকলকর্মী। সোমবার, দমদমের সুভাষনগরে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বয়সজনিত কারণে হাঁটাচলা করতে পারতেন না তিনি। সোমবার সকালে দমদমের সুভাষনগরের বাড়িতে আগুন লাগলেও তাই বেরোতে পারেননি তিনি। বৌমার চোখের সামনে বিছানার উপরে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল ছবি দে (৮২) নামে সেই বৃদ্ধার। শাশুড়িকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডে জখম বৌমা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দমদমের সুভাষনগরের নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় রোডের বাসিন্দা ছবিদেবীর ছেলে ভোলা দে বাড়িতে খাবার ডেলিভারির ব্যবসা করেন। এ দিন একটি বড় কাজের বরাত থাকায় সকালে বাজারে গিয়েছিলেন ভোলা। স্ত্রী ববিতা গ্যাস স্টোভ জ্বালিয়ে রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন এবং ছবিদেবী বিছানার উপরে বসে আনাজ কাটছিলেন। দমকল সূত্রের খবর, সকাল ৯টা নাগাদ আচমকা স্টোভের রেগুলেটর থেকে গ্যাস লিক করে আগুন ধরে যায়। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা বাড়ির একতলার যে ঘরে আগুন লেগেছে, সেখানে রান্নার পাশাপাশি বৃদ্ধা থাকতেন। ঘরের মধ্যে ফ্রিজ, চালের বস্তা, আলু, টোম্যাটো-সহ রান্নার নানা উপকরণ যেমন রয়েছে তেমনই আছে টেলিভিশন, আলমারি-সহ আসবাবপত্র। স্থানীয় সূত্রের খবর, মেঝেতে স্টোভ জালিয়ে রান্নার কাজ চলছিল। ফলে আগুন লাগলে তা বিছানায় ধরতেও বেশি সময় লাগেনি।
এই পরিস্থিতিতে রান্নাঘর লাগোয়া শৌচাগার থেকে জল এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন বছর বিয়াল্লিশের ববিতা। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। মুহূর্তের মধ্যে সারা ঘর আগুনের গ্রাসে চলে গেলে সাহায্যের জন্য প্রতিবেশীদের ডাকেন পুত্রবধূ। প্রতিবেশী অভিষেক ঘোষ বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে বেরিয়ে এসে দেখি প্রচণ্ড ধোঁয়া। ববিতা কাকিমা শুধু বলছিলেন, আগুন লেগেছে। আমার মাকে বাঁচাও।’’ এর পরে ভাই অভির্ময় ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে উদ্ধারের কাজে নেমে পড়েন তিনি। ববিতার এগারো বছরের ছেলে নীল তখন ছিল দোতলার ঘরে। ওই দুই ভাই দ্রুত তাঁদের নীচে নামিয়ে আনেন। এরই মধ্যে দমকলে খবর দেওয়া হলে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দু’টি ইঞ্জিন। প্রায় আধ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন দমকলকর্মীরা।
পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার পরে ঘরের ভিতরে ঢুকে দমকলকর্মীরা দেখেন, বিছানার উপরে ছবিদেবীর নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। দু’টি হাত এমনভাবে মুখের কাছে আড়াল করা, যেন শেষ মূহূর্তে আগুনের তাপ থেকে হাতের ঢাল তৈরি করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন বৃদ্ধা। পুত্রবধূ ববিতার মুখ এবং হাতের ডান দিকের অংশ আগুনে ঝলসে গিয়েছে।
দমকলের দাবি, সময়মতো আগুন নিয়ন্ত্রণে না এলে তা পুরো পাড়াকে গ্রাস করে ফেলত। ঘিঞ্জি এলাকায় প্রতিটি বাড়ি একেবারে গায়ে গায়ে। তার উপরে সঙ্কীর্ণ রাস্তায় বাইক রাখার পর্যন্ত জায়গা নেই। তড়িঘড়ি গ্যাস সিলিন্ডার বাইরে বার করে না আনলে বিপদের মাত্রা কী আকার ধারণ করত, তা ভেবে শিউরে উঠছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ধনঞ্জয় মজুমদার বলেন, ‘‘খুব মর্মান্তিক ঘটনা। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বৃদ্ধাকে বাঁচানো যায়নি। পাড়ার লোকদের কাছে শুনলাম, বৌমা ওঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি হাঁটাচলা করতে না পারায় শেষরক্ষা হল না।’’