এক দিকে বাড়ির লোকের তৎপরতা। অন্য দিকে, ঠিক সময়ে চিকিৎসকের উদ্যোগ। এই দুইয়ের সমন্বয়ে বেঁচে গেল পয়ষট্টি বছরের প্রৌঢ়ের বাঁ হাতের তিনটি আঙুল। যেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব দেখিয়ে সরকারি হাসপাতালও রোগীকে রেফার করেই কাজ সারে। সেখানে ছুটির সকালে উত্তর শহরতলির মাঝারি মানের এক বেসরকারি হাসপাতালের এই ভূমিকা মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবার উপরে ভরসা জোগায়।
দিনটা ছিল লক্ষ্মী পুজোর পর দিন, রবিবার। সকাল সকাল আড়িয়াদহের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী তন্ময় ঘোষ বাড়ির ছাদের বাগান পরিচর্যা করছিলেন। বাঁশের কঞ্চি মাপ করে কাটতে বিদ্যুত চালিত ছুরি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ডান হাত ফস্কে চলন্ত ছুরি বাঁ হাতে পড়ে। তাতেই ঘটে বিপত্তি। মধ্যমা, তর্জনী, অনামিকা কেটে তালুর চামড়ার সঙ্গে ঝুলতে থাকে। কোনও ক্রমে নেমে আসেন তন্ময়বাবু। রক্তে ভেসে যেতে থাকে সিঁড়ি, ঘর।
তন্ময়বাবুর বড় ছেলে রাজীববাবু বলেন, ‘‘তৎক্ষণাৎ একটা মোটা কাপড়ে বাবার হাতটা জড়িয়ে দেয় ছোট ভাই। যাতে আঙুলগুলো ঝুলে না থাকে। বাবাকে নিয়ে ছুটে যাই স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে।’’ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জরুরি বিভাগ থেকে তাঁদের জানানো হয়, বাঁ হাতের তিনটি আঙুলেরই হা়ড় ও শিরা কেটে গিয়েছে। তাই সাধারণ সেলাইয়ে কাজ হবে না। অথচ ছুটির দিন হওয়ায় হাসপাতালে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন না। খবর দেওয়া হয় অস্থি বিশেষজ্ঞ শুভম দাসকে। তিনি পরীক্ষা করে জানান, হাড় কেটে কয়েক টুকরো হয়েছে। কেটে গিয়েছে শিরা, ধমনী ও টেন্ডনও। অস্ত্রোপচার জরুরি।
শুভমবাবু জানান, প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে ক্রমশ নেতিয়ে পড়ছিলেন তন্ময়বাবু। তাঁর হৃদ্যন্ত্রের ৯০ শতাংশ ব্লক ও কিডনির সমস্যা থাকায় অতিরিক্ত রক্তপাতে হৃদ্রোগের আশঙ্কাও ছিল। রক্তে মাখামাখি হয়ে থাকায় শিরা, ধমনীর কাটা জায়গা খুঁজে সেলাই করাটা ছিল যথেষ্ট ঝুঁকির। অন্য চিকিৎসকদের মতে, ঠিক সময়ে শিরা কিংবা ধমনী সেলাই না করলে পরে আর জুড়তে চায় না। আবার দীর্ঘ ক্ষণ রক্ত সঞ্চালন না হলে সেগুলি শুকিয়ে যায়। সেলাইয়েও লাভ হয় না।’’
হাসপাতাল সূত্রে খবর, তন্ময়বাবুর আঙুলগুলিকে দুই লিটার সাধারণ স্যালাইন জলে ভাল করে ধুয়ে নেওয়া হয়। রক্ত বন্ধ করতে কেটে যাওয়া শিরা ও ধমনীগুলোকে সেলাই করে জুড়ে নেওয়া হয়। ছোট ছোট রড এবং ক্লিপ দিয়ে তিনটে আঙুলের টুকরো হওয়া হাড়গুলি জুড়তে হয়েছে। পরে কেটে যাওয়া ছ’টি টেন্ডন জোড়ানোর পরে আবার স্যালাইনে ধুয়ে চামড়া সেলাই করা হয়েছে। হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার পার্থপ্রতীম শেঠ বলেন, ‘‘তন্ময়বাবুকে জরুরি বিভাগে আনার পরেই অস্থি বিশেষজ্ঞকে খবর দিয়েছিলাম। তিনি দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। সকলের সমন্বয়ে এই সাফল্য।’’
চিকিৎসকদের মতে, এই অস্ত্রোপচার বিরল নয় ঠিকই। তবে উপযুক্ত সময়ে ঠিক পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা উদাহরণ। সে দিক দিয়ে শহরতলির মাঝারি মানের একটি বেসরকারি হাসপাতালের এই প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, এর পরেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। তন্ময়বাবুর পরিবার সূত্রে খবর, এখনও তিনি সুস্থ আছেন।